Samakal:
2025-03-17@23:31:33 GMT

আবুল মনসুর আহমদকে কেন মনে রাখব

Published: 17th, March 2025 GMT

আবুল মনসুর আহমদকে কেন মনে রাখব

আবুল মনসুর আহমদকে কেন মনে রাখব? আমার জানা-বোঝায় তাঁর রচনার যে দুটি গুণ আমাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে, সে হচ্ছে প্রবলতা ও রাজনীতি-সচেতনতা। গুণ বলা যায়; বৈশিষ্ট্যও বলা যায়। বৈশিষ্ট্যই গুণ হয়ে উঠেছে। লেখক সে সময়ে আরও ছিলেন, প্রবলতাও ছিল, তবে অনেকের মধ্যে নয়। কারও কারও রাজনীতি-সচেতনতাও ছিল। কিন্তু সচেতনতাকে এমনভাবে সব সময় সজাগ রাখা, কখনও হারিয়ে না ফেলা আবুল মনসুর আহমদের মধ্যে যেমন দেখি, তেমন দেখি না অন্য কারও মধ্যে। এর একটা কারণ, তিনি জড়িত ছিলেন প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে।

মুসলিম মধ্যবিত্ত যখন বিকশিত হচ্ছিল, তখন সেই বিকাশের প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল যে একটা প্রবলতা, তা-ই প্রজ্বলিত হয়েছে এই লেখকের রচনায়। তাঁর চিন্তা-চেতনায়, আবেগে ও ভাবে। মৃত্যুক্ষুধা কাজী নজরুল ইসলামের উপন্যাসের নাম। সেখানে জীবন আছে, কিন্তু সেই জীবনের ওপর বারবার লম্বা করে ছায়া পড়েছে মৃত্যুর। নজরুল ইসলামের বন্ধু আবুল মনসুরের উপন্যাসের নাম জীবন-ক্ষুধা। এখানেও মৃত্যুর ছায়া আছে, কিন্তু আবুল মনসুর দেখিয়েছেন জীবনের যে তেজস্বিতা, তা কেমন করে সবকিছুকে ছাপিয়ে উঠতে চায়। উপন্যাসের নায়ক হালিম সামন্ত পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসে ক্রমান্বয়ে বুর্জোয়া পরিবেশের প্রতিকূলতাকে ঠেলে দিচ্ছে দু’হাতে। এই যাত্রার মধ্যে একটা শক্তি রয়েছে। আবুল মনসুর আহমদের সব রচনায় এই শক্তিটাকে দেখেছি।

আবুল মনসুর আহমদ যা-ই লিখুন না কেন, রাজনৈতিক প্রবন্ধ বা ব্যঙ্গ রচনা কিংবা উপন্যাস– সর্বত্রই দেখি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে কথা বলছেন। ফুড কনফারেন্স ও আয়নার লেখক হিসেবে একদা তিনি অনায়াসে সাড়া জাগিয়েছিলেন। সেই যে ব্যঙ্গ, তার মধ্যে স্বরটা ছিল চড়া, ছবিগুলো ছিল ভয়ংকর। অত্যন্ত সহজে বলা যাবে এ কথা যে, অভাব ছিল সূক্ষ্মতার। আসলে সূক্ষ্মতা তাঁর পরিবেশেই ছিল না, সমাজকে তিনি উচ্চকিত করেছেন। বীভৎস ও নিকুণ্ঠ সমালোচনায় সে-সমাজের কিছুই আসে যায় না। আজকের দিনেও দেখি, উৎকৃষ্ট ব্যঙ্গ রচনা লেখা হচ্ছে না। অথচ বলা হয়, ব্যঙ্গের উপাদান যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে আমাদের জীবনে। এই ছড়িয়ে থাকার কথাটা সত্যও বটে, মিথ্যাও বটে। সমাজে অসংগতি আছে। কিন্তু সে অসংগতি এমনই স্থূল যে, তাকে নিয়ে হাসাহাসি করাটাও কঠিন কাজ। আবুল মনসুর করেছেন সেই কঠিন কাজটা। তাঁর সাহস ছিল। অসংগতির স্বরকে ছাপিয়ে ওঠার স্বর ছিল আয়ত্তে। তিনি হাসির মধ্য দিয়ে ধমকে দিয়েছেন ভয়ংকরকে।
এই প্রবলতা তাঁর আত্মজীবনীতেও দেখি। আত্মজীবনী তাঁর দুটি। প্রথমে পাওয়া গেছে আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, তার পরে এলো আত্মকথা। একটিতে রাজনীতির ইতিহাস, অন্যটিতে ব্যক্তির ইতিহাস। কিন্তু দুই গ্রন্থ এক হয়ে এক জায়গায় এসে গেছে, সে তার আত্মনির্ভরতায়। সেই যে প্রবলতার কথা বলেছিলাম, সে আছে দুটি বইতেই। রাজনীতি সত্য এবং আমিও সত্য। বিশেষ করে তিনি কোনো অজ্ঞাতকুলশীল বলে পরিচয় দেননি নিজের, যেমন নীরদ চৌধুরী দিয়েছিলেন নিজেকে তাঁর শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে। উপস্থিত করতে চাননি, যা দেখি কামরুদ্দিন আহমদের আত্মজীবনীতে, যদিচ শ্রেণিপ্রতিনিধিত্ব আবুল মনসুরের রচনাতে অবশ্যই রয়েছে। 

তাঁর কিছু কিছু ধারণা অবশ্যই বিতর্কমূলক। বিশেষ করে ভাষা ও  সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমার নিজের নৈকট্য তো নেই-ই; হিসাব করলে দেখব কোথাও কোথাও ব্যবধান আছে। আমার মতো অনেকেই বলেন এই একই কথা। কিন্তু সর্বদাই দেখা গেছে, নিজের মত প্রচারে তিনি কোনো কার্পণ্য করেননি এবং বলতে গেলে একাই ছিলেন সেখানে তিনি। পরোয়া করেননি কেউ জানে কি জানে না। ভারী তৎসম শব্দের সঙ্গে একদিকে খাঁটি দেশি ও অন্যদিকে একেবারে বিদেশি শব্দ যেমন অনায়াসে মিলিয়ে দিয়েছেন, তাতে বোঝা যায়, এই মানুষটির মনের ভেতর আত্মসচেতনতা ছিল না। মধ্যবিত্ত শ্রেণির সমালোচকেরা অন্তত এই বিষয়ে মিথ্যে বলেননি যে, আত্মসচেতনতা মধ্যবিত্তের একটি অনিরামেয় ব্যাধি। আবুল মনসুরের এই ব্যাধি ছিল না।
কিন্তু আমরা খুব ভুল করব যদি আবুল মনসুর আহমদকে বুঝতে চাই তাঁর রাজনীতিকে বাদ দিয়ে। রাজনীতিতে সবসময়ই তিনি জনসাধারণের সঙ্গেই ছিলেন। যতটা থাকা সম্ভব তাঁর বিশেষ অবস্থানের মধ্য থেকে। পেশায় রাজনীতিবিদ নন, নেশায় রাজনীতিবিদ। রাজনীতি কখনও আসেনি তাঁর কাছে একটি বিশেষ পেশা হিসেবে, কিংবা অনেকের কাছে যেমন এসেছে তেমনি একটি সুবিধাজনক ব্যবসা হিসেবে। তিনি মন্ত্রী হয়েছেন, কিন্তু তাঁর পরিচয় মন্ত্রিত্ব দিয়ে নয়।

রাজনীতি যে সমস্ত কিছুর নিয়ামক– এই চেতনাটি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং সদা সজাগভাবে উপস্থিত ছিল তাঁর মধ্যে। তাই তো দেখি উপন্যাস লিখছেন যখন তখনও ভুলছেন না রাজনীতিকে এবং তাঁর নায়ক হালিম তার মতোই প্রজার স্বার্থ, কৃষকের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল সামনে। জনতার শত্রু কে, কেই বা মিত্র– সেটা চিনতে ভুল হয়নি আবুল মনসুর আহমদের। কখনও কখনও ব্যক্তিগত স্বার্থকে জনতার স্বার্থের ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে পারেননি তিনি, অথচ একই সঙ্গে বলতেই হবে, জনতার স্বার্থ নিয়ে অকারণে কোনো ভাবালুতা নেই তাঁর লেখায়। রাজনীতিকে যারা ব্যবসা মনে করেন, সেই রাজনীতিবিদদের লজ্জা দিয়েছে তাঁর জীবন, যদি তাদের লজ্জা পাওয়ার ক্ষমতা থাকে। সাহিত্যকে যারা রাজনীতি-নিরপেক্ষ বলে মনে করেন, তাদের সে ধারণার প্রতি প্রবল প্রতিবাদ তাঁর রচনাবলি। তাঁর প্রতিভা বিরল মাত্রার, বিশেষ করে প্রবলতা ও রাজনীতি-সচেতনতার এই সাহিত্যিক সমন্বয়ের কারণেই।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: ইমেরিটাস অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক, গবেষক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স মরণ র জন ত ক উপন য স আহমদ র র রচন

এছাড়াও পড়ুন:

ভয় পেলে দেশ চালাতে পারবেন না, প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে অলি আহমদ

শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব কর্মকর্তা কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমদ। তিনি বলেছেন, অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বর্তমানে আগের চেয়েও বেশি দুর্নীতি করছেন, তাঁদের গণধোলাই দিয়ে ঠিক করতে হবে।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের পটিয়ায় দলের এক ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। পটিয়ার এ এস রাহাত আলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এলডিপির পটিয়া উপজেলা ও পৌরসভা শাখা।

অনুষ্ঠানে অলি আহমদ বলেন, ‘এই সরকার যেদিন শপথ গ্রহণ করবে, সেদিন বলেছিলাম, ১৮-এর নির্বাচনে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা, যেসব ইউএনও, যেসব ডিসি, যেসব এসপি কর্তব্যরত ছিলেন, এ দেশের মানুষের সঙ্গে বেইমানি করেছে, মুনাফেকি করেছে, তাদের ডিসমিস করতে হবে। এখনো পর্যন্ত কিন্তু ড. ইউনূস সাহেব সেটি করতে পারেননি। সাহসের অভাব, ভয় পায়; ভয় পেলে দেশ চলবে না, দেশ চালাতে পারবেন না, সাহসের সঙ্গে কাজ করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে অলি আহমদ বলেন, ‘যে কদিন বেঁচে থাকেন, একজন সিংহের মতো বেঁচে থাকেন। দেশকে বাঁচান, দেশকে রক্ষা করেন। বেইমান যারা শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করেছে, তাদের কাছ থেকেও আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে।’

সরকারি কর্মকর্তাদের প্রসঙ্গ টেনে অলি আহমদ বলেন, ‘এখন অনেক কর্মকর্তা আছে, যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, আগের চেয়েও বেশি দুর্নীতি করছে। তাদের পিটুনি দিতে হবে। জনগণ একত্র হয়ে তাদের ধোলাই দিতে হবে। ইউনূস সাহেব যখন পারছেন না, গণধোলাই দিয়ে এদের ঠিক করতে হবে। হাড্ডি-মাংস-নলা ভাঙচুর করতে হবে। এ সমাজকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

উপজেলা এলডিপির সভাপতি মুহাম্মদ মনছুর আলমের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন এলডিপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি এম এয়াকুব আলী। আবদুল কুদ্দুস ও আইযুব আলীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, চন্দনাইশ উপজেলার সভাপতি মোতাহের মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আকতারুল আলম, পৌরসভার সভাপতি আইনুল কবির, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আহমদ নবী, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এম এ জাফর প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কী করে বুঝবেন হাড়ে ইনফেকশন
  • শঙ্খচিলের বাড়ি কই
  • ঢাবিতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ১২৮ জন বহিষ্কার 
  • ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত বেড়ে ৫৩
  • মিফতাহ সিদ্দিকীর ইফতার মাহফিলে সিলেটে সুধীজনদের মিলনমেলা
  • এবার মুক্তাদীর-আরিফুল–সমর্থিত নেতা-কর্মীরা এক কাতারে
  • ভয় পেলে দেশ চালাতে পারবেন না, প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে অলি আহমদ
  • ঈদের ইত্যাদিতে এবারও বিদেশিদের জমকালো উপস্থিতি
  • ‘হতাশা তাড়িয়ে নতুন গতির সঞ্চার’