পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর অব্যাহতির প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা।

সোমবার (১৭ মার্চ) আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর ভবনে প্রাক বাজেট আলোচনায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন স্টেকহোল্ডাররা। বাজেট আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো.

আবদুর রহমান খান।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরে জানান, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর সম্পূর্ণ কর অব্যাহতি চায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কাছ থেকে উৎস কর সংগ্রহের হার হ্রাস, উৎস লভ্যাংশ আয়ের উপর কর হ্রাস এবং চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসাবে বিবেচনা করা, তালিকাভুক্ত বন্ড থেকে অর্জিত আয় বা সুদের উপর কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের বাজেট প্রস্তাবনায় লভ্যাংশ করের উপর দ্বৈত করের বিধান প্রত্যাহার করে লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত করা, তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রদেয় কর হারের ব্যবধান কোনো ধরনের শর্ত ছাড়া ১০ শতাংশ করা, নির্ধারিত বার্ষিক মোট নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগে সীমা ৩৬ লাখ টাকার স্থলে মোট ব্যবসায়িক টার্নওভারের ১০ শতাংশ করা, এসএমই ও এটিবি-এ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে তালিকাভুক্তির প্রথম তিন বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেওয়া, করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্পোরেট কর হার ২৫ শতাংশ করা, বিনিয়োগের লভ্যাংশের উপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাটের হার হ্রাস করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

এছাড়া ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল গেইনের উপর কর হার ১৫ শতাংশের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) ভ্যাট সফটওয়্যারের বাস্তবায়ন, ঋণ অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্টের উপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার, মূসক নিরীক্ষা কার্যক্রম সমাপ্তির সময় সুনির্দিষ্ট করার প্রস্তাব দিয়েছে।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি সাঈদ আহমেদ বিমা খাতের জন্য কর্পোরেট কর হ্রাস করা, স্বাস্থ্য বিমার উপর ট্যাক্স কর্তন রহিত করা, অনলাইনভিত্তিক বিমা প্রিমিয়ামের উপর ভ্যাট ও করপোরেট কর রহিত করার প্রস্তাব দিয়েছে।

পুঁজিবাজারে কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘‘পুঁজিবাজারে যত সুবিধা দেওয়া হয়েছে, মার্কেটে তার বেনিফিট পাওয়া যায়নি। গত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে তাদের ৭ থেকে ১৫ শতাংশ ক্যাপিটাল হারিয়েছে। আমরা অব্যাহতি সংস্কৃতি থেকে বের হচ্ছি। আমরা পণ করেছি অব্যাহতি আর দেব না। অব্যাহতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি।’’

এনবিআর চেয়ারম্যান বিমা খাত সম্পর্কে বলেন, ‘‘শুধু হেলথ ইন্স্যুরেন্স ভালোভাবে দিতে পারলে বাংলাদেশের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে। বিমা খাতের সুনামের অভাব আছে। এ খাতে গভর্নেন্সের (সুশাসন) জি-ও নাই।’’ 
 

এনএফ//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর হ র র উপর

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থবছরের আট মাসে ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। অর্থবছরের আট মাস বিবেচনায় এটি গত ১২ বছরের মধ্যে এডিপির সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন হার।

সোমবার (১৭ মার্চ) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।

এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাস ২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকার। এটি অর্থবছরের মোট এডিপি বরাদ্দের মাত্র ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর প্রথম আট মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেয়। এতে করে আগের সরকারের নেওয়া অনেক প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে চলমান অনেক প্রকল্পের কাজও স্থগিত হয়ে যায়। এসব মিলিয়ে এডিপির বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় কমে যায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বাস্তবায়ন হার ছিল ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে এ বাস্তবায়ন হার ছিল ৩৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। এমনকি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে দেশে কোভিড অতিমারির প্রভাব থাকা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের তুলনায় বেশি হারে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল।

ওই অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক ঋণ বা প্রকল্প সাহায্য এক লাখ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৩ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা।

বাস্তবায়নের হার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সরকারি অর্থায়ন অংশে বাস্তবায়ন হার সবচেয়ে কম। এক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয়েছে ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ বা ৩৪ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। এটি প্রথম আট মাসের গড় বাস্তবায়নের চেয়ে কম। বৈদেশিক সহায়তা অংশে বাস্তবায়িত হয়েছে ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ বা ২৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। আর সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন অংশে বাস্তবায়িত হয়েছে ৩৯ দশমিক ৩১ শতাংশ বা পাঁচ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে আট মাসে সংস্থাটি বাস্তবায়ন করেছে মাত্র ২০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এটি মোট বরাদ্দের মাত্র শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ। বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়। ১.২৫ কোটি টাকার বরাদ্দের বিপরীতে আট মাসে সংস্থাটি বাস্তবায়ন করেছে ০.০৩ কোটি টাকা। এটি মোট বরাদ্দের মাত্র ২ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। তারা ৭৫৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ২৮ কোটি ০৩ লাখ টাকা। এটি মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এ ছাড়া এডিপি বাস্তবায়ন হারে পিছিয়ে থাকা মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ৫.৪৮ শতাংশ, ভূমি মন্ত্রণালয় ৬.৪১ শতাংশ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৬.৭৭ শতাংশ।

এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে থাকার তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৬৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রথম আট মাসে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ৩,৭৬২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। বাস্তবায়ন হারে পরের অবস্থানে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ১২ কোটি ৮ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭৮ দশমিক ০৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাস্তবায়নের হার ৭২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর চতুর্থ অবস্থানে থাকা বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের বাস্তবায়ন হার ৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আট মাসে এডিপির বাস্তবায়ন ২৪%
  • অনলাইন: ১৫ দিনে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৬ কোটি ডলার
  • অর্থবছরের আট মাসে ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন
  • অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে জোর দিতে হবে
  • করমুক্ত আয়ের সীমা হোক ৪ লাখ টাকা
  • বাজেটে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ সিপিডির
  • করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব সিপিডি’র
  • করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ সিপিডি’র
  • পাঁচ লাখ টাকার মূলধনেই খোলা যাবে এক ব্যক্তির কোম্পানি