রংপুরে পুলিশ কর্মকর্তার ‘ঘুষ–বাণিজ্যের মাধ্যম’ অমিত বণিক দুই দিনের রিমান্ডে
Published: 17th, March 2025 GMT
রংপুর মহানগর পুলিশের সদ্য প্রত্যাহার হওয়া উপকমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে ‘ঘুষ–বাণিজ্যের মাধ্যম’ হিসেবে অভিযোগ ওঠা রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সোয়েবুর রহমান এই আদেশ দেন।
এর আগে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে অমিত বণিককে আদালতে হাজির করে চাঁদাবাজির মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে অমিত বণিকের জামিন আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। উভয় পক্ষে শুনানি শেষে আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছের ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন লিপি খান। অভিযোগের সঙ্গে অমিত বণিকের সঙ্গে ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিও রেকর্ড জমা দেন লিপি খান।
এরপর গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অমিত বণিককে থানায় ডেকে নেয় কোতোয়ালি থানার পুলিশ। একই দিন বিকেল চারটার দিকে লিপি খানের পক্ষে কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে যান তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পলাশ হাসান (২৭)। ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে থানায় যান উপপুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সার।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রের ভাষ্য, শিবলী কায়সার থানায় ঢুকেই পলাশ হাসানের ওপর চড়াও হন এবং তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে কর্তব্যরত কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে তাঁকে (পলাশ) গুলি করতে উদ্যত হন। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় মামলা নেওয়া হলেও এতে আসামি করা হয় শুধু অমিত বণিককে। মামলায় আগে থেকেই থানা হেফাজতে থাকা অমিত বণিককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘুষ-বাণিজ্য ও থানায় মামলার বাদীকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে গতকাল শনিবার দুপুরে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
এদিকে গতকাল রোববার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টার মামলায় ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ব্যবসায়ী লিপি খানকে। গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে তাঁকে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় ‘ডিবি হেফাজতে’ যুবকের মৃত্যুতে এমএসএফের উদ্বেগ
ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হেজাজ বিন আলম ওরফে এজাজ (৩২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে এর নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।
আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমএসএফ বলেছে, গত শনিবার হেজাজ বিন আলম ওরফে এজাজকে জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর পরিবারের দাবি, জামিনে থাকা সত্ত্বেও ডিবি পুলিশ হাসপাতাল থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায় এবং তাদের হেফাজতেই এজাজের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে ডিবি হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মোহাম্মদ তালেবুর রহমান।
বিজপ্তিতে এজাজের মৃত্যু নিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তার উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়। বলা হয়, তিনি (তালেবুর রহমান) বলেছেন, এজাজ ডিবি হেফাজতে মারা যাননি। কিছুদিন আগে গ্রেপ্তারের পর জামিনে বের হন এজাজ। এর পর থেকে তিনি ধানমন্ডির জাপান–বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখান থেকে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করেন। শনিবার ভোররাত ৪টা ৪০ মিনিটে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যান এজাজ। যেহেতু তাঁর নামে মামলা রয়েছে, তাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে থানা-পুলিশ ও ডিবি পুলিশ উপস্থিত ছিল।
এমএসএফ মনে করে, ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি রাখে, কারণ রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকা যেকোনো ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা পুলিশের আইনি দায়িত্ব।
এমন অবস্থায় এজাজের মৃত্যু নিয়ে পরিবার থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে অনতিবিলম্বে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে এমএসএফ।