সাত বছর ধরে অসহায়দের সাহ্রি খাওয়াচ্ছেন মাহাবুব
Published: 17th, March 2025 GMT
দীর্ঘ সাত বছর ধরে অসহায়দের মধ্যে মাসব্যাপী সাহ্রির খাবার বিতরণ করছেন পাবনার তহুরা-আজিজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা দেওয়ান মাহাবুব। মা-বাবার নামে শহরের কালাচাঁদপাড়া মহল্লায় পৈতৃক জায়গায় ফাউন্ডেশনটি গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখানে বছরজুড়ে নিম্নবিত্তদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়।
তহুরা-আজিজ ফাউন্ডেশনের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১১ সালে। ২০১৯ সালে করোনা মহামারির সময়ে সাহ্রির খাবার বিতরণ শুরু করেন তারা। প্রথম বছর প্রতিদিন ৩৫ প্যাকেট খাবার বিতরণ দিয়ে শুরু করে এখন ৩০০ মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া হচ্ছে। তাদের এ উদ্যোগে সরকারি-বেসরকারি আর্থিক সহযোগিতা নেই বললেই চলে। পরিবারসহ বন্ধু-বান্ধবের সহায়তা ও নিজেদের অর্থে তারা এই মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন।
এই খাবারের সবচেয়ে বড় সুফলভোগী জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাবনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় রোগী ও তাদের স্বজন। এ ছাড়া পৌর এলাকার মা-শিশু হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ আটটি স্থানে অপেক্ষারত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় এসব খাবার। দিনমজুর থেকে শুরু করে শ্রমিক, ভিক্ষুক, ভ্যান-রিকশা-অটোচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ খাবার নেন।
নিজ বাড়ির আঙিনায় ইটের চুলায় রান্না হয় সাহ্রির খাবার। মাহাবুব নিজেই তাঁর সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে সামলান রান্নার সব আয়োজন। এর পর চলে প্যাকেট করে অসহায়দের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার পালা। রমজান মাসে এভাবেই কেটে যায় তাদের রাত। বর্তমানে প্রতিদিন খাবার তৈরিতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাহাবুব। বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও নিজ পরিবারের সদস্যদের দেওয়া অর্থ এবং সমাজের কিছু বিত্তবান মানুষের জাকাত-ফিতরা থেকে হচ্ছে এই খরচের জোগান।
সাহ্রি বিতরণ নিয়ে সংগঠনের সদস্যরা জানান, মানবসেবার এই কাজ বিনা পারিশ্রমিকেই করছেন তারা। কাজের সঙ্গে জড়িতরা এ কাজে আত্মতৃপ্তির কথা জানান।
দেওয়ান মাহাবুব সমকালকে বলেন, পৈতৃক জায়গা আমরা ফাউন্ডেশনের নামে দান করেছি। এ কাজে, বিশেষ করে আমার বাবার সহযোগিতা অনেক। অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার ইচ্ছা থেকেই কাজগুলো করছি। যতদিন বেঁচে থাকব, সুস্থ থাকব, মানবসেবার কাজ করে যাব।
তবে ফাউন্ডেশনের জায়গায় যদি আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হতো, তাহলে শুধু রমজান নয়, পুরো বছর দরিদ্র-অসহায় মানুষকে সেবা দেওয়া যেত। এ কাজে সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা এগিয়ে এলে সমাজের অসহায় মানুষের সেবা পাওয়া আরও সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে বাড়িতে ঢুকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করল যুবককে
যশোরের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ম্যানসেলের প্রধান সহযোগী মীর সামির সাকিব সাদী (৩৫) দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে। সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে শহরের মুড়িব সড়ক জয়ন্তী সোসাইটির পেছনে বাড়িতে ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে। নিহত সাদী ওই এলাকার মীর শওকত আলীর ছেলে। এ ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে।
নিহতের চাচাতো ভাই রাকিব জানান, রাত পৌনে ১২টার দিকে তিনি ও সাদী বাড়ি ফেরেন। বাড়ির উঠানে মোটরসাইকেল তোলার সময় পেছন থেকে সাদীকে চাকু দিয়ে আঘাত করা হয়। এরপর তাকে গুলি করে। এক রাউন্ড গুলির পর গুলি বের হচ্ছিলো না। এ সময় তিনি হামলাকারী সুমন, মেহেদীসহ তাদের সহযোগীদের লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করলে তারা আরও ৫-৬ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যায়। তাদের ছোড়া দু’টি গুলি সাদীর গলা ও বুকে লাগে।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ মরদেহ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। তিনি দাবি করেন, সাদী রেল বাজারের ইজারাদার। হামলাকারীরা বাজার এলাকায় চাঁদাবাজি করত। তাদের প্রশয় না দেওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী জানান, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জড়িতদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান শুরু করেছে। হত্যার কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত করছে। তিনি জানান, নিহত সাদী ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে যাদের নাম আসছে উভয়পক্ষই সন্ত্রাসী। সকলের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, সাদী যশোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যানসেলের প্রধান সহযোগী ও ম্যানেজার। সাদীকে যারা হত্যা করেছে তারাও ম্যানসেলের সহযোগী। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ও ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ম্যানসেলসহ তার পক্ষের লোকজন গা-ঢাকা দেয়। সম্প্রতি সাদীসহ তাদের কেউ কেউ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সাদী খুন হয়।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর যশোর শহরের সিভিল কোর্ট মোড়ে জেলা ছাত্রদলের তৎকালীন সহসভাপতি কবির হোসেন পলাশকে খুন করে মোটরসাইকেলযোগে পালানোর সময় শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনার আহত হন সাদী। দুর্ঘটনায় তার এক পা কেটে ফেলতে হয়। এক পা হারিয়েও ম্যানসেলের প্রধান সহযোগী পরিচয়ে সাদী এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে আসছিল।