বাড়ির ছাদে মিলল যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ
Published: 17th, March 2025 GMT
নিজ বাড়ির ছাদ থেকে আলমগীর হোসেন নামে এক যুবকের রক্তমাখা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার রাতে চাঁদপুরের শাহরাস্তির চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের মণিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। ৩৫ বছর বয়সী আলমগীরের বাবার নাম শহিদুল ইসলাম।
পুলিশ বলছে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে এবং গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলম বেলাল জানান, ইফতারের পর হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়েছি। আলমগীর এলাকায় মাইকিংয়ের কাজ করতেন। পারিবারিক কোন শত্রুতা নাকি অন্য কোন কারণে এই হত্যা তা জানা যায়নি।
তিনি বলেন, ‘আলমগীরকে ভালো হিসেবেই জানি। তিনি অত্যন্ত সহজ সরল। তার কোন শত্রু থাকতে পারে তা আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানার ওসি আবুল বাশার বলেন, ‘বাড়ির ছাদে গলা কাটা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহের শরীর ও গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। রাত সাড়ে ৭টা থেকে পৌনে আটটার মধ্যে এ হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। দ্রুতই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য খুঁজে বের করা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মরদ হ ন হত আলমগ র মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রচারের নামে ২২ কোটি টাকা তছরুপ, কম্বলের টাকাও হাওয়া
বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংকে কেনাকাটা, সংস্কার ও প্রচারের নামে বড় অঙ্কের অর্থ তছরুপের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি ব্যাংকটিতে নিয়োগ, তহবিল ব্যবহার ও ঋণের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের অনিয়ম হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এসব অনিয়ম ধরা হয়েছে।
এসব অনিয়মে অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তা ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিন কর্মকর্তা হলেন ওয়ারেস উল মতিন, মোহাম্মদ তানভীর রহমান ও এ কে এম নাজমুল হায়দার। এর মধ্যে ওয়ারেস উল মতিন ব্যাংকটির সাতটি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। মোহাম্মদ তানভীর রহমান ছিলেন ব্যাংকটির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ও করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বিভাগের প্রধান। আর এ কে এম নাজমুল হায়দার ছিলেন কোম্পানির সচিব। তাঁরা মিলে ব্যাংকটিতে অনিয়মের চক্র গড়ে তুলেছিলেন বলে নিরীক্ষায় উঠে এসেছে। মূলত তাঁরা তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের হাতিয়ার ছিলেন।
ব্যাংকটিতে যখন উল্লিখিত অনিয়মগুলো সংঘটিত হয়, তখন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন আলমগীর কবির। সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে বড় অঙ্কের জরিমানার পরও তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। পরে চেয়ারম্যানের পদ ছাড়লেও পরিচালক পদে বহাল রয়েছেন।
সরকার বদলের পর গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে বদল আসে। ২০ বছর পর আবারও ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ফেরেন এম এ কাশেম। তিনি ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। তার আগে ২০০৪ সাল থেকে টানা ২০ বছর ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন আলমগীর কবির।
প্রচারের নামে ২২ কোটি টাকা তছরুপ
সাউথইস্ট ব্যাংক ২০২৩ সালে ব্যাংকের প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন বাবদ ২২ কোটি টাকা খরচ করে। এ জন্য ওই বছর ব্যাংকটি মেট্রোরেল উদ্বোধন, বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিবস উদ্যাপন ও বিজয় দিবস উপলক্ষে ইনবক্স কমিউনিকেশনের মাধ্যমে ২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা খরচ করে। তবে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে যার কোনো অনুমোদন ছিল না। এমনকি কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই ইনবক্স কমিউনিকেশনকে এই কাজ দেওয়া হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা করে ২২ কোটি টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন প্রচারের কোনো নথিপত্রেরও হদিস মেলেনি।
ব্যাংকে জমা দেওয়া ট্রেড লাইসেন্স অনুযায়ী ইনবক্স কমিউনিকেশনের ঠিকানা বনানীর ৬২ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে। আর ব্যাংক থেকে বিল গ্রহণের জন্য নিকুঞ্জের একটি ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে দুই ঠিকানায় গিয়ে ইনবক্স কমিউনিকেশন নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পরিচালনা পর্ষদ ও এমডির নির্দেশে বিল ছাড় করেছি। কাজও দেওয়া হয়েছে তাঁদের নির্দেশে। প্রতিটি বিল দেওয়ার সময় ওপর থেকে নির্দেশনা এসেছে, সেই হিসেবে বিল ছাড় করা হয়েছে। —মোহাম্মদ তানভীর রহমান, সাবেক প্রধান, করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগ, সাউথইস্ট ব্যাংকব্যাংকটির কাছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিল জমা দিয়ে অর্থ তুলে নেয় ইনবক্স কমিউনিকেশন। পরে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে এসব গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করেও বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞাপন প্রচারের তালিকায় ছিল বেসরকারি মাছরাঙা টেলিভিশনের নামও। তবে মাছরাঙার নির্বাহী পরিচালক অজয় কুমার কুণ্ডু এক চিঠিতে ব্যাংকটিকে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে সাউথইস্ট ব্যাংকের কোনো বিজ্ঞাপন মাছরাঙায় প্রচারিত হয়নি। এ–সংক্রান্ত কোনো বিলও তারা পায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, কোনো ধরনের ক্রয়নীতি না মেনে পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই ইনবক্স কমিউনিকেশনকে প্রচারের এই কাজ দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল ব্যাংকটির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ও করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বিভাগ। যার দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ তানভীর রহমান। গত নভেম্বরে তিনি পদত্যাগ করেন। জানতে চাইলে মোহাম্মদ তানভীর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইনবক্সকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। পরিচালনা পর্ষদ ও এমডির নির্দেশে বিল ছাড় করেছি। কাজও দেওয়া হয়েছে তাঁদের নির্দেশে। প্রতিটি বিল দেওয়ার সময় ওপর থেকে নির্দেশনা এসেছে, সেই হিসেবে বিল ছাড় করা হয়েছে।
কম্বলের টাকাও হাওয়া
ব্যাংকটির নথিপত্র অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কম্বল কেনার জন্য ব্যাংকটি ছয় কোটি টাকা খরচ করেছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম্বলের দরপত্রপ্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া তামান্না বেডিং স্টোর ও মেসার্স জারা ইন্টারন্যাশনালকে বাদ দিয়ে ঘুড়ি কমিউনিকেশনের মাধ্যমে কম্বল কেনা হয়েছে। ঘুড়ি কমিউনিকেশন মূলত অফিস স্টেশনারি ও প্রিন্টিং আইটেম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। ফলে আদৌ কোনো কম্বল কেনা হয়েছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। ব্যাংকটির একটি সূত্র বলছে, ছয় কোটি টাকার কম্বল কাকে দেওয়া হয়েছে, তার কোনো নথিপত্র ব্যাংকে নেই।
এজেন্ট ব্যাংকিং টাকারও অপব্যবহার
সাউথইস্ট ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগ তাদের হাতে থাকা অতিরিক্ত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে বড় লোকসান করেছে। ব্যাংকটির কর্মকর্তা ওয়ারেস উল মতিনের দায়িত্বে ছিল এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগ। ২০২২ সালে তিনি ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই ১৫ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। এই বিনিয়োগ ২০২৪ সালে কমে দাঁড়ায় সাড়ে আট কোটি টাকায়। একইভাবে বিভিন্ন শাখার সাইনবোর্ড পরিবর্তন, ব্র্যান্ডিং ও সংস্কারের নামে সাড়ে তিন কোটি টাকা তুলে নেন তিনি। ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষরে ওয়ারেস উল মতিন এই অর্থ উত্তোলন করেন; কিন্তু অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় ব্যাংকটির সব শাখা ও উপশাখা জানিয়েছে, ২০২৩ সালে এসব শাখা-উপশাখায় সাইনবোর্ড পরিবর্তন, ব্র্যান্ডিং ও সংস্কারের কাজ হয়নি।
ওয়ারেস উল মতিন গত অক্টোবরে পদত্যাগ করেন। এরপর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় কর্মকর্তারা লিখিতভাবে জানান, তাঁরা কোনো বিলে স্বাক্ষর করেননি, তাঁদের স্বাক্ষর জাল করে টাকা তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ওয়ারেস উল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগের দায়িত্বে ছিলাম, তবে বিভাগের অতিরিক্ত অর্থ কোথায় বিনিয়োগ হবে, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আমার ছিল না। এটা বিনিয়োগ বিভাগ দেখত। গত আগস্টে আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করি। ব্যাংক এখনো অব্যাহতি দিচ্ছে না। কেন দিচ্ছে না, তা–ও জানি না।’
বড় জরিমানার পরও বহাল
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বে লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেনে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবীরকে গত নভেম্বরে ১২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। একই ঘটনায় তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া বেগমকে পাঁচ কোটি টাকা ও জামাতা তুষার এল কে মিয়াকে আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। সব মিলিয়ে এই তিনজনকে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার এই অর্থ তাঁরা পরিশোধ করেছেন বলে জানা গেছে।
বে লিজিংয়ের পরিচালক থাকা অবস্থায় সুরাইয়া বেগম সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করেন। একই কাজ করেছেন তাঁর স্বামী ও সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির এবং জামাতা তুষার এল কে মিয়া। সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কোনো পরিচালক নির্ধারিত একটি সময়ে ওই কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করতে পারেন না; কিন্তু উল্লিখিত তিন ব্যক্তি সেই আইন লঙ্ঘন করেছেন। এই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন মূলত সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির। তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হলেও পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে বে লিজিং পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করতেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বে লিজিংয়ের একজন পরিচালক জুবায়ের কবির। তিনি আলমগীর কবীরের ভাইয়ের ছেলে ও ইরেবাস প্রপার্টিজের কর্ণধার। এই প্রতিষ্ঠানের ঋণ ২০২৪ সালের জুনে খেলাপিযোগ্য হলেও সাউথইস্ট ব্যাংক তা নিয়মিত দেখায়। ফলে তিনি বে লিজিংয়ের পরিচালক পদে বহাল থাকার সুযোগ পান। একই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবীরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।