বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন: তুলসী গ্যাবার্ড
Published: 17th, March 2025 GMT
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন দেশটির গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড। বৈশ্বিক গোয়েন্দাপ্রধানদের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লি সফররত তুলসী গ্যাবার্ড আজ সোমবার এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে এ কথা বলেন। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে মন্তব্যে তিনি এই উদ্বেগের কথা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সারা বিশ্বে ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদের’ ওপর নজর দিচ্ছে এবং একে পরাজিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন তুলসী গ্যাবার্ড।
এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্ভাগ্যজনক নিপীড়ন, হত্যা ও অন্যান্য নির্যাতন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের উদ্বেগের একটি প্রধান ক্ষেত্র।’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তুলসী গ্যাবার্ড। বাংলাদেশে ‘ইসলামি চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদী উপাদানের’ উত্থান নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা মাত্র শুরু হচ্ছে; কিন্তু এটা উদ্বেগের প্রধান জায়গার একটি হয়ে রয়েছে।’
মন্তব্যে ‘ইসলামিক খিলাফতের’ আদর্শ নিয়েও কথা বলেছেন তুলসী গ্যাবার্ড। উগ্রপন্থী উপাদান ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বৈশ্বিকভাবে কেমন করে এ ধরনের একটি পরিস্থিতি তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে, তা নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হলো ইসলামপন্থী খিলাফতের মাধ্যমে শাসন করা। এতে অবশ্যই তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছাড়া অন্য যেকোনো ধর্মের মানুষের ওপর প্রভাব পড়ে। তাঁরা এটা সন্ত্রাস ও অন্যান্য সহিংস পন্থায় বাস্তবায়নের পথ বেছে নেয়।’
তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ধরনের আদর্শকে শনাক্ত ও পরাজিত করা এবং তিনি যেটাকে ‘কট্টর ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ’ বলেন, সেটিকে নির্মূল করার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ।
‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই আদর্শকে, যেটা ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ তৈরি করে, সেটিকে চিহ্নিত করা এবং এই আদর্শ ও তাঁদের মানুষের ওপর সন্ত্রাস চালানোর সক্ষমতাকে পরাজিত করতে কাজ করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’, বলেন তুলসী গ্যাবার্ড।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল মপন থ ন ত লস র ওপর আদর শ ইসল ম র একট
এছাড়াও পড়ুন:
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি নিয়ে বিএনপিপন্থি শিক্ষকের গবেষণা, অতঃপর...
নীলফামারীতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিজড়িত শেখ জামে মসজিদ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিএনপিপন্থি শিক্ষক শেখ এবিএম জাকির হোসেন।
তিনি আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় জিয়া পরিষদের সদস্য। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রাধ্যক্ষ কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
অভিযোগ উঠেছে, বিগত আওয়ামীপন্থি প্রশাসনের আস্থাভাজন হয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা পেতে অধ্যাপক জাকির এ গবেষণা শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেন বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা। এরপরেও তিনি গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পট পরিবর্তনের পর গবেষণা প্রকল্পটি বাতিলের আবেদন করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
ইবিতে ১৫ বছরের নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে কমিটি
ইবির ডি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু
তবে গবেষণা প্রকল্প বাতিলের বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন গবেষণা প্রকল্প মূল্যায়ন ও মনিটরিং কমিটির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক রেজওয়ানুল ইসলাম। এছাড়াও বিগত প্রশাসনের সময় তার আওয়ামী ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জিয়া পরিষদের কয়েকজন সদস্যও।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য গঠিত গবেষণা প্রকল্প মূল্যায়ন ও মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক ও জীববিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক রেজওয়ানুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা বাবদ তহবিল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিশেষ গবেষণা প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৮০টি গবেষণা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
এতে ধর্মতত্ত্ব ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদভুক্ত আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জাকির হোসেনের “নীলফামারীতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিজড়িত ‘শেখ জামে মসজিদ’: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ” শিরোনামে গবেষণা প্রকল্পটিও অনুমোদিত হয়। এই গবেষণা প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
গবেষণার প্রস্তাবনায় তিনি বঙ্গবন্ধুকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, প্রকৃত ধর্মভীরু ও মসজিদ-মাদরাসার প্রতি অনুরাগী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। ১৯৬৯ সালের ২৩ অক্টোবর আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের প্রচারে অংশ নিয়ে নীলফামারীতে আসার পথে নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কের পাশে চৌচালা খড়ের নতুন একটি মসজিদে তিনি জুমার নামাজ পড়েন। পরে মসজিদটির নামকরণ করা হয় ‘শেখ জামে মসজিদ’।
অধ্যাপক শেখ এ বি এম জাকির হোসেনের পিতা ওই মসজিদ কমিটির আজীবন সভাপতি ছিলেন। স্বাধীনতার পর মসজিদ কমিটির লোকজন শেখ মুজিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মসজিদ সংস্কারের জন্য ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন বলে প্রস্তাবনায় উল্লেখ আছে। এছাড়া প্রস্তাবনায় তিনি শেখ মুজিবের কন্যা পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনাকে তিনি ইসলাম ধর্মের খেদমতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণকারী ও দেশনেত্রী হিসেবে উল্লেখ করেন। তার এ গবেষণা নিয়ে জিয়া পরিষদে বিব্রতকর পরিস্থিতির ও চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক সদস্য।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন জিয়া পরিষদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকেও বিগত আওয়ামী প্রশাসনের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নিতে তিনি এই গবেষণা প্রকল্প হাতে নেন। বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়েন বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা। তাদের মাঝে সৃষ্টি হয় নানা সমালোচনার। এরপরেও আওয়ামী প্রশাসনের আনুকূল্য পেতে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যান তিনি।
এছাড়া নিজেকে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে ‘আধা আওয়ামীলীগ’ বলে বিভিন্ন জায়গায় সম্বোধন করতেন বলেও জানা যায়। তার বিরুদ্ধে হল প্রাধ্যক্ষ হিসেবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মোটা অংকের অর্থ সহায়তাসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান ও ছাত্রলীগের সুপারিশে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রাধ্যক্ষ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও ওঠে।
জুলাই আন্দোলনের প্রথম দিকে ছাত্রলীগের আস্থাভাজন হিসেবে কাজ করলেও একদম শেষ পর্যায়ে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সঙ্গে মাঠে আসেন। পরে ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পতনের পর পুরো পরিবর্তন হয়ে যান অধ্যাপক শেখ জাকির। অতীতের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিয়া পরিষদের এক সদস্য বলেন, “তিনি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ করেছেন। এ ধরনের কাজের মাধ্যমে তিনি তার আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এটা করা তার একদমই উচিত হয়নি।”
এ বিষয়ে অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিজড়িত মসজিদ নিয়ে গবেষণার বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি হওয়ায় ৫ আগস্টের পর আমি গবেষণা প্রকল্পটি বাতিলের আবেদন করেছি। যেহেতু বঙ্গবন্ধু স্মৃতিবিজড়িত স্থান, সেহেতু এটা নিয়ে আর গবেষণা করা যাবে না।”
জিয়া পরিষদের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফারুকুজ্জামান বলেন, “গবেষণার বিষয়ে আমি অবগত নই। এ বিষয়ে জেনে বিস্তারিত বলতে পারব।”
জিয়া পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক নূরুন নাহার বলেন, “এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত অবগত নই। শুনেছি, তবে সাংগঠনিকভাবে কোনো আলোচনা হয়নি। আর এমন কাজে মন্তব্য করলে অনেক করা যায়। তবে মুখোশধারী মানুষদের বিষয়ে মন্তব্য করতে ইচ্ছে নেই।”
গবেষণা প্রকল্প মূল্যায়ন ও তত্ত্বাবধান কমিটির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে নির্বাচিত গবেষণা প্রকল্পগুলো উপাচার্যের নিকট পাঠিয়েছি। তিনি প্রকল্পটি বাতিলের আবেদন করেছেন কি না আমার জানা নেই।”
ঢাকা/মেহেদী