বন্দরে আরও বিএনপি নেতার গাড়ি চালকসহ ২ জনকে গনপিটুনি
Published: 17th, March 2025 GMT
বন্দরে গার্মেন্টসে ডাকাতির ঘটনায় বিএনপি নেতা হিরণের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক গ্রেপ্তারের পর এবার ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির গাড়ি চালকসহ ২ জনকে গনপিটুনি দিয়েছে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। গত রোববার (১৬ মার্চ) রাতে বন্দর উপজেলার ইস্পাহানী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ওই সময় ছিনতাই, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অটো ভর্তি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে । গনপিটুনি শিকার দুই ডাকাতের নাম মামুন (২৩) ও সাব্বির (২২)। তারা দুইজনই ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদ খন্দকারের গাড়ি চালক ও সহযোগী। তারা কামতাল গ্রামের বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত রোববার রাত পৌনে ৮ টার দিকে ইস্পাহানি এলাকায় রাস্তার পাশে অস্ত্র বহনকারি এক অটো চালকের সঙ্গে ডাকাত মামুন ও সাব্বির সহ ১০/১২ জনের বাকবিতন্ডা চলছিল। এসময় বাজারের লোকজন ও পথচারিরা এগিয়ে এসে দেখেন অটোতে বস্তার মধ্যে রক্ষিত ডাকাতি কাজে বয়বহৃত ধারালো রাম দা, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি, ছুরি সুইচ গিয়ার ।
পরবর্তীতে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অন্যান্যরা কৌশলে ছিটকে পড়লেও মামুন ও সাব্বিরকে গনপিটুনি দিয়ে স্থানীয় যুবদল নেতা ওয়াদুদ সাগরের কাছে সোপর্দ করেন।
এর আগে দেওয়ানবাগ এলাকায় গার্মেন্টসে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকায় গত শনিবার উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণের গাড়ি চালক মাহবুব আলম শিশিরকে ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আটো চালক সবুজ জানায়, কামতাল গ্রাম থেকে একটি বস্তা ইস্পাহানি বাজার নিয়ে যাবে বলে জাহিদ খন্দকার ভাড়া করে আনেন। মদনপুর পৌঁছালে জাহিদ খন্দকার নেমে পড়েন। ইস্পাহানি পৌঁছানোপর মামুন ও সাব্বির অটো থামিয়ে রাখতে বলেন।
এসময় তাদের কথাবার্তা ও চলাফেরায় সন্দেহ সৃস্টি হয়। ওই সময় অপর এক অটো চালককে বিষয়টি অবগত করলে মামুন ও সাব্বির ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে জনগন ভুল বুঝে প্রথমে আমাকে মারধর শুরু করে। পরে বিস্তারিত জানার পর মামুন ও সাব্বিরকে গনপিটুনি দেয় এবং বস্তা ভর্তি অস্ত্র নিয়ে যায়।
কামতাল গ্রামবাসী জানান, আন্তঃজেলার একজন চিহ্নিত সিএনজি চোর জাহিদ খন্দকার। চোরাই সিএনজি সহ কুমিল্লা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে থাকতো জাহিদ।
৫ আগস্টের পর জাহিদ খন্দকার বনে গেছে ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। এ পরিচয়ে কাগজপত্র বিহীন একটি পুরাতন প্রাইভেটকারে চলাচল করে জাহিদ। পাশাপাশি এ গাড়ি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক পাচার ও ছিনতাই, ডাকাতি সহ নানা অপকর্ম।
গত রোববার রাতে ইস্পাহানি বাজার এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে জাহিদ খন্দকারের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক মামুন ও সহযোগী সাব্বিরকে গনপিটুনি দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
এ ব্যাপারে জাহিদ খন্দকার জানান, মামুন ও সাব্বির ভুল করেছে। ভবিষ্যতে এ ধরণের ভুল করবে না বলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল নেতা ওয়াদুদ সাগর ভাই তাদের মাফ করে দিয়েছেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
বাবাকে হাত-পা বেঁধে মাথায় গরম পানি ঢালার অভিযোগ সন্তানদের বিরুদ্ধে
লাকসামে বাবার সম্পত্তি সন্তানদের নামে লিখে না দেওয়ার জন্য বাবাকে হাত-পা বেঁধে গরম পানি মাথায় ঢেলে দিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে সন্তানদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুরে লাকসাম পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের গোপালপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার এ ঘটনার ১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, গোপালপুর গ্রামের বাড়ির উঠানে বৃদ্ধ বাবার হাত ধরে করছে টানাহেঁচড়া করছেন তার সন্তানরা। এসময় তারা বাবার গায়ের গেঞ্জিটাও টানতে টানতে ছিঁড়ে ফেলেন। বাবাকে টেনেহিঁচড়ে জবরদস্তি করে তাকে হাত পা বাঁধা হয়, এরপর গরম পানি বাবার মাথা ও মুখে ঢালেন তারই সন্তানেরা। এসময় ওই বৃদ্ধ বাবার আত্নচিৎকার করে বলেন ‘ও আল্লাহ রে, ও আল্লাহ, ও মা গো মা, ও ভাইরে ভাই, ও জসিমের মারে..., জসিমের মা আমারে বাঁচান, কে কোথায় আছেন- আমাকে বাঁচান, আমাকে মাইরা ফেলছে তারা...’। ওই নির্যাতন দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা বৃদ্ধকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ওই বাবার নাম আবদুল জলিল (৬০)। আর নির্যাতনকারীরা তার ছেলে, মেয়ে ও তার স্ত্রী। তারা হলেন- ছেলে শান্ত (২৮), নোমান (২০), রকি (১৬), মেয়ে নাজমিন (২৬), নুপুর (১৩) ও জলিলের স্ত্রী রিনা আক্তার (৪৫)।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী আবদুল জলিল বাদী হয়ে সন্তান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, গোপালপুর গ্রামের মৃত হাজী ওয়ালীউল্লার ছেলে আবদুল জলিলের নামে বসতবাড়ি ও মাঠে ১২০ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে। জলিলের স্ত্রীসহ তিন ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে শান্ত প্রবাসে থাকেন, সে প্রবাস থেকে ওই সম্পত্তি তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় আবদুল জলিলকে হুমকি দেয় এবং বাড়িতে থাকা জলিলের অন্য সন্তানরা তাকে মারধর করেন। এছাড়া বাবাকে ভরণপোষণও দিচ্ছিলেন না তারা। এ নিয়েই সন্তান ও স্ত্রী সঙ্গে জলিলের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় অনেক বার সামজিকভাবে শালিসও হয়েছে।
প্রতিবেশিরা বলছেন, বৃহস্পতিবার জলিলের সঙ্গে তার স্ত্রী-সন্তানদের কথা-কাটাকাটি হয়। এসময় জলিল ঘরের দরজা জানালা ভাঙচুরের চেষ্টা চালাতে গেলে তার ছেলে মেয়েরা বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এ কাণ্ড চালায়।
নির্যাতনের শিকার আবদুল জলিল জানান, অনেক দিন ধরে আমার সন্তানরা সম্পত্তি নেওয়ার জন্য আমাকে বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিচ্ছে। আমার স্ত্রী রিনা আক্তার এর প্রতিবাদও করে না। আমাকে তারা ভরণপোষণও দেয় না। ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে ঝামেলা করে। ওই দিন আমার সন্তানরা বাড়ির উঠানের মধ্যে আমাকে হাত-পা বেঁধে অনেক মেরেছে। হাত-পায়ে শরীরে এখনও দাগ আছে।
লাকসাম থানার ওসি নাজনীন সুলতানা শুক্রবার রাতে সমকালকে বলেন, নির্যাতনের ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। পারিবারিক কলহ থেকে এ ঘটনা। এ ঘটনায় নির্যাতিত আবদুল জলিল থানায় স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তবে পারিবারিক শান্তি বজায় রাখতে অভিযোগটি আবার প্রত্যাহার করেছেন।
ওসি বলেন, এলাকায় বিষয়টি সামাজিকভাবে বিরোধ নিরসন ছাড়াও পরিবার নিয়ে থানায় এসেছেন। স্ত্রী ও সন্তানরাও বিষয়টি নিয়ে অনুতপ্ত।