যুদ্ধাভিযান ছাড়াও রমজানে নানা কারণে নবীজির (সা.) সফর হতো। এ-সময় তিনি কখনো রোজা রাখতেন, কখনো রাখতেন না, বরং খাওয়া-দাওয়া করতেন এবং অন্যদেরও আদেশ দিতেন রোজা না-রাখার। ইবনে আব্বাস তরফ থেকে তাউস বর্ণনা করেন, ‘নবীজি (সা.) রমজানে রোজা রেখে সফরে বের হলেন, পথে উসফান এলাকায় পৌঁছে পানির পাত্র আনতে বললেন। সবাইকে দেখাতে প্রকাশ্যে পানি পান করলেন তিনি। মক্কায় পৌঁছা অবধি তিনি পানাহার স্বাভাবিক রাখলেন। ইবনে আব্বাস বলতেন, ‘নবীজি (সা.
আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যে অসুখে পড়বে হবে বা সফরে থাকবে, সে অন্য দিনগুলোতে সে-সময়ের (রোজার) সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান, কঠিন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
নবীজি (সা.) কখন রোজা রাখতেন
আবু দারদা বলেন, ‘রমজানে আমরা প্রচণ্ড তাপের মধ্যে রাসুলের (সা.) সঙ্গে সফরে বের হলাম। খরতাপ এত বেশি ছিল যে, আমাদের কেউ কেউ মাথায় হাত দিচ্ছিল। রাসুল (সা.) ও আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা ছাড়া আমাদের কেউ সেদিন রোজাদার ছিলেন না। (মুসলিম, হাদিস: ১,১২২)
হাদিসটি প্রমাণ করে যে, যদি কষ্টের সম্ভাবনা না থাকে, রোজা না রাখার মতো কিছু না ঘটে, তবে রোজা রাখাই ভালো। (রদ্দুল মুহতার, ২/৪২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, ৩/৪০৩)
তবে রোজা না রাখার কারণ থাকলে না রাখাই ভালো। যেমন নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ পছন্দ করেন তার দেওয়া সহজটা যাপন করা হোক, পাপে লিপ্ত হওয়াকে পছন্দ করেন না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৫,৮৬৬)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)-কে ভালোবাসার ৭টি নিদর্শন০৬ মার্চ ২০২৫কখন রোজা রাখা তিনি পছন্দ করতেন না
মক্কা বিজয়কালে রমজান মাসে নবীজি (সা.) রোজা রাখেননি। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রোজা রেখে তিনি ‘কুদাইদ’ ও ‘উসফান’ এলাকার মধ্যবর্তী জলাধারে নেমে রোজা ভেঙে ফেললেন, এরপর মাস শেষ হওয়া অবধি তিনি খাবার-পানি স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছেন করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ৪,২৭৫)
আনাস (রা.) বলেন, ‘আমরা তখন নবীজির (সা.) সঙ্গে ছিলাম, আমাদের মধ্যকার অনেকে নিজের কাপড় দিয়ে ছায়া নিচ্ছিল। যারা রোজা ছিলেন তারা নিষ্ক্রিয় থাকলেন, আর যারা খাবার পানি গ্রহণ করলেন তারা বাহন হাঁকিয়ে কাজে আত্মনিয়োগ করলেন এবং প্রচুর শ্রম দিলেন তারা। নবীজি (সা.) বললেন, পানাহারকারীরা আজ সওয়াব নিয়ে গেছে।’ (বুখারি, হাদিস: ২৭৩৩)
তাই জিহাদ বা ইসলামের জন্য শক্তি খরচ করতে হবে এমন সময়ে রোজা রাখা আলেমগণ মাকরুহ বলেছেন। কারণ, তাতে দুর্বল হয়ে মূল উদ্দেশ্য সিদ্ধিতে অসফল হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। (রদ্দুল মুহতার, ২/৪২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, ৩/৪০৩)
আরও পড়ুন যেমন ছিল মহানবীর (সা.) সাহরি১১ মার্চ ২০২৫কখন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন
যদি রোজা রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে এবং পানাহার আবশ্যক হয়, তখন পানাহার করা বাধ্যতামূলক। আল্লাহ কারও ওপর বিধান চাপিয়ে দেন না, এমনকি নিজের ওপর তেমন বিধান বানিয়ে নেওয়াও বৈধ নয়। কঠিন অবস্থায় রোজা পালনকারীকে লক্ষ্য করে নবীজি (সা.) বললেন, ‘এরা পাপী, এরা পাপী।’ (মুসলিম, হাদিস: ১,১১৪)
এক ব্যক্তি এমন কঠিন দুঃসাধ্য সময়ে রোজা রেখেছে এবং একদল তাকে ঘিরে ছায়া দিচ্ছে। নবীজি (সা.) তা দেখে বললেন, ‘(এভাবে) সফরে রোজা রাখা কোনো পুণ্যের কাজ নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২,৪০৭)
আবু সাইদ খুদরি বলেন, রোজা রেখে আমরা নবীজির (সা.) সঙ্গে মক্কা সফরে বের হলাম। যাত্রা বিরতিকালে তিনি বললেন, ‘তোমরা শত্রুপক্ষের কাছাকাছি পৌঁছে গেছ, পানাহার তোমাদের শরীর সবল করবে।’ সুতরাং ‘অবকাশ’ দেখে আমাদের কেউ রোজা রেখেছেন, কেউ রাখেন নি। অন্য স্থানে গিয়ে তিনি আমাদের বললেন, ‘ভোরে তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হবে, পানাহার তোমাদের জন্য বলদায়ক হবে, সুতরা, তোমরা পানাহার করো।’ এবার পানাহার ছিল বাধ্যতামূলক। আমরা সবাই খাবার-পানি গ্রহণ করলাম। (মুসলিম, হাদিস: ১,১২০)
কঠিন শত্রুর মুখোমুখি হলে, শক্তিমত্তা প্রদর্শনের বিকল্প না থাকলে এবং রোজা রাখলে দুর্বল হয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা থাকলে, রোজা রাখা সংগত নয়। একদল আলেম বলেছেন, এ-সময় রোজা রাখা নিষিদ্ধ। তবে ঐকমত্য বিধান যে, রোজা রাখলে তা শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং পুনরায় কাজা আদায় করতে হবে না—তবে গুনাহগার হবে।
আরও পড়ুনযেমন ছিল মহানবীর (সা.) ইফতার১০ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ আম দ র বল ছ ন বলল ন রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আদালতের ভেতরে পুলিশকে মারধর, বিএনপির ৬ নেতাকর্মী আটক
পাবনায় আদালতের ভেতরে শুনানি চলাকালে ভিডিও ধারণ করতে বাধা দেওয়ায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিএনপির ৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে পাবনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
আটককৃতরা হলেন- ঈশ্বরদী উপজেলা সদরের ফতে মোহাম্মদপুর নিউ কলোনী এলাকার মৃত আব্দুল ওহাবের ছেলে আওয়াল কবির (৩৮), হাবিবুর রহমানের ছেলে সরোয়ার জাহান শিশির (৩৩), দাশুড়িয়া গ্রামের মৃত আমজাদ খানের ছেলে কালাম খান (৪০), এম এস কলোনী এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে রুবেল হোসেন (৩৩), লোকোসেড গাউছিয়া মসজিদ এলাকার মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে সবুজ হোসেন (৩৫) এবং ভাঁড়ইমারী বাঁশেরবাদা গ্রামের মৃত আব্দুল গাফফার সরদারের জহুরুল ইসলাম (৩৫)।
তাদের মধ্যে আওয়াল কবির ঈশ্বরদী পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক, সরোয়ার জাহান শিশির পৌর ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রত্যাশী, কালাম খান দাশুড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রুবেল হোসেন পৌর ৪নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এবং জহুরুল ইসলাম ডালিম সলিমপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের সদস্য।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর ঈশ্বরদীতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সময় নাশকতা একটি মামলার শুনানি ছিল। সেই মামলায় আটককৃতরা হাজিরা দিতে এসেছিলেন। হাজিরা চলা অবস্থায় তারা এজলাসে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে থাকেন। এসময় সেখানে থাকা পুলিশ সদস্য শাহ আলম তাদের ছবি তুলতে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে মারধর করেন ওইসব নেতাকর্মীরা।
এসময় আদালতের আইনজীবী ও উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করেন এবং হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে আদালতের শুনানি শেষে তাদের আটক করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিদর্শক ( কোর্ট ইন্সপেক্টর) রাশেদুল ইসলাম জানান, সঙ্গে সঙ্গে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পাবনা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আইনজীবী মাসুদ খন্দকার বলেন, “আদালতের এসলাসে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়ার মত নয়। বিএনপির কেউ যদি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/শাহীন/এস