সাবেক স্ত্রী সীমার সঙ্গে প্রেম করায় তাজকিরকে হত্যা করেন অভি: পুলিশ
Published: 17th, March 2025 GMT
সাবেক স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার সীমার সঙ্গে প্রেম করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ইসমাইল হোসেন অভি ও তার বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাজকীর আহম্মেদকে হত্যা করেন। সীমার মোবাইল থেকে অভি ম্যাসেজ দিয়ে তাজকীরকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে খুলনায় ডেকে আনে। পরে অভি ও তার তিন বন্ধু মিলে তাজকীরের হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে ও গলায় রশি দিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন। পরে মরদেহ বস্তায় ভরে ভৈরব নদীতে ফেলে দেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভৈরব নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সীমাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও অভি পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আজ সোমবার দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডেপুটি কমিশনার এম এম শাকিলুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি আসিফ মাহমুদ নামে এক যুবক খালিশপুর থানায় তার ফুফাতো ভাই তাজকীরের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে একটি জিডি করেন। তাজকীর রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে যে, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে সীমার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে তাজকীর তার চাচাতো ভাই রনির শ্যালিকা সীমার সঙ্গে দেখা করার জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে খুলনায় আসেন। তাজকীর খালিশপুর থানার গোয়ালখালি এলাকায় আসিফ মাহমুদের বাড়িতে এক ঘণ্টা অবস্থান করেন।
এরপর তাজকীর খালিশপুর নিউজপ্রিন্ট মিল এলাকায় প্রেমিকা সীমার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় তার বাবা মুরাদ হোসেন বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় ২৫ ফেব্রুয়ারি অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ ওই দিন সীমা, অভির মা লাবণী বেগম ও শহিদুল ইসলাম সাহিদ নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খানজাহান আলী থানার ভৈরব নদীর বালুর মাঠ ঘাট থেকে বস্তাবন্দী একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাজকীরের পরিবারের সদস্যরা মরদেহের পরনে থাকা পোশাক দেখে শনাক্ত করেন।
ডেপুটি কমিশনার জানান, ৩ বছর আগে পরিবারের অমতে সীমার সঙ্গে ইসমাইল হোসেন অভির বিয়ে হয়। পরবর্তীতে তাদের ডিভোর্স হয় এবং অভি দেশের বাইরে চলে যান। এ সময় তাজকীরের সঙ্গে সীমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ডিভোর্সের ৭-৮ মাস পর অভি দেশে ফিরে এসে সাবেক স্ত্রী সীমার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এবং তাদের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক তৈরি হয়।
এ সময় ত্রিভুজ প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়, যা একমাত্র সীমা জানতো। সীমা একই সঙ্গে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দুই প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, যাতে কেউই বিষয়টি বুঝতে না পারে। অভি আর সীমার নতুন করে সম্পর্কের বিষয়টি তাদের উভয় পরিবারের লোকজন জানলেও তাজকীরের সঙ্গে প্রেমের বিষয়টি অপ্রকাশ্যে থেকে যায়।
কিন্তু ঘটনা পরিক্রমায় সীমার সঙ্গে তাজকীরের প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনে যান অভি। এটা নিয়ে সীমা এবং অভির মধ্যে ঝগড়া হতে থাকে। অভি তাজকীরকে শায়েস্তা করার ফন্দি আঁটেন। এবং সীমার ব্যবহৃত গোপন মোবাইল ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাজকীরকে খুলনায় আসতে বলেন।
তাজকীর খুলনা এলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভি তার বন্ধুদের সহায়তায় তাকে অপহরণ করে নিজ বাসায় নিয়ে যান। অভিসহ চারজন মিলে তাজকীরকে হত্যা করেন। এরপর তারা ডাকবাংলো এলাকা থেকে ১০০ টাকা দিয়ে বস্তা কিনে লাশ তাতে ভরে ইজিবাইকে করে ভোর রাতে হার্ডবোর্ড খেয়া ঘাটে নিয়ে যান। সেখান থেকে আগেই ভাড়া করে রাখা ট্রলারযোগে দৌলতপুর যাওয়ার দিকে নদীর মাঝখানে নিয়ে লাশ ফেলে দেন।
এর আগে গ্রেপ্তার সীমা, লাবণী ও সাহিদ কারাগারে রয়েছেন। সাহিদ হত্যার পর লাশ বহনের কাজে ব্যবহার করা ইজিবাইকচালক। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত অভি’র বন্ধু মশিউর রহমান জিতু ও রিয়াদ কাজীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মূল আসামি ইসমাইল হোসেন অভিকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।
ডেপুটি কমিশনার বলেন, তাজকীর হত্যার নৃশংসতা যেন সিনেমাকেও হার মানিয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
লিভারপুলকে হারিয়ে নিউক্যাসলের ৭০ বছরের আক্ষেপ ফুরাল
ইংল্যান্ডের প্রতিটা শহরেই একের অধিক ক্লাব আছে। তবে নিউক্যাসলই একমাত্র শহর যেখানে কেবল একটি ক্লাব। এই ক্লাবের ফুটবলাদের ভালোবেসে সমর্থকরা ‘টুন আর্মি’ ডাকে। সেই টুন আর্মিরা সবশেষ ৭০ বছর জেতেনি কোন ঘরোয়া শিরোপা। ২০২১ সালের আগস্টে সৌদি মালিকানার অধীনে ক্লাবটি গেলে, শিরোপা জেতাটা সময়ের ব্যাপার ছিল। তবে এরপরও সাড়ে তিন বছর লাগল। তবে এসবে সমর্থকদের থোড়াই কেয়ার। অবশেষে ইংল্যান্ডে কোন উল্লেখযোগ্য শিরোপা জিতল দলটি।
সুপার সানডেতে (১৬ মার্চ, ২০২৫) লিগ কাপের ফাইনালে লিভারপুলের মুখোমুখি হয়েছিল নিউক্যাসল। যেখানে ২-১ ব্যবধানে অল রেডদের হারিয়ে ১৯৫৫ সালের পর আবারও কোন ঘরোয়া আসরের শিরোপা উঁচিয়ে ধরল ম্যাগপাইরা।
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে দর্শকরা মাঠে ঢুকার মুহূর্তে স্কাই স্পোর্টস এক প্রবীন নিউক্যাসল সমর্থকের সাক্ষৎকার নিয়েছিল। সেখানে তাকে কেমন অনূভব করছেন জিজ্ঞেস করলে, তিনি আবেগী উত্তর দেন, “নার্ভাস...”। সাংবাদিক এবার বলেন, আপনাকে তো খুবই আবেগী মনে হচ্ছে! এর উত্তরে সেই সমর্থক বলেন, “৬০ বছর ধরে সমর্থন করছি, নিউক্যাসল আমার রক্তে।” এরপর চিরাচরিত নিয়মে সাংবাদিক জনপ্রিয় কথাগুলো আদায় করতে প্রশ্ন করলেন, আপনার কি মনে হয় ৭০ বছরের আক্ষেপ এবার ফুরোতে যাচ্ছে? সমর্থকের উত্তর দিলেন অনেক গভীরভাবে, “শিরোপা জয়ের ব্যাপরটা আমি গায়েই মাখাচ্ছি না, আমি শুধু জানি একটা ‘নবযুগের’ শুরু হতে যাচ্ছে।”
আরো পড়ুন:
অ্যানফিল্ডে রূপকথার গল্প লিখল পিএসজি
অ্যানফিল্ডে জাদু দেখানোর অপেক্ষায় পিএসজি
সমর্থকরা ধরে নিয়েই এসেছে যে, লিভারপুলের কাছে তারা হারতেই পারে, তবে থেমে থাকা যাবে না। শিরোপা জিতুক বা হারুক, তাদের সমর্থন আজীবনই থাকবে। এটাই আসলে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে সুপার ফর্মে থাকা লিভারপুলের সাথে নিউক্যাসলের।
১৯৫৫ সালে এফএ কাপ জেতার পর নিউক্যাসল আরেকটা শিরোপা জিতেছে বটে, তবে সেটা ইউরোপে। ১৯৬৯ সালে ফেয়ার্স কাপ জিতেছিল ম্যাগপাইরা। যা বর্তমানে ইউরোপা লিগ। এরপর আরও ৫ বার ঘরোয়া টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠে, যার ৩টি এফএ কাপ ও ২টি লিগ কাপ। সবশেষ ২০২২/২৩ মৌসুমে একই প্রতিযোগিতায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে হেরে রানার্স আপ হয়েছিল তারা।
অন্যদিকে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয়ের পথে এগিয়ে যাওয়া লিভারপুল মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে বিধ্বস্ত। হেক্স ( একই মৌসুমে ৬ শিরোপা) জেতার মৌসুমে গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ, ২০২৫) দিবাগত রাতে তারা পিএসজির বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেয়। এরপর গতরাতে লিগা কাপ খোয়ালো আর্নে স্লটের দল।
৬৫ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখেও গোলের জন্য লিভারপুল নিতে পারে কেবল সাতটি শট, এর দুটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে নিউক্যাসলের ১৭ শটের ছয়টি ছিল লক্ষ্যে। ড্যান বার্নের ৪৫ মিনিটের গোলে প্রথমার্ধ শেষ করে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে। বিরতির পর ৫২ মিনিটে আলেক্সান্ডার ইসাকের গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে দলটি।
আট মিনিট যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে নিউক্যাসলের জালে বল পাঠান ফ্রেদরিক চিয়েসা। শুরুতে অফসাইড দিলেও ভিএআরের সাহায্যে গোলের বাঁশি বাজান রেফারি। তাতে জেগে ওঠে লিভারপুলের আশা। তবে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার বাকি সময়টায় গোলের আর তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি অল রেডরা।
তাতেই শেষ হয় নিউক্যাসলের ৫৬ বছরের আক্ষেপ। ওয়েম্বলিতে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী ছিল নিউক্যাসলের তিন প্রজন্ম। যারা প্রিয় ম্যাগপাইদের ঘরোয়া শিরোপা জিততে দেখেনি। নিউ ক্যাসলের হয়ে প্রথম গোল করা ড্যান বার্ন তো বলেই ফেললেন, “আমি আজ ঘুমাবো না, কারণ আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্নে আছি।” টুনেও (নিউক্যাসল) কাল রাতে হয়ত কেউ ঘুমাতে পারেনি। তাদের মধুর স্বপ্ন যে চলছেই। সারা পৃথিবীতে আকাশ তার জাগাতে থাকলেও, উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের নিউক্যাসলে গতরাতের আকাশ নেমে এসেছিল মাটির কাছেই।
ঢাকা/নাভিদ