গাজায় বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে ১০ লাখ শিশু
Published: 17th, March 2025 GMT
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্ণনা করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, বেঁচে থাকার মৌলিক উপকরণ ছাড়াই টিকে থাকার জন্য লড়তে হচ্ছে গাজার ১০ লাখ শিশুকে।
গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর এল-বালাহ থেকে ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক এডুয়ার্ড বেগবেদার এক ভিডিও পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বেগবেদার বলেছেন, শিশুদের জীবন বাঁচাতে অন্তত কিছু পানি ওবিদ্যুৎ ছিটমহলে পৌঁছানোর অনুমতি দেওয়া ‘জরুরি।’
তিনি বলেছেন, “গাজার ১০ লাখ শিশু মৌলিক উপকরণ ছাড়াই বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে। লাখ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানি এবং স্যানিটেশনের অভাব বোধ করছে। পানি মানুষের একটি মৌলিক অধিকার যা কাউকেই বঞ্চিত করা উচিত নয়। ইউনিসেফ এবং তার সহযোগীরা জীবন রক্ষাকারী ত্রাণ সরবরাহের জন্য কাজ করছে, কিন্তু কেবলমাত্র একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং অবাধ প্রবেশাধিকারই সত্যিকার অর্থে জীবন বাঁচাতে পারে।”
আল-জাজিরা জানিয়েছে, মানবিক ত্রাণের উপর ইসরায়েলের সম্পূর্ণ অবরোধের কারণে খাদ্য, পানীয় জল এবং রান্নার গ্যাসের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অদৃশ্য হয়ে গেছে গাজায়। এরফলে গাজার জীবন রক্ষাকারী দাতব্য সংস্থাগুলো তাদের পরিষেবা বন্ধ করে দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পহেলা মার্চ ইসরায়েল ও হামাসের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হয়। এর আগেই গাজা অবরুদ্ধ করে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ রপ্তানি করবে না চীন
দিন যাচ্ছে আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের নতুন নতুন ফ্রন্ট খোলা হচ্ছে। শুল্কযুদ্ধের নতুন পদক্ষেপ হিসেবে চীন দুর্লভ খনিজ, প্রাকৃতিক চুম্বক (ম্যাগনেট) সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করবে না তারা।
চীনের এই পদক্ষেপের কারণে বিরল ধাতু, মৌল ও চুম্বকের সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা লাগবে—এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে গাড়ি, অ্যারোস্পেস, সেমিকন্ডাক্টর ও সামরিক শিল্প বড় সমস্যায় পড়তে পারে। চীনের এই সিদ্ধান্তে কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্য দেশগুলোও সমস্যায় পড়তে পারে।
প্রতিবেদনে জানা যায়, চুম্বকসহ বিরল মৌলের রপ্তানি বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর জেরে প্রচুর মৌল জাহাজীকরণের অপেক্ষায় বন্দরে পড়ে আছে। বিশেষ অনুমতি ছাড়া চীন থেকে এ ধরনের পণ্য রপ্তানি করা যাবে না। বেইজিংয়ের এ সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র বিপদে পড়বে বলেই আশঙ্কা। সামারিয়াম, ডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, লিউটেনিয়াম, স্ক্যানডিয়াম, ইট্রিয়ামমের মতো প্রায় ১৭টি বিরল মৌলের অভাবে আমেরিকার প্রতিরক্ষাশিল্প বড় সংকটে পড়তে পারে।
বিষয়টি হলো গাড়ি থেকে ড্রোন, রোবট থেকে মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র—এই সবকিছুর অ্যাসেম্বলিং বা সংযোজনের জন্য শক্তিশালী চুম্বক খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক মোটর তৈরিতে এই চুম্বকের প্রয়োজন হয়। ওই সব মোটর ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল, ড্রোন, রোবট, মিসাইল, স্পেসক্রাফ্ট তৈরির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু ক্রিটিক্যাল কাজে চুম্বকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি বিভিন্ন সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরিতে বিরল কিছু মৌলের দরকার পড়ে। সেগুলো খুবই দুর্লভ। বিশ্বের খুব কম দেশেই তা পাওয়া যায়। লাইট এমিটিং ডায়োড থেকে ক্যাপাসিটর, কম্পিউটার চিপ থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সার্ভার তৈরি—নানা কাজেই এসব মৌলের দরকার হয়। চীন এসবের সরবরাহ বন্ধ করলে বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা খাতের বিভিন্ন কাজও এর জেরে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিটিক্যাল মিনেরালস অ্যাডভাইজারি কমিটির চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল প্ল্যাকার্ড বলেছেন, চীন বিরল মৌল রপ্তানি বন্ধ করার যুক্তরাষ্ট্রে গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। দেশটির খনিশিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রথম সারির এক কোম্পানির বড় কর্মকর্তা বলেছেন, ড্রোন ও রোবোটিকস ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠবে। এসব যুদ্ধাস্ত্র তৈরির উপাদানের সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হলে চিন্তার কারণ আছে। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র এসব বিরল মৌল উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমির কাছে কিছু বিরল মৌলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আধুনিক প্রযুক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশ্নাতীতভাবে সারা বিশ্ব থেকে এগিয়ে। কিন্তু এসব মৌলের অভাবে এই জয়যাত্রাও স্তব্ধ হতে পারে। শুল্ক নিয়ে অনড় ট্রাম্পে কীভাবে এসব বিষয়ের মোকাবিলা করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
২ এপ্রিল ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের ঘোষণার দিন থেকেই হাজারো সমস্যার সূত্রপাত। ২ এপ্রিলের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়াতে বাড়াতে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। জবাবে চীনও পাল্টা ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর চীন ছয়টি অতি বিরল মৌলের রপ্তানি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। এসব মৌলের রপ্তানি নিয়ে নতুন নীতি প্রণয়ন করবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এসব বিরল মৌলের ৯০ শতাংশই চীনে উৎপাদিত হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এ ক্ষেত্রে চীনের ওপর নির্ভরশীল।