নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মানববন্ধন করা হয়েছে।

সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

বিভাগের শিক্ষার্থী মৌমিতুর রহমান পিয়াল বলেন, “যখন বিশ্ব এগিয়ে চলছে, তখন দেশে নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা আমাদের কষ্ট দেয়। এসব ঘটনা প্রতিরোধে সরকার এবং প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। আমরা দাবি জানাচ্ছি অতি দ্রুত সময়ে ট্রাইবুনাল গঠন করে নারী ও শিশুর প্রতি সব সহিংসতার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”

আরো পড়ুন:

আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে ঢাবিতে এক দিনের ছুটি ঘোষণা

ঢাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল

বিভাগের শিক্ষাক রেজাউল করিম সোহাগ বলেন, “আমরা যদি সামনে এগোতে চাই এবং অনেক বেশি উন্নয়ন চাই, তাহলে নারীদের সঙ্গে লাগবে। কিন্তু আমরা যদি তাদের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিতে না পারি, তাহলে আসল উন্নয়নটা হবে না। এ দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নিপিড়ন আগেও ছিল, এখনো আরো বাড়ছে। আমরা কোনো ঘটনার প্রকৃত ঘটনা বের করার আগেই ব্লেম দেওয়া শুরু করি। এগুলো থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।”

তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব সুষ্ঠুভাবে বিচার নিশ্চিত করে আমাদের দেখতে হবে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী আইন তৈরি করতে হবে। আমরা কত দ্রুত সঙ্গে বিচার নিশ্চিত করতে পারছি, সেটা নারী নিপিড়ন কমাতে সহায়তা করে। অনেক অপরাধী রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বের হয়ে আসে। এদের কারা আশ্রয় দিচ্ছে, সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। আইন প্রণয়ন করে তা প্রয়োগ করতে না পারলে অপরাধ কখনো কমবে না।

বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক শাহরিয়া আফরিন বলেন, “আছিয়া আমাদের মাঝে আর নেই। আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। স্বামীর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। আমরা এসব বিষয় দেখে খুবই আতঙ্কিত। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। কিন্তু আমরা কতটা সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারছি? এটা নিয়ে আমাদের চিন্তা ভাবনা করা দরকার।”

তিনি বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়া এখন বড় একটা প্ল্যাটফর্ম। এগুলোতে ধর্ষণ নিয়ে ক্রমাগত প্রচার করা হচ্ছে। যারা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বক্তব্য দেন তারা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে বক্তব্য দেন। সরকার যদি নারী নিপিড়ন এবং ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার করতে পারত, তাহলে যারা এ কাজগুলো করছে তারা ভয়ে তা করতে পারত না। আমরা ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে চাই। যে অপরাধ ঘটবে, সেটাই আমাকে বলতে হবে এবং এর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যেকোনো ধরনের হয়রানির বিপক্ষে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স।”

তিনি আরও বলেন, “শুধু নারী নয়, শিশুদের সংখ্যাও অসংখ্য, যারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এমনকি মাদ্রাসার মেয়ে এবং ছেলে শিক্ষার্থীরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। আমরা মনে করি, এসব ঘটনার দ্রত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এমন বিচার করতে হবে, যাতে এ ধরনের অপরাধ করার আগে আমাদের মাথায় শাস্তির বিষয়টা আসে।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব চ র ন শ চ ত কর ন শ চ ত করত আম দ র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএমপি কমিশনার বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন: ইফতেখারুজ্জামান

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএম‌পি) ক‌মিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধের মাধ্যমে বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি মনে করেন, বিষয়টি কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাঁর (ডিএম‌পি ক‌মিশনার) এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা উচিত, প্রত্যাহার করা উচিত।

‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন, এখনই!’ শীর্ষক মানববন্ধনে ইফতেখারুজ্জামান এ কথা বলেন। আজ রোববার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে টিআইবি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানের ওপর সবচেয়ে বেশি নিশ্চিত করা বা নারীর অধিকার হরণের প্রতিরোধ করার দায়িত্ব, সেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তথা পুলিশ; পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখন বলেন ধর্ষণ শব্দটা ব্যবহার না করার জন্য; গণমাধ্যম—আপনাদেরকে যখন অনুরোধ করে তখন আমাদের অবাক হতে হয়। তাঁদের এই অবস্থানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে হয়। কারণ, এর মাধ্যমে তিনি যেটা করছেন, ডিএমপি কমিশনার বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন। ধর্ষকের সুরক্ষা দেওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। কোনো অবস্থায় এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাঁর এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা উচিত, প্রত্যাহার করা উচিত।’

গতকাল শনিবার এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে ডিএম‌পি ক‌মিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি দুটি শব্দ খুব অপছন্দ করি, এর মধ্যে একটি হলো ধর্ষণ। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা “নারী নির্যাতন” বা “নিপীড়ন” বলবেন। আমাদের আইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন বলা হয়েছে। যে শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে, সেগুলো আমরা না বলি।’

আজকের মানববন্ধনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকে, তাদের আচরণে, কথায়-বার্তায়, চর্চায় কিন্তু আমরা নারীবান্ধব অবস্থা দেখতে পাই না। খুবই দুঃখজনক বিষয়।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন সেখানে চর্চার কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেন

ইফতেখারুজ্জামান। গণমাধ্যমকর্মীদের ডিএমপি কমিশনারের কথা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান ইফতেখারুজ্জামান। ধর্ষণ যখন ঘটবে অত্যন্ত জোরালোভাবে আরও সেটিকে প্রচার করার আহ্বান জানান তিনি। যাতে এ বিষয় মানুষের নজরে আসে।

খুনিকে চোর বলতে পারবেন না উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশকে তো আমি আনসার বলতে পারব না। পুলিশ পুলিশই। পুলিশ যেভাবে কলঙ্কিত করেছে নিজেদের, সে কারণে কী মানুষ বলেছে “পুলিশ” শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না? সেই পুলিশ কীভাবে ধর্ষণ শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না—এ ধরনের মন্তব্য রাখতে পারে। সেটি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।’

এ সময় অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদাসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।

মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের সহকারী সমন্বয়ক সাইমুম মৌসুমী। এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে সুহৃদ সমাবেশের মানববন্ধন
  • মেডিকেল কলেজ বন্ধের প্রতিবাদে অবরোধ
  • শিশুকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করেছেন হিটু শেখ
  • নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধ না করার দাবি চবি শিক্ষার্থীদের
  • বরগুনায় ধর্ষণ মামলার আসামি ও কিশোরীর বাবাকে হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • ঈদ বোনাসসহ সব বকেয়া পরিশোধের দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের মানববন্ধন
  • ডিএমপি কমিশনার বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন: ইফতেখারুজ্জামান
  • চাঁদাবাজির প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ বিক্ষোভ
  • কিশোরগঞ্জে নরসুন্দা নদীকে বাঁচানোর আকুতি