সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও বে‌ক্সিম‌কো ফার্মা লি‌মি‌টেডের মা‌লিক সালমান এফ রহমা‌নের নেতৃ‌ত্বে সংঘবদ্ধ সি‌ন্ডি‌কে‌টের বিরু‌দ্ধে ক‌রোনা ভ‌্যাকসিন ক্রয়ে ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাংলাদেশ চিকিৎসা গ‌বেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) সাবেক চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী, তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেনসহ অনেক প্রভাবশালীর জ‌ড়িত থাকার অভিযোগ উঠে‌ছে।

এসব অভিযোগ আম‌লে নি‌য়ে সালমান এফ রহমান ও তার সহ‌যোগী‌দের বিরু‌দ্ধে অনুসন্ধা‌নের সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশন। সোমবার (১৭ মার্চ) ক‌মিশ‌নের মহাপ‌রিচালক আক্তার হো‌সেন সাংবা‌দিক‌দের এসব তথ‌্য জানান।

আরো পড়ুন:

গবেষকদের দাবি: ভয়ঙ্কর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কোভ্যাক্সিনের টিকায়

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সঙ্গে আরো এক প্রাণঘাতী রোগের সংযোগ 

অভিযোগ অনুসন্ধা‌নে ইতিম‌ধ্যে দুদ‌কের পক্ষ থে‌কে একটি টিম গঠন করা হ‌য়ে‌ছে।

এর আগে মইদুল ইসলাম নামে এক ব‌্যক্তি ক‌রোনা ভ‌্যাক‌সিন ক্রয়ে বে‌ক্সি‌কো ফার্মার হ‌য়ে সালমান এফ রহমান ও তার সি‌ন্ডি‌কে‌টের বিরুদ্ধে দুর্নী‌তির অভিযোগ এনে দুদ‌কের চেয়ারম‌্যান বরা‌ব‌র এক‌টি লি‌খিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগে বলা হয়, করোনাভাইরাসের আগ্রাসনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টাকা কেনার জন্য সে বছরের ডিসেম্বরে চুক্তি করে বাংলাদেশ। এতে সরবরাহকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা লি‌মি‌টেড। বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো এবং সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যকার টিকা ক্রয় চুক্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল প্রকট। টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়বিধি অনুসরণ করা হয়নি। বে‌ক্সিম‌কো ফার্মার চাপে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একটি উৎস ছাড়া বিকল্প উৎস অনুসন্ধানেও ঘাটতি ছিল। একটি উৎস থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে দর-কষাকষির নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত প্রতিনিধিদের মধ্যে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাও আছেন, যা আইনের লঙ্ঘন। নীতিমালা লঙ্ঘন করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। টিকা আমদানি করে তৃতীয় পক্ষকে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। যার বোঝা জনগণকে বইতে হয়। এভাবে যৌক্তিক কারণ না দেখিয়ে টিকা আমদানিতে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে বেক্সিমকোকে অন্তর্ভুক্ত করায় অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি মূল্যে বাংলাদেশকে সেরামের টিকা কিনতে হয়েছে। সরকার সরাসরি সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে টিকা আনলে প্রতি ডোজে যে টাকা বাঁচত তা দিয়ে ৬৮ লাখ বেশি টিকা ক্রয়ের চুক্তি করা যেত।

এতে বলা হয়, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ভারত থেকে আমদানি করা অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোডিড-১৯ ড্যাকসিনের প্রতিটি ডোজ থেকে অন্য সব খরচ মিটিয়ে ৭৭ টাকা করে লাভ করেছে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ৭০ মিলিয়ন ডোজ পেয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৪২৫ টাকা, যার মোট খরচ ২,৯৭৫ বিলিয়ন টাকা।

স্বাস্থ্য সেবা সংস্থার বিজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, গ্রীন থেকে সিনোফার্ম ড্যাকসিনের ৩.

১৫ মিলিয়ন ডোজ আমদানিতে ২৭.৪৭৫ বিলিয়ন টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু একটি সরকারি কমিটি ১৫ মিলিয়ন ডোজ সিনোফার্ম ভ্যাকসিন প্রতিটি ১০ ডলারে কেনার অনুমোদন দেয়। এভাবেই ক্রয়ের ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। এছাড়াও সরকার কর্তৃক পরিচালিত একটি কোডিড পরীক্ষার জন্য ৩,০০০ টাকা খরচ ও একই পরীক্ষার অন্য প্রাইভেট স্বাস্থ্য সুবিধাগুলির তুলনায় অনেক বেশি।

অভিযোগে আরো বলা হয়, করোনা ভ্যাকসিনকে কেন্দ্র করে সালমান এফ রহমান ও জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটে আরো ছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (ডিএমআরসি) চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। এই সিন্ডিকেটের শক্তির বলয়েই আটকে যায় বঙ্গভ্যাক্স। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আমদানি করে চক্রটি অন্তত ২২ হাজার কোটি টাকা পকেটে ভরেছে। তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত মার্চ মাসে বলেছিলেন, কোডিড-১৯ টিকা বিতরণের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

অভিযোগে আরো বলা হয়, কিন্তু টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই খরচ সর্বোচ্চ ১৯৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। চক্রটি তাদের পকেট ভারি করতেই মূলত বাংলাদেশ আবিষ্কৃত করোনা ভ্যাকসিনের অনুমোদন পেতে প্রভাব খাটিয়ে গড়িমসি করেছে। সেরাম থেকে সালমান এফ রহমান আলাদা কমিশন নিয়েছেন। সালমান এফ রহমান তার নিজের প্রতিষ্ঠানকে তার প্রভাব খাটিয়ে লাভবান করেছেন, রাষ্ট্রে সম্পদের অপচয় হয়েছে আর বাংলাদেশের যে সম্ভাবনাময়কে পদদলিত করেছে। এই অসাধু চক্রে মারা যারা জড়িত ছিল, তাদের সবাইকে কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

অভিযোগে আলো বলা হয়, এই অসাধু সিন্ডিকেট নিজেদের পকেট ভারী করতে আমলাতন্ত্রের লাল ফিতায় আটকে রেখেছিল গ্লোব বায়োটেকের বঙ্গভ্যাক্স অনুমোদন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অন্তত অর্ধডজন চিঠি দিয়েও কোনো সহায়তা মেলেনি। হামলা করা হয় প্রতিষ্ঠানটির অফিসে, গবেষকদের দেওয়া হয়েছিল হুমকিও। প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লোকসান নিয়েও ক্ষমতাধরদের দাপটে মেনে নিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে করোনার প্রকোপ শেষ হয়ে গেলে মেলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন। প্রথমে একটি আনঅফিসিয়াল মিটিংয়ে সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের সঙ্গে গ্লোব বায়োটেককে প্রযুক্তি শেয়ার করার দাবি করা হয়। বেক্সিমকো ও গ্লোব বায়োটেক মিলে জয়েন্ট ভেঞ্চারে বঙ্গভ্যাক্স বাজারজাত করার কথা বলেন সালমান এফ রহমান। প্রথমে তাতে সায় দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি নিয়ে সমাধানের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছিল গ্লোব বায়োটেকের। এর মধ্যেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকোর একটি চুক্তি হয়ে যায়। পরে বেক্সিমকো গ্রুপের মাধ্যমে সেয়াম ইনস্টিটিউটের ড্যাকসিন বাংলাদেশে আমদানি করার কারণে বঙ্গভ্যাক্সের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তর থেকে অপ্রয়োজনীয় সব শর্ত জুড়ে দিয়ে করা হয় সময়ক্ষেপণ। গ্লোব বায়োটেক থেকে সেসব প্রশ্নের জবাব দেওয়া হলেও পরে নতুন নতুন শর্ত দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিঠি দিয়েছে সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল দপ্তর। আর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে যাওয়ার পর।

এমতাবস্থায়, বর্ণিত সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত সালমান এফ রহমান, জাহিদ মালেক, মোদাচ্ছের আলী, লোকমান হোসেনসহ আমদানির সাথে জড়িত অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার বিষয়ে দুর্নীতির অনুসন্ধানপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন‌্য তি‌নি আবেদন ক‌রেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর তৎক ল ন সরক র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালা

রাজধানীর জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী, খাদ্য অধিদপ্তর ও জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাসহ মোট ২৫ জন। 

এ সময় প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে আবশ্যকীয় তথ্যসমূহ তুলে ধরা হয়।

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের (নিমকো) মহাপরিচালক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক ড. মিজানুর রহমান। এ সময় আলোচনায় আরও অংশ নেন নিমকোর পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মারুফ নাওয়াজ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রকল্প উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদেক। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন উপপরিচালক সুমনা পারভীন।

প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মারুফ নাওয়াজ তার বক্তব্যে বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে আমাদের তিন স্তরে সংকট রয়েছে। উৎপাদন, প্রস্তুতকরণ ও ভোগ। সমস্যাগুলো ম্যান-মেইড (মনুষ্যসৃষ্ট)। ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এসব থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকরা বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। এগুলো নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা যেতে পারে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের দুরারোগ্য ব্যধিতে আমরা আক্রান্ত হচ্ছি। এগুলোর অন্যতম কারণ ভেজাল খাবার ও অনিরাপদ খাদ্যাভ্যাস। ফলে খাদ্যাভ্যাসেও আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে।

প্রধান আলোচক ড. মিজানুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি দুইভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। একটি হলো খাদ্যের নিরাপত্তা, অপরটি নিরাপদতা। নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক হলেও ব্যক্তি পর্যায়ে নিরাপদতা নিয়ে আমরা কাজ করতে পারি। সেক্ষেত্রে খাদ্যের উৎপাদন, প্রস্তুতকরণ ও ভোগের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। উৎপাদনের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সার-কীটনাশক ব্যবহার পরিহার; প্রস্তুতের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর রাসায়নিক মুক্ত রাখা এবং ভোগ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও নিমকোর মহাপরিচালক মো. কাউসার আহাম্মদ বলেন, আজকে অত্যন্ত জন-গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আশাকরি এখান থেকে আমরা যা শিখেছি তা আমাদের ব্যক্তিজীবন ও সমাজে কাজে লাগবে। আমরা আমাদের পরিচিতজনদের মধ্যে যদি এগুলো শেয়ার করি তাহলে সচেতনতার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং সবাই উপকৃত হতে পারবে। এ সময় তিনি কর্মশালার আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ