সম্প্রীতির ইফতারে প্রাণোচ্ছল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
Published: 17th, March 2025 GMT
রমজান মাস জুড়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ইফতারের আয়োজন থাকে চোখে পড়ার মতো। রমজানে একাডেমিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় প্রায় সব শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীদের খাবারের আয়োজন করা হয়। তবে গত বছর ২৬ মার্চ রমজান মাসে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়, যা উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। এবারো হলগুলোর পক্ষ থেকে এমন আয়োজন করবে বলে জানা গেছে।
পাশাপাশি রমজানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী, জেলা ও অঞ্চলভিত্তিক সংগঠন এবং বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এভাবে রমজান জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে একের পর এক ইফতার উৎসব চলতে থাকে।
আরো পড়ুন:
কুবিতে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তদন্তে শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি
কুবিতে আপত্তিকর অবস্থায় ৪ বহিরাগত আটক
সারাদিন ক্লাস-পরীক্ষা ও টিউশনির ব্যস্ততা শেষে শিক্ষার্থীরা দলে দলে ভাগ হয়ে জড়ো হতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, শহীদ মিনার, মুক্তমঞ্চ, কাঁঠালতলা, ক্যাফেটেরিয়ার ছাদ, বিভিন্ন বিভাগের করিডোর ও অনুষদের হলরুম এবং ছাদের আঙিনায়। তখন এসব স্থানগুলোর পরিবেশ হয়ে উঠে প্রাণোচ্ছল।
পশ্চিমাকাশে সূর্য হেলে যাওয়ার মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বর, কৃষ্ণচূড়া রোড শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। সবুজ বিস্তৃত মাঠে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে বন্ধুদের সঙ্গে কেউ ব্যস্ত গল্প-আড্ডায়। আবার কেউ ব্যস্ত ইফতার সাজাতে। তখন তাদের দেখলে মনে হবে সারাদিনের ক্লান্তি আর নেই। মসজিদে মোয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি শুনে খোলা আকাশের নিচে ইফতার করার ধুম পড়ে যায়।
বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারে অংশগ্রহণ করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মুনিরা আক্তার। তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসে ইফতার মানেই বন্ধুদের সঙ্গে এক অন্যরকম আনন্দের মুহূর্ত। যেখানে রমজানের পবিত্রতা ও ইফতারের মাহাত্ম্য একসঙ্গে অনুভূত হয়। সারাদিনের সিয়াম সাধনার পর একসঙ্গে ইফতার করা শুধু আনন্দই নয়, বরং পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও আত্মিক প্রশান্তির উপলব্ধি এনে দেয়। এই মিলনমেলা রমজানের শিক্ষা- সংযম, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধকে আরও গভীর করে তোলে।”
বাংলা বিভাগের ১৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী রেদোয়ান আহমেদ বলেন, “সারাদিন ক্লাস করার পর যখন বন্ধুরা সবাই একসঙ্গে মিলে ইফতার করি, তখন নিজের মধ্যে একটা প্রশান্তি কাজ করে। পরিবার ছাড়া রমজানের সময়টুকু ভালোই যাচ্ছে। রুমে একা ইফতার করতে ভালো লাগে না। তাই বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিদিন ইফতার করি। ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার পর এই সময়টুকু মিস করবো।”
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আবরার হত্যা: আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় কাল
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), জেল আপিল ও আপিলের ওপর আগামীকাল রোববার রায় ঘোষণা হতে পারে।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের রোববারের কার্যতালিকায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিল রায়ের জন্য রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, রাষ্ট্র বনাম মেহেদী হাসান রাসেল এবং অন্যান্য শিরোনামে রায়ের জন্য ডেথ রেফারেন্সটি কার্যতালিকায় রয়েছে। ডেথ রেফারেন্সের নিচে লেখা আংশিক শ্রুত; এর সঙ্গে আপিল ও জেল আপিলগুলো রয়েছে।
ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), জেল আপিল ও আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এখন রায়ের জন্য আদালতের রোববারের কার্যতালিকায় এলো।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।’ অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
ওই মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়, যেটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
ফৌজদারি কোনো মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে, তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যেটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করতে পারেন। সাধারণত ডেথ রেফারেন্স ও এসব আপিলের ওপর একসঙ্গে হাইকোর্টে শুনানি হয়ে থাকে।
ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর কারাগারে থাকা দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেল আপিল ও আপিল করেন। পৃথক জেল আপিল গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে ওঠে। সেদিন আদালত তা শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। পাশাপাশি নিয়মিত আপিল করেন কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা। আসামিদের এই ডেথ রেফারেন্স, জেল আপিল ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে একসঙ্গে শুনানি হয়।
গত বছরের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু করে। এরপর পেপারবুক থেকে উপস্থাপনের মাধ্যমে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় শুনানি হয়। সেদিন থেকে মধ্যে এক দিন ছাড়া প্রতি কার্যদিবসে শুনানি হয়। সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি নিয়ে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, খন্দকার বাহার রুমি, নূর মুহাম্মদ আজমী ও রাসেল আহম্মেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল জব্বার জুয়েল, লাবনী আক্তার, তানভীর প্রধান ও সুমাইয়া বিনতে আজিজ শুনানিতে ছিলেন। আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, মাসুদ হাসান চৌধুরী, মোহাম্মদ শিশির মনির প্রমুখ শুনানিতে অংশ নেন।