খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা এখন তামাকের রাজ্যে পরিণত হচ্ছে। আর্থিকভাবে লাভবান হাওয়ার কারণে এই উপজেলার ফসলি জমি, স্কুল ও কলেজের পাশের জায়গায় তামাকের চাষ করেছেন চাষিরা। এর ফলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ ও কৃষি ব্যবস্থা।  

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে এ বছর দীঘিনালায় প্রায় ৪৫০ জন চাষি প্রায় ১২০০ একর জমিতে তামাক চাষ করেছেন। তামাক শুকাতে পুরো উপজেলায় প্রস্তত করা হয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক চুল্লি। এসব চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় প্রচুর পরিমাণে কাঠ।

এলাকাবাসী জানান, দীঘিনালা উপজেলার কৃষকেরা আগে নিজেদের জমিতে ধানের পাশপাশি প্রচুর পরিমাণে সবজির আবাদ করতেন। তাদের উৎপাদিত সবজি খাগড়াছড়ি শহরসহ বিভিন্ন জেলায় যেত। এখন কৃষকেরা সবজি চাষ না করে ঝুঁকছেন তামাক চাষের দিকে। এতে তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হলেও শারীরিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, পরিবেশেরও বিশাল ক্ষতি হচ্ছে, কারণ তামাক পোড়াতে চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে গাছ।

আরো পড়ুন:

‘টমেটো এখন পাখিদের খাদ্য’

আগুনে পুড়ল ১২ বিঘা পানের বরজ

বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা বলেন, “তামাক চাষ নিয়ে নিরুউৎসাহিত করতে কোনো ধরনের উদ্যোগ না থাকায় দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো কৃষকদের তামাক চাষে উদ্ধুদ্ধ করছে। ফলে দিনদিন বাড়ছে তামাকের চাষ। 

আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় তামাক চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা  

উপজেলার মেরুং এলাকার মো.

ইউছুপ নামে এক কৃষক বলেন, “শারীরিকভাবে ক্ষতি জেনেও তামাক চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি। তামাক চাষে লাভের নিশ্চয়তা থাকে। সবজি চাষ করলে সেই নিশ্চয়তা নেই, বরং লোকসানের সম্ভাবনা থাকে বেশি। তাই তামাক চাষ করছি। যদি সবজি চাষে লাভের নিশ্চয়তা থাকে, তাহলে আবারো সবজি চাষ করব।”

হাসিনসনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাধন ত্রিপুরা জানান, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশের জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে। কিছু বললে, তারা (চাষি) জানায়, নিজের জমিতে চাষ করেছেন, এতে তাদের ক্ষতি কি? এ কারণে কিছুই বলতে পারেন না তারা।

দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তনয় তালুকদার বলেন, “তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য অব্যশই ক্ষতিকর। তামাক চাষিদের দীর্ঘ মেয়াদি রোগ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার, হজম শক্তি কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে তামাক চাষিদের। এসব রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য তামাক চাষ ছেড়ে দিতে হবে এবং তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব
সর্ম্পেকে সবাইকে সচেতন করতে হবে।”

দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর তামাক চাষ বেড়েছে। তামাক চাষ যেমন মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তেমননি পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর।” 

তিনি বলেন, “তামাকের বিকল্প হিসেবে যেসব ফসল আমরা বিগত বছরগুলোতে কৃষকদের দিয়ে উৎপাদন করিয়েছি, দেখা গেছে, সঠিক দাম ও সঠিক বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তামাক চাষে এখানে আরেকটা নতুন কোম্পানি যুক্ত হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। এসব কারণে তামাক কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা উচ্চমূল্যের মসলা জাতীয় ফসল, ভুট্টা, সূর্যমুখী, সরিষা চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করে তামাক চাষ কমানোর চেষ্টা করব।”

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল র জন য চ ষ কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ শেষে ফেরার সময় মাটির ঢিল

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ শেষে ফেরার সময় মাটির ঢিল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার বিকেলে উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের রামকৃষ্ণদি গ্রামে অভিযানে গেলে এ ঘটনা ঘটে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম বারি।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের রামকৃষ্ণদি ও খিদিরপুর গ্রামে ফসলি জমির মাটি কাটছে একটি চক্র। প্রশাসন কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও তা বন্ধ হয়নি। আজ বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি তৌহিদুল ইসলাম বারির নেতৃত্বে একটি দল ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। এ সময় মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত দুটি ভেক্যু অচল করে দেওয়া হয়। এতে মাটি কাটা চক্রের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সদস্যদের ওপর মাটির ঢিল নিক্ষেপ করে। পরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন ভ্রাম্যমাণ আদালতের সদস্যরা।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম বারির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ইউএনও এবং থানার ওসিকে ফোন করা হলে তারাও রিসিভ করেননি।

বিষয়ে জানতে সিরাজদীখান সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আ ন ম ইমরান হোসেন বলেন, অভিযান শেষ করে আসার সময় ওই এলাকার কয়েকজন মাটির ঢিল ছুড়ে মারে। এর বেশি কিছু হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ