নীলফামারীতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিজড়িত শেখ জামে মসজিদ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিএনপিপন্থি শিক্ষক শেখ এবিএম জাকির হোসেন।

তিনি আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় জিয়া পরিষদের সদস্য। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রাধ্যক্ষ কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

অভিযোগ উঠেছে, বিগত আওয়ামীপন্থি প্রশাসনের আস্থাভাজন হয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা পেতে অধ্যাপক জাকির এ গবেষণা শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেন বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা। এরপরেও তিনি গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পট পরিবর্তনের পর গবেষণা প্রকল্পটি বাতিলের আবেদন করেন তিনি।

আরো পড়ুন:

ইবিতে ১৫ বছরের নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে কমিটি

ইবির ডি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু

তবে গবেষণা প্রকল্প বাতিলের বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন গবেষণা প্রকল্প মূল্যায়ন ও মনিটরিং কমিটির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক রেজওয়ানুল ইসলাম। এছাড়াও বিগত প্রশাসনের সময় তার আওয়ামী ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জিয়া পরিষদের কয়েকজন সদস্যও।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য গঠিত গবেষণা প্রকল্প মূল্যায়ন ও মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক ও জীববিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক রেজওয়ানুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা বাবদ তহবিল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিশেষ গবেষণা প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৮০টি গবেষণা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

এতে ধর্মতত্ত্ব ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদভুক্ত আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জাকির হোসেনের “নীলফামারীতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিজড়িত ‘শেখ জামে মসজিদ’: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ” শিরোনামে গবেষণা প্রকল্পটিও অনুমোদিত হয়। এই গবেষণা প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

গবেষণার প্রস্তাবনায় তিনি বঙ্গবন্ধুকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, প্রকৃত ধর্মভীরু ও মসজিদ-মাদরাসার প্রতি অনুরাগী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। ১৯৬৯ সালের ২৩ অক্টোবর আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের প্রচারে অংশ নিয়ে নীলফামারীতে আসার পথে নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কের পাশে চৌচালা খড়ের নতুন একটি মসজিদে তিনি জুমার নামাজ পড়েন। পরে  মসজিদটির নামকরণ করা হয় ‘শেখ জামে মসজিদ’।

অধ্যাপক শেখ এ বি এম জাকির হোসেনের পিতা ওই মসজিদ কমিটির আজীবন সভাপতি ছিলেন। স্বাধীনতার পর মসজিদ কমিটির লোকজন শেখ মুজিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মসজিদ সংস্কারের জন্য ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন বলে প্রস্তাবনায় উল্লেখ আছে। এছাড়া প্রস্তাবনায় তিনি শেখ মুজিবের কন্যা পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনাকে তিনি ইসলাম ধর্মের খেদমতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণকারী ও দেশনেত্রী হিসেবে উল্লেখ করেন। তার এ গবেষণা নিয়ে জিয়া পরিষদে বিব্রতকর পরিস্থিতির ও চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক সদস্য।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন জিয়া পরিষদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকেও বিগত আওয়ামী প্রশাসনের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নিতে তিনি এই গবেষণা প্রকল্প হাতে নেন। বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়েন বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা। তাদের মাঝে সৃষ্টি হয় নানা সমালোচনার। এরপরেও আওয়ামী প্রশাসনের আনুকূল্য পেতে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যান তিনি।

এছাড়া নিজেকে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে ‘আধা আওয়ামীলীগ’ বলে বিভিন্ন জায়গায় সম্বোধন করতেন বলেও জানা যায়। তার বিরুদ্ধে হল প্রাধ্যক্ষ হিসেবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মোটা অংকের অর্থ সহায়তাসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান ও ছাত্রলীগের সুপারিশে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রাধ্যক্ষ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও ওঠে।

জুলাই আন্দোলনের প্রথম দিকে ছাত্রলীগের আস্থাভাজন হিসেবে কাজ করলেও একদম শেষ পর্যায়ে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সঙ্গে মাঠে আসেন। পরে ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পতনের পর পুরো পরিবর্তন হয়ে যান অধ্যাপক শেখ জাকির। অতীতের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিয়া পরিষদের এক সদস্য বলেন, “তিনি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ করেছেন। এ ধরনের কাজের মাধ্যমে তিনি তার আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এটা করা তার একদমই উচিত হয়নি।”

এ বিষয়ে অধ্যাপক জাকির হোসেন  বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিজড়িত মসজিদ নিয়ে গবেষণার বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি হওয়ায় ৫ আগস্টের পর আমি গবেষণা প্রকল্পটি বাতিলের আবেদন করেছি। যেহেতু বঙ্গবন্ধু স্মৃতিবিজড়িত স্থান, সেহেতু এটা নিয়ে আর গবেষণা করা যাবে না।”

জিয়া পরিষদের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফারুকুজ্জামান বলেন, “গবেষণার বিষয়ে আমি অবগত নই। এ বিষয়ে জেনে বিস্তারিত বলতে পারব।” 

জিয়া পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক নূরুন নাহার বলেন, “এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত অবগত নই। শুনেছি, তবে সাংগঠনিকভাবে কোনো আলোচনা হয়নি। আর এমন কাজে মন্তব্য করলে অনেক করা যায়। তবে মুখোশধারী মানুষদের বিষয়ে মন্তব্য করতে ইচ্ছে নেই।”

গবেষণা প্রকল্প মূল্যায়ন ও তত্ত্বাবধান কমিটির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে নির্বাচিত গবেষণা প্রকল্পগুলো উপাচার্যের নিকট পাঠিয়েছি। তিনি প্রকল্পটি বাতিলের আবেদন করেছেন কি না আমার জানা নেই।”

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকদ র প রকল প কম ট র র জন য কর ছ ন সদস য আওয় ম মসজ দ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ১০

গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সাবিনা আক্তার (২৮) নামের এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছয় পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাবিনা আক্তার ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার খালসাইদফুনা গ্রামের বাসিন্দা রাব্বি মিয়ার স্ত্রী।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সোমবার ইফতারের পর বাঘের বাজার এলাকার গোল্ডেন রিপিট নামের একটি কারখানায় যাচ্ছিলেন সাবিনা আক্তারা। বাঘের বাজার এলাকায় মহাসড়ক পার হওয়ার সময় একটি মাইক্রোবাস তাঁকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন প্রথমে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় নারী শ্রমিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সহকর্মী শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিক ও এলাকাবাসী কারখানায় ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে ছয় পুলিশ সদস্য আহত হন।

সংঘর্ষের সময় উত্তেজিত শ্রমিকেরা মহাসড়কে বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালান। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পুলিশের সঙ্গে যোগ দিলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও লাঠিপেটা করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হালিম বলেন, শ্রমিক নিয়ন্ত্রণের সময় বহিরাগতরা সুযোগ নিয়ে কারখানায় ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। পুলিশ বাধা দিলে তাঁরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে থানা–পুলিশের তিনজন ও শিল্প পুলিশের তিনজনসহ মোট ১০ জন আহত হয়েছেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয় এবং যান চলাচল শুরু হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ