প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত ই-ফাইলিং কার্যকর হোক
Published: 17th, March 2025 GMT
ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে দেশের পত্র-পত্রিকায় একটি খবর বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সরকার সব প্রতিষ্ঠানে ই-ফাইলিং চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এতে আমরা জানতে পারি, সরকারি সব অফিসে ই-ফাইলিং করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সরকারের কাজের সমন্বয় সহজ ও দ্রুত করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব। ই-ফাইলিং হলে দুর্নীতিও কমে আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন এস্তোনিয়ায় কীভাবে দুর্নীতি কমেছে, সেটি বাংলাদেশের সঙ্গে শেয়ার করতে চেয়েছে। বাংলাদেশও বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে।’ এর মাধ্যমে সহজে ফাইল মনিটর ও ট্র্যাক করা যাবে বলেও তিনি জানান।
সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে আগামী দিনে তার ফলাফল সবার কাছে আরও স্পষ্ট হবে। এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের এক অনুষ্ঠানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ডিজিটালাইজেশনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এই বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলে সব সরকারি কর্মকর্তার জন্য ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক এবং বড় করপোরেশনগুলোকে তাদের পুরো সংস্থায় ই-রিটার্ন গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা হয়। ফলে সরকারি কর্মকর্তারা এবার ই-রিটার্নের মাধ্যমে কর বিবরণী দাখিলের সুবিধা পেয়েছেন। আইসিটির কল্যাণে জনগণের ঘরে বসে সেবা পাওয়ার সুযোগকে অবারিত ও ভোগান্তি কমাতে সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিশ্চয় প্রশংসার দাবিদার।
সরকারের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও ডিজিটালাইজেশন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বা অনিয়মের বিরুদ্ধে স্বচ্ছতার বড় হাতিয়ার, তা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের জরিপেও উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ মনে করে, সরকারি সেবাদান প্রক্রিয়া জনবান্ধব নয় এবং ৮৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ জনপ্রশাসনে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করে। শুধু তাই নয়, ৪১ দশমিক ৮৮ শতাংশ মানুষ সিস্টেমেটিক পরিবর্তনের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছে। এতে ২৩ দশমিক ২০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ডিজিটালাইজেশনে জোর দিয়েছে। সরকার শুধু পরিকল্পনা গ্রহণ করে সংস্কার কমিশনের সুপারিশই প্রদান করেনি; সেটি আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়নে স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। সুতরাং আমরা আশা করতেই পারি, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ইতোমধ্যে গঠিত ঐকমত্য কমিশন নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই আইসিটি সার্ভিস বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক নবযুগের সূচনা করবে।
সব দপ্তরে ই-ফাইলিং চালু করার সঙ্গে যে প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি জড়িত, সেসব বিষয়ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা জরুরি। কেননা, একটা দপ্তরকে ই-ফাইলিংয়ে অন্তর্ভুক্ত করার সঙ্গে ওই দপ্তরের ইন্টারনেট পর্যাপ্ততা, কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক লজিস্টিকস, দপ্তরের জন্য বরাদ্দকৃত সার্ভার স্পেস, স্টোরেজ, ব্যান্ডউইথ ইত্যাদি বিষয় যেমন জড়িত; তেমনি ই-ফাইলিং-পরবর্তী সিস্টেম অপারেশন, দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রশিক্ষিত জনবলও গুরুত্বপূর্ণ।
বিগত সরকারের সময় ডিজিটালাইজেশন হয়েছে বটে, তা বেশির ভাগই কাগজ-কলম কিংবা পরিসংখ্যানে। ফলে প্রতিটি প্রকল্প শ্বেতহস্তী হয়ে গেছে, যা আমরা পত্র-পত্রিকার বরাতে দেখছি। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে পাওয়া দেশকে বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত নতুন বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে এখন কাজগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করাই আমাদের করণীয়। তাই সমতাভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আইসিটির ব্যবহারকে সর্বত্র সুসংহত করতে আইসিটির বিস্তৃত ব্যবহার জরুরি। দুর্নীতির অবসান, স্বজনপ্রীতি রোধ ও সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারের আইসিটিভিত্তিক সেবা দেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাষ্ট্র মেরামতের কাঠামোগত সংস্কারের অংশ হিসেবে এবং জনগণের আইসিটিভিত্তিক সেবা পাওয়ার অধিকার সমুন্নত করতে আইসিটি সার্ভিসের দ্রুত বাস্তবায়ন সময়ের দাবি। বিভিন্ন দপ্তরে রিসোর্স অপটিমাইজেশন, আইসিটি ডিভিশনকে শক্তিশালী করা, সরকারি আইসিটি সেক্টরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, সর্বোপরি জনগণের ভোগান্তিমুক্ত আইসিটিভিত্তিক নাগরিক সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে বলে আশা করছি। প্রধান উপদেষ্টার নির্বাহী আদেশের পর বাকি প্রশাসনিক কাজ হয়তো দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইন মিনিস্ট্রি রুটিনওয়ার্ক হিসেবেই সম্পন্ন করবে। আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, আইসিটির কোনো বাউন্ডারি নেই। নেই কোনো বর্ডার। ফলে আইসিটির সীমান্ত শত্রুরও অভাব নেই। যাই হোক, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, এনআইডি, ই-জিপি, ই-রিটার্ন, ই-পাসপোর্ট, ই-টিআইএন, ইএফটির মতো নাগরিককেন্দ্রিক সেবা যেমন নির্বিঘ্ন হবে, তেমনি ভার্চুয়াল জগৎ সুরক্ষিত করার মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাইবার থ্রেট থেকে প্রিয় দেশমাতৃকা নিরাপদ থাকবে।
মো.
mone15_cse@yahoo.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ গ রহণ সরক র র আইস ট র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের আগেই প্রস্তুত হচ্ছে মিরপুরের ৬০ ফিট রাস্তা: ডিএনসিসি প্রশাসক
ঈদের আগে রাজধানীর মিরপুরের ৬০ ফিট রাস্তা জনগণের চলাচলের উপযোগী করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
শনিবার (১৫ মার্চ) মিরপুর ৬০ ফিট রাস্তার চলমান উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “ডিএনসিসি এলাকার দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার একটি মিরপুর ৬০ ফিট রাস্তা এবং আরেকটি মিরপুর ডিওএইচএস থেকে উত্তরা দিয়াবাড়ী রাস্তা। অব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘদিন এই রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। বেশিরভাগ বড় বড় রাস্তায় চললে মনে হতো আমরা কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত রাস্তায় চলছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে পুরো টিমকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি রাস্তা দুটি এই মাসে রোজার মধ্যেই সংস্কার করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেব। ইতিমধ্যে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে উত্তরা দিয়াবাড়ী রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ঈদের আগেই ৬০ ফিটের রাস্তার কাজ শেষ করে জনগণের চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হবে।”
আরো পড়ুন:
নতুন ১৮ ওয়ার্ডে অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে: ডিএনসিসি প্রশাসক
স্ত্রী-কন্যাসহ খাইরুজ্জামান লিটনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, “কাজ করতে গিয়ে আমরা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। ৬০ ফিট রাস্তার ৮টি পয়েন্টে রাস্তার পাশে বাড়ির মালিক আমাদের ফুটপাত করতে দিচ্ছে না। আমাদের কর্মীদের কনস্ট্রাকশন করতে দিচ্ছে না। কোর্টের রায়ের ভয় দেখাচ্ছেন। কোনও ধরনের সহযোগিতা করছে না। অবৈধভাবে দোকান দিয়ে রেখেছে, ময়লা ফেলে রেখেছে।”
বাধা প্রদানকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা জনগণকে চলাচলের সুবিধা দিতে চাই। কিন্তু, কেউ যদি সরকারি কাজে বেআইনিভাবে বাধা দেয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি কাজে, সিটি কর্পোরেশনের কাজে যারা বাধা দিচ্ছে আমরা তাদের বাড়ির প্রকৃতি যাচাই করছি। তারা অবৈধভাবে আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার করছে। গত বিশ বছর ধরে বাণিজ্যিকহারে ট্যাক্স দিয়েছে কিনা সেটা ধরব। তাদের প্ল্যান তলব করব, রিভিউ করে দেখবো অনুমতি নেওয়া আছে কিনা। প্লানের বাইরে অবৈধ বিল্ডিং আমরা ভেঙে দিব। আমরা কোনো ধরনের ছাড় দিব না।”
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “পহেলা বৈশাখের আগে ডিএনসিসি এলাকায় যতগুলো রাস্তা কাটা ও কাজ চলছে সেগুলো সম্পন্ন করা হবে। প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের লোকবল অনেক কম। রাতের আঁধারেও আমাদের কর্মীরা কাজ করছে। কারণ, আমরা বসে থাকার জন্য আসিনি বরং পরিবর্তন আনার জন্য এসেছি।”
৬০ ফিট রাস্তার চলমান কাজ পরিদর্শন শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে শেওড়াপাড়া আনন্দবাজার বগার মার খাল পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি রুপনগর দুয়ারীপাড়া খাল উদ্ধার এবং পরিচ্ছন্নতা ও খালের পাশে ওয়াক ওয়ে নির্মাণের লক্ষ্যে পরিদর্শন করেন এবং উত্তর পল্লবী বাড়ি ও ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
পরিদর্শনে অন্যান্যের সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এ বি এম সামসুল আলম এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ