সরকারি জমি বিক্রি, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে খুলনার দিঘলিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হায়দার মোড়লের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

সোমবার (১৭ মার্চ) দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যদের আগামী ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ইউএনও মো.

আরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, গত ২ ফেব্রুয়ারি ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়লের অপসারণের দাবিতে খুলনার জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তার অপসারণের দাবিতে ইউনিয়নের এলাকাবাসী প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।  

আরো পড়ুন:

ওড়না ও নেকাব কাণ্ডের মধ্যে ঢাবিতে নতুন সিদ্ধান্ত

সাজেকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে তদন্ত কমিটি

ইউএনও’র কার্যালয়ের সূত্র জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার মোড়লের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কিশোর আহমেদকে। সদস্য সচিব উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সোহাগ হোসেন ও সদস্য করা হয়েছে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধাকে। 

ইউএনও মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।”

এলাকাবাসী ইউপি চেয়ারম্যানের অপসরণ চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন। এতে উল্লেখ করা হয়, দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. হায়দার আলী মোড়লের বিরুদ্ধে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জমির পজিশন বিক্রি করে মোটা অঙের অর্থ আদায়, আশ্রায়ণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাত, টিআর-কাবিটা প্রকল্পের কাজে নয়-ছয় করে অর্থ আত্মসাত, গভীর নলকূপের বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এলজি এসপি প্রকল্প, হাট বাজার, উন্নয়ন তহবিল, উপজেলা পরিষদের বরাদ্দ ও কর্মসৃজন প্রকল্পসহ সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে টিআর-কাবিটা প্রকল্পে পুরাতন ইট ব্যবহার করে ও ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে কাজ জোড়া-তালি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

তিনি শেখ পরিবারের কাছ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন দিয়ে বহু ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ তার দোসররা দেশ ছেড়ে পালালেও আওয়ামী লীগের দোসর আলোচিত এই ইউপি চেয়ারম্যান এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত প রকল প উপজ ল সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন ‘গোশালা’

আশপাশের দু-তিন কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামের শিক্ষার আলো ছড়াতে ২৭ বছর আগে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হলেও সেটি এখন গোশালায় রূপ নিয়েছে। জাতীয়করণ না হওয়া, বেতন–ভাতা না পাওয়া ও শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে মামলার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যালয়টি। গ্রামের একমাত্র বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকায় দূরের পাঠশালায় যাচ্ছে শিশুরা।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের কাহেদগ্রামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ওই অবস্থায় ১৯৯৮ সালের ৩ এপ্রিল স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুল হক একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ ইউনিট বরাবর ৩৩ শতাংশ জমি দেন। বিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় কাহেদগ্রাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সিরাক বাংলাদেশ নামে একটি এনজিওর পরিচালনায় সরকারি অর্থায়নে সেখানে ৫ লাখ টাকা অনুদানে ৫ কক্ষবিশিষ্ট একটি আধা পাকা স্কুল ভবন হয়। ১৯৯৯ সালে বিদ্যালয়টির পাঠ কার্যক্রম শুরু হয়। তবে শিক্ষকেরা বেতন না পাওয়ায় কয়েক দফায় বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়।

৯ মার্চ বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, দরজা–জানালা ভাঙা। সামনে বারান্দাও ভেঙে পড়েছে। সামনে কয়েকটি গরু। শ্রেণিকক্ষগুলোয় গরুর জন্য খড় রাখা। বিদ্যালয়টিকে এখন গোশালা হিসেবে ব্যবহার করছেন জমিদাতা পরিবারের সদস্যরা। কথা হয় জমিদাতার ভাতিজা মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এলাকার জন্য স্কুলটি খুব দরকার। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে জটিলতায় স্কুলটি এখন বন্ধ হয়ে গেছে। যেহেতু স্কুলের কার্যক্রম নেই, তাই ফেলে না রেখে গরু ও অন্যান্য জিনিস রাখা হয়।

চারজন শিক্ষকের স্থলে অতিরিক্ত শিক্ষক হয়ে যাওয়ায় আদালতে মামলার কারণে মূলত স্কুলটির জাতীয়করণ আটকে যায়। মো. আলী সিদ্দিক, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা

জমিদাতার ছেলে ও শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুলটি চালুর পর কয়েক দফা বন্ধ হয়। সর্বশেষ ২০১০ সাল থেকে পুরোদমে চালু হয়ে ২০১১ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা শুরু হয়। ২০১২ সালের দিকে বিদ্যালয়টির শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে মাকসুদুল হাসান নামের একজন শিক্ষক আদালতে একটি মামলা করেন। ২০১০ সালে মাকসুদুলের নিয়োগ হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শফিকুল ইসলাম ওরফে সুরুজকে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে বাদ দেওয়া হয় মাকসুদুলকে। এ নিয়ে মামলার কারণে জাতীয়করণ আটকে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা স্কুলটি চালিয়ে গেলেও বিনা বেতনে আর পারছিলাম না এবং জাতীয়করণেরও আশা দেখছিলাম না। ওই অবস্থায় স্কুলটির কার্যক্রম বন্ধ করে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছি।’ তিনি মনে করেন, একজন শিক্ষক নিয়ে জটিলতায় পুরো স্কুলটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। কর্তৃপক্ষ সদয় হলে স্কুলটি আবার চালু হতে পারে।

শিক্ষকদের সরবরাহ করা কাগজপত্রে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে সর্বশেষ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের সুপারিশ পাঠায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। সেখানে শাফিয়া বেগম, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. শফিকুল ইসলাম, শামীমা নাসরিন কর্মরত আছেন দেখিয়ে জাতীয়করণের সুপারিশ করেন বিভিন্ন প্রকৃতির বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণসংক্রান্ত উপজেলা যাচাই–বাছাই কমিটির সভাপতি তৎকালীণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। কিন্তু বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়নি।

কাগজপত্র দেখে বন্ধ স্কুলটি চালু করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।মো. এরশাদুল আহমেদ, ইউএনও, ঈশ্বরগঞ্জ

এ প্রসঙ্গে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা (বর্তমানে ধোবাউড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) মো. আলী সিদ্দিক বলেন, বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হওয়ার জন্য সব মানদণ্ড পূর্ণ করেছিল। কিন্তু এনজিওর মালিক চারজন শিক্ষক নিয়োগ দিলেও সেখানে আওয়ামী লীগের লোকজন আরও শিক্ষক নিয়োগ দেন। চারজন শিক্ষকের স্থলে অতিরিক্ত শিক্ষক হয়ে যাওয়ায় আদালতে মামলার কারণে মূলত স্কুলটির জাতীয়করণ আটকে যায়। স্কুলটি ২০১৬ সাল পর্যন্ত সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিলেও জাতীয়করণ হচ্ছে না দেখে পরে বন্ধ হয়ে যায়। এখনো যদি সব পক্ষ মিলে উদ্যোগ নেয়, তাহলে স্কুলটি আবার চালু হওয়ার সুযোগ আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য নাজমুল হক, স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস সাত্তার ও লুৎফুর রহমান বলেন, গ্রামটিতে কোনো স্কুল না থাকায় দূরের স্কুলে গিয়ে শিশুদের পড়ালেখা করতে হয়। অথচ গ্রামের স্কুলটি ভেঙে ভেঙে পড়ছে। এটি চালু করা গেলে গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে।

এনজিও সিরাকের প্রতিষ্ঠাতা আওরঙ্গজেব বেলাল বলেন, এই বিদ্যালয় ছাড়া আরও কয়েকটি বিদ্যালয় উপজেলাটিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যালয়টিতে যখন জাতীয়করণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তখন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রভাব খাটিয়ে মাকসুদুল হাসান নামের একজন শিক্ষককে বাদ দিয়ে শফিকুল ইসলাম ওরফে সুরুজ নামের একজনকে নিয়োগ দেখিয়ে জাতীয়করণের প্রস্তাব পাঠান। এ নিয়ে মামলার কারণে স্কুলটি জাতীয়করণ হয়নি।

বিষয়টি নজরে আনা হলে ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, কাগজপত্র দেখে বন্ধ স্কুলটি চালু করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গলাচিপার ইউএনওর নামে ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আলোচনা, ‘আইডি হ্যাক হয়েছে’ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন
  • বরগুনায় ওরস চলাকালে মাজারে আগুন-হামলা
  • ময়মনসিংহে গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন ‘গোশালা’
  • টিসিবির সাত হাজার স্মার্ট কার্ড বিতরণ হয়নি, পণ্য দেওয়া হচ্ছে ‘নেতাদের স্লিপে’
  • বিনা মূল্যে নৌকা না পেয়ে কর্মচারীকে মারধর করার অভিযোগ পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে
  • সরকারি গাছ কাটায় নীরব প্রশাসন