শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেন্টাগনকে ইয়েমেনের হুতিদের বিরুদ্ধে ‘অপ্রতিরোধ্য প্রাণঘাতী শক্তি’ ব্যবহার করে ‘একটি চূড়ান্ত ও শক্তিশালী সামরিক অভিযান শুরু’ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সামরিক পদক্ষেপ।
শনিবার শুরু হয়ে মার্কিন হামলাটি রোববারও ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও অন্যান্য এলাকায় অব্যাহত ছিল। হামলায় ৩১ জন নিহত এবং ১০১ জন আহত হয়েছে, যার বেশির ভাগই শিশু ও নারী। নিরস্ত্র নারী ও শিশুদের ওপর এ ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ড কেবল কাপুরুষতার কাজ হিসেবেই দেখা যেতে পারে।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে হুতিদের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘তোমাদের সময় শেষ এবং আজ থেকে তোমাদের আক্রমণ বন্ধ করতে হবে। যদি হামলা বন্ধ না হয়, তাহলে তোমাদের ওপর এমন গজব নাজিল হবে, যা তোমরা আগে কখনও দেখনি।’
এর পর ট্রাম্প হঠাৎ ইরানকে উদ্দেশ করে বলেছেন, হুতিদের সমর্থন অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তোমাদের পুরোপুরি জবাবদিহির মুখোমুখি করবে এবং আমরা এতে মোলায়েম হবো না।’
এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ‘ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করার কর্তৃত্ব বা অধিকার ট্রাম্পের নেই।’ তিনি বলেন, হুতিরা কেবল ‘ইসরায়েলি গণহত্যা ও সন্ত্রাসবাদ’-এর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডের কমান্ডার জেনারেল হোসেইন সালামি সতর্ক করে বলেছেন, ইরান যে কোনো আক্রমণের ‘ধ্বংসাত্মক জবাব’ দেবে।
বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশের তেহরান সফরের দুই দিনের মধ্যেই ট্রাম্পের এই যুদ্ধবাজ মনোভাব দেখা দিল। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে ট্রাম্পের একটি চিঠি হস্তান্তর করেন, যেখানে তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিরোধ করতে ইরানের সমর্থন নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তেহরান পারমাণবিক আলোচনার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও তার আঞ্চলিক নীতির ব্যাপারে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে।
নিশ্চয় এত দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাওয়া ইয়েমেনের এ নিষ্ঠুর আক্রমণ প্রাপ্য নয়। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সব খাদ্য, জ্বালানি এবং অন্যান্য সরবরাহের ওপর অবরোধের কারণে হুতিরা এখনও কোনো জাহাজে আক্রমণ করেনি, যদিও তারা তা করবে বলে হুমকি দিয়েছিল। হুতিদের অভিযোগ, তাদের সামুদ্রিক নিষেধাজ্ঞার হুমকিকে ট্রাম্প প্রশাসন বাড়িয়ে দেখাচ্ছে। হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে, এই নিষেধাজ্ঞা গাজার জনগণের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে না দেওয়া পর্যন্ত কেবল ইসরায়েলি নৌযানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
স্পষ্টতই হুতিরা ট্রাম্পের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে চাইছে না এবং তাদের ইরানের প্রক্সি হিসেবেও বিবেচনা করা উচিত নয়। জানুয়ারিতে গাজা যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর হুতিরা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়। তবুও ট্রাম্প বলে বেড়াচ্ছেন, বাইডেন প্রশাসনকালে হুতিরা মার্কিন জাহাজে আক্রমণ করেছিল।
মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড শনিবারের হামলাকে একটি বৃহৎ পরিসরে পরিচালিত অভিযানের সূচনা হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকতে পারে। প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ এক্স-এ লিখেছেন, ‘আমেরিকান জাহাজ ও বিমানের এবং আমাদের সৈন্যদের ওপর হুতিদের আক্রমণ সহ্য করা হবে না এবং তাদের হিতৈষী ইরানকে সতর্ক করা হয়েছে, তাদের নৌপরিবহনের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা হবে।’
এ ধরনের কাল্পনিক বক্তব্যের আড়ালে হেগসেথ সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন, ট্রাম্প আগামী কয়েক মাস উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বজায় রাখবেন। কারণ, ইরানের পারমাণবিক সমস্যা একটি গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছেছে।
শনিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ল্যাভরভকে ফোন করে হুতিদের ওপর হামলার মার্কিন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করেছেন। এতে বলা হয়েছে, জবাবে ল্যাভরভ ‘শক্তি প্রয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এবং আরও রক্তপাত রোধে সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সব পক্ষের রাজনৈতিক সংলাপে অংশগ্রহণের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।’ আচ্ছা, পরিস্থিতি বদলে গেছে, তাই না? ১৫ মার্চের ঘটনায় ট্রাম্প তাঁর পররাষ্ট্রনীতিতে শক্তির মাধ্যমে শান্তির নেতৃত্ব দেওয়ার নৈতিক ভিত্তি হারিয়ে ফেলেছেন।
এম.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র পরর ষ ট র দ র ওপর ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে বাড়িতে ঢুকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করল যুবককে
যশোরের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ম্যানসেলের প্রধান সহযোগী মীর সামির সাকিব সাদী (৩৫) দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে। সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে শহরের মুড়িব সড়ক জয়ন্তী সোসাইটির পেছনে বাড়িতে ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে। নিহত সাদী ওই এলাকার মীর শওকত আলীর ছেলে। এ ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে।
নিহতের চাচাতো ভাই রাকিব জানান, রাত পৌনে ১২টার দিকে তিনি ও সাদী বাড়ি ফেরেন। বাড়ির উঠানে মোটরসাইকেল তোলার সময় পেছন থেকে সাদীকে চাকু দিয়ে আঘাত করা হয়। এরপর তাকে গুলি করে। এক রাউন্ড গুলির পর গুলি বের হচ্ছিলো না। এ সময় তিনি হামলাকারী সুমন, মেহেদীসহ তাদের সহযোগীদের লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করলে তারা আরও ৫-৬ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যায়। তাদের ছোড়া দু’টি গুলি সাদীর গলা ও বুকে লাগে।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ মরদেহ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। তিনি দাবি করেন, সাদী রেল বাজারের ইজারাদার। হামলাকারীরা বাজার এলাকায় চাঁদাবাজি করত। তাদের প্রশয় না দেওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী জানান, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জড়িতদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান শুরু করেছে। হত্যার কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত করছে। তিনি জানান, নিহত সাদী ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে যাদের নাম আসছে উভয়পক্ষই সন্ত্রাসী। সকলের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, সাদী যশোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যানসেলের প্রধান সহযোগী ও ম্যানেজার। সাদীকে যারা হত্যা করেছে তারাও ম্যানসেলের সহযোগী। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ও ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ম্যানসেলসহ তার পক্ষের লোকজন গা-ঢাকা দেয়। সম্প্রতি সাদীসহ তাদের কেউ কেউ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সাদী খুন হয়।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর যশোর শহরের সিভিল কোর্ট মোড়ে জেলা ছাত্রদলের তৎকালীন সহসভাপতি কবির হোসেন পলাশকে খুন করে মোটরসাইকেলযোগে পালানোর সময় শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনার আহত হন সাদী। দুর্ঘটনায় তার এক পা কেটে ফেলতে হয়। এক পা হারিয়েও ম্যানসেলের প্রধান সহযোগী পরিচয়ে সাদী এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে আসছিল।