মঞ্চে উঠে আপ্লুত হামজা শুধু বললেন ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’
Published: 17th, March 2025 GMT
ইংলিশ ফুটবলার দেওয়ান হামজা চৌধুরী। তবে এবার তার পরিচয়টা হচ্ছে ভিন্ন। অভিষেক হতে যাচ্ছে দেশের হয়ে লাল সবুজের জার্সি গায়ে। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়ানোর আগে সোমবার (১৭ মার্চ) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি তার নিজ গ্রাম হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার স্নানঘাটে যান।
গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় হামজাকে। সংবর্ধনা মঞ্চে আপ্লুত এই ফুটবলার কয়েক সেকেন্ড কথা বলেন, যেখানে তার মুখে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ কথাটিই স্পষ্ট শোনা যায়।
মা-স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে পৌঁছান ইংলিশ ক্লাব লেস্টার সিটির মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী।
আরো পড়ুন:
অগ্নিপরীক্ষায় অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন
বাংলায় কথা বললেন হামজা
বিমানবন্দরে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট গ্রামে রওনা হন তিনি। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি গ্রামে পৌঁছান।
গ্রামবাসী হামজার বাড়িতেই তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার মঞ্চ তৈরি করে। গ্রামে পৌঁছানোর পর সরাসরি তাকে নেওয়া হয় সেই মঞ্চে। তখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল সেখানে। মঞ্চে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় তাকে। এরপর কয়েক সেকেন্ডের বক্তব্য দেন হামজা। ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলা হামজাকে বলতে শোনা যায়, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’ এরপর তিনি ঘরে চলে যান।
সোমবার সকাল থেকেই শত শত মানুষ ও সংবাদকর্মী দেওয়ান হামজা চৌধুরীর গ্রামের বাড়িতে জড়ো হন। একনজর দেখতে সেখানে তারা অপেক্ষায় ছিলেন। হামজাকে বরণে পথে পথে তোরণ নির্মাণ করা হয়। বাড়ির প্রবেশ পথেও তোরণ করা হয়। সংবর্ধনার জন্য তৈরি করা হয় একটি মঞ্চ। অতিথিদের আপ্যায়নে ইফতারের আয়োজন ছিল।
দেড় বা দুই বছর বয়স থেকেই তার (হামজা চৌধুরী) দেশে আসা শুরু, কিন্তু এবারের আসাটা ভিন্ন। এবার তার সঙ্গে এসেছেন স্ত্রী, সন্তানরাও। তাদের জন্য বাংলাদেশে এটি প্রথম সফর। পুত্রবধূ প্রথমবার আসছেন শ্বশুর বাড়িতে। তাই বিদেশি বধূকে বরণে ব্যাপক আয়োজন করেছেন স্বজনরা। লাইটিং করা হয়েছে পুরো বাড়িতে।
হামজা চৌধুরীর চাচা দেওয়ান মাসুদ চৌধুরী বলেন, “২০১৪ সালে সর্বশেষ দেশে এসেছিল হামজা। ২০২২ সালে সে বিয়ে করে। এরপর আর তার দেশে আসা হয়নি। সে দেশে আসায় আমরা আনন্দিত। ভাতিজার সাথে এবার তার স্ত্রী এবং আমাদের নাতি-নাতনিদের দেখেছি। মূলত তাদের বরণ করতেই বাড়ি সাজানো হয়েছে। আমাদের মধ্যে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে। শুধু আমাদের বাড়ি নয়, জেলাজুড়ে মানুষের মধ্যে তাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।”
হামজা চৌধুরীর বাবা দেওয়ান গোলাম মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, “অনেকেই সংবর্ধনার আয়োজন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমি বারণ করেছি। একে তো রমজান মাস, আবার সে লম্বা বিমান সফর করে আসছে। সে অনেক ক্লান্ত। তাই কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি। বলেছি, এটিই তো শেষ আসা নয়। যেহেতু দেশের হয়ে খেলবে, পরের বার এলে সংবর্ধনা দেওয়া যাবে।
“এবার আমি নিজে বাড়িতে ছোট আয়োজন করেছিলাম। যেহেতু বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন এসেছে, তাই সবার সম্মানে এ আয়োজন। ছোট একটি মঞ্চ তৈরি করেছিলাম। এখানে সবার সাথে কুশলবিনিময় করল, তারপর সবাইকে নিয়ে ইফতার। ব্যস, এটুকুই। একটি রাত বাড়িতে থাকাই মূল উদ্দেশ্য। মঙ্গলবার ঢাকায় চলে যাবে সবাই।”
এর আগেও স্নানঘাট গ্রামে এসেছিলেন হামজা চৌধুরী। তবে এবার তার আসায় ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। এবার তিনি এসেছেন নিজ দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলতে। আগামী ২৫ মার্চ ভারতের শিলংয়ে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বছাই পর্বে বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামবেন লেস্টার সিটির এই মিডফিল্ডার। এই ম্যাচ দিয়েই বাংলাদেশের জার্সিতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হবে হামজা চৌধুরীর।
ঢাকা/মামুন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল দ শ র হয় ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
সম্প্রীতির ইফতার
বিকেল বাড়ার সঙ্গে ক্যাম্পাসে বাড়তে থাকে ব্যস্তুতা। কেউ ক্যাফেটেরিয়ায় যাচ্ছে, কেউ যাচ্ছে গেটে। কার আগে কে যাবে চলে সেই প্রতিযোগিতা। ফেরার পথে কারও হাতে থাকছে মুড়ি, কারও হাতে ছোলা, আলুর চপ, পেঁয়াজু। এরপর চলে জায়গা খোঁজার প্রতিযোগিতা। মাঠের কোথায় ঘাস আছে, চত্বরের কোন জায়গাটা পরিষ্কার আছে সে জায়গায় বসে পড়া। সূর্য ডোবার আগ মুহূর্তে চলে মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, শরবত তৈরির প্রস্তুতি। এই দৃশ্য পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রব)। রমজানের শুরু থেকে এভাবেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ইফতারের আয়োজন চলে। এবারের রমজানে ক্লাস, পরীক্ষা থাকার কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বাড়ি যেতে পারেননি। ক্যাম্পাসে ক্লাস পরীক্ষা চলবে আঠারো রমজান পর্যন্ত। তাই শিক্ষার্থীদের এবারের সাহ্রি ও ইফতার সারতে হচ্ছে ক্যাম্পাসেই। অধিকাংশ শিক্ষার্থী মেসে এবং হলে সাহ্রি করলেও ইফতার করতে আসেন ক্যাম্পাসে। বিকেলে
বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়রদের সঙ্গে বসে শেষ করেন ইফতারি। প্রতিদিন ক্লাস, পরীক্ষা শেষ করে বিকেলে ক্যাম্পাসে এক এক করে আসতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, স্বাধীনতা চত্বর, শহীদ মিনার, মুক্তমঞ্চ, এলিভেটেডের ওপরে এবং লেক পাড়ে নিজেদের পছন্দমতো জায়গা খুঁজে নেন। এর পর শুরু হয় ইফতারের আয়োজন। ইফতারি কেউ ক্যাফেটেরিয়া থেকে কেনেন কেউ আবার ক্যাম্পাস গেট থেকে। এর পাশাপাশি অনেকে মেস থেকে তৈরি করে আনেন, অনেকে আবার অনলাইনে অর্ডার করেন। নানা প্রকারের ইফতারির পসরা নিয়ে শুরু হয় প্রস্তুতি পর্ব। কোন গ্রুপ পেপার আনতে যাচ্ছে, কোন গ্রুপ প্লেট নিয়ে আসছে। কেউ ফল কাটছে, শরবত বানাচ্ছেন, কেউ ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি মাখাচ্ছে, কেউ বিতরণ করছে। এ যেন এক রীতিমতো এক উৎসব। গল্প আর আড্ডায় চলতে থাকে এই উৎসব। এই ইফতারে সিনিয়র, জুনিয়র পার্থক্য থাকে না। পার্থক্য থাকে না কে মুসলমান কে হিন্দু। সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতি এক বিরল দৃশ্যের দেখা মেলে প্রতিদিনের ইফতারে।
বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারের সময় মনে পড়ে যায় পরিবারের কথা। মায়ের হাতে বানানো সেই ইফতারের স্বাদ যেন অমৃত। তবু জীবনের তাগিদেই পরিবারের বাইরে ইফতার। তবে এই জায়গাটি যেন আরেকটি পরিবার। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মাহি বিন জাকির বলেন, ‘বাসায় থাকলে সাহ্রি, ইফতার পরিবারের সঙ্গেই হতো। কিন্তু ক্লাস পরীক্ষার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ক্যাম্পাসে সবাই মিলে ইফতার করি। এটাও একটা পরিবার।’ পরিসংখ্যান বিভাগের শ্রী তন্ময় কুমার বলেন, ‘ইফতারি
আমাদের মাঝে একটা সাম্প্রতিক বন্ধন তৈরি করে। ক্যাম্পাসের ইফতারে কেউ ধর্ম, বর্ণ খোঁজে না। রমজানের এই সময়টাতে
পুরো ক্যাম্পাসে ইফতারের আয়োজন নিয়ে একটা উৎসব
বিরাজ করে।’v