বস্ত্র ও পাট এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, পাটের ব্যাগকে সহজলভ্য ও কম মূল্যে বাজারে আনতে চাই। এর সুবিধা হলো, এ ব্যাগ পুণরায় ব্যবহার করা যায়, সাশ্রয়ী ও পরিবেশ উপযোগী।

সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহার নিশ্চিতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন বাজারের সভাপতি ও সম্পাদকদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘পাটের ব্যাগের বিপণন সহজ করতে আপনারা ভূমিকা রাখেন। এ ব্যাগ কীভাবে বেশি বিপণন করা যায়, কী সাইজ, তা আপনাদের কাছে পরামর্শ চাচ্ছি, যাতে আপনাদের পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি।’  

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি চাই, আপনারাই পাটব্যাগ উৎপাদন করেন, আপনারাই ব্যবসায়ী হন। পাটের ব্যাগ প্রচলনের বিষয়টি আমরা বাস্তবায়ন করছি, সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করছে। পাটব্যাগ বাজারে সহজলভ্য করতে উদ্যোগী সরকার।’

মতবিনিময়কালে বাজার প্রতিনিধিরা পাটব্যাগ সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা ও কম দামে ব্যাগের চাহিদার কথা জানান। একইসঙ্গে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন রোধের মত দেন।

এ সময় উত্তরা-বাড্ডা কাঁচাবাজার সভাপতি হাজী আব্দুল হালিম বলেন, ‘বিভিন্ন সাইজের ব্যাগের সরবরাহ দিতে হবে। এ জন্য ডিলার রাখলে পাটব্যাগ পাওয়া সহজ হবে।’

সভায় সভাপতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.

আব্দুর রউফ বলেন, ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশব্যাপী পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটব্যাগ প্রচলন করতে উদ্যোগী ভূমিকা রাখছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। সে লক্ষ্যে আমরা উপদেষ্টার নির্দেশে কাজ করছি।’

এ সময় আরো ছিলেন– মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আরিফুর রহমান খান, অতিরিক্ত সচিব মো. সেলিম খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রহিম খান, জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের মহাপরিচালক জিনাত আরা, টিসিবির মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সল আজাদ, বাণিজ্য ও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য প্রতিনিধিসহ ঢাকা মহানগরের বাজার প্রতিনিধিরা।

ঢাকা/আসাদ/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন আশার আলো

বর্তমান যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এই পরিবর্তনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ডিজিটাইজেশন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ গ্রহণের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক চাপ, দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রা এবং ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোর সমাধানে সহজলভ্য এই সেবা তরুণদের কাছে এক নতুন আশার আলো হয়ে উঠেছে। এই সেবার প্রসার ও গ্রহণযোগ্যতার পেছনে রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা, যা আমাদের সমাজে একটি বৃহত্তর মানসিক স্বাস্থ্য বিপ্লবের সূচনা করতে পারে।

বাংলাদেশে অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তরুণদের মধ্যে ৩৬.৬%‐এর বেশি শিক্ষার্থী ডিপ্রেশনজনিত সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকে, যেখানে মেয়েদের হার ৪২.৯% এবং ছেলেদের ২৫.৭%। এ ছাড়া ২০১৯ সালের আরেক জরিপে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিপ্রেশনের মাত্রা ২২.৫% বেড়েছে। ফলে, তরুণ প্রজন্ম, যারা প্রযুক্তির সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত, তারা এ সেবাকে সহজলভ্য এবং কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করছে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম যেমন ব্র্যাকের ‘মনের যত্ন’ হটলাইন এবং অন্যান্য ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশন তরুণদের মানসিক সমস্যাগুলোর তাৎক্ষণিক সমাধান দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আয়োজিত কার্নিভাল এবং কর্মশালা তরুণদের মধ্যে এ বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করছে।

বিশ্বব্যাপী, কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি, আর্ট থেরাপি এবং মেডিটেশনসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ডিজিটাল মাধ্যমে সহজলভ্য হয়েছে। বাংলাদেশেও এই প্রবণতা অনুসরণ করে তরুণরা তাদের মানসিক সমস্যাগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার সুযোগ পাচ্ছে, যা আগে সমাজে অনেকটা নেতিবাচক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতো।
তরুণদের মধ্যে মানসিক চাপের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে– দ্রুত পরিবর্তনশীল সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং পারিবারিক প্রত্যাশা। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারও তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করার প্রবণতা তরুণদের মাঝে হতাশা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করছে।
তরুণরা প্রায়ই মনে করে যে, তাদের সমস্যাগুলো প্রকাশ করলে তারা সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হবে। এ পরিস্থিতিতে অনলাইন পরামর্শ একটি গোপনীয় এবং নিরাপদ বিকল্প হিসেবে কাজ করছে।
অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ তরুণদের জন্য একটি কার্যকর সমাধান হয়ে উঠেছে। এটি তাদের সময় এবং অর্থ সাশ্রয় করতে সহায়তা করে। এই সেবার মাধ্যমে তরুণরা তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারছে এবং তাৎক্ষণিক সমাধান পাচ্ছে। এ ছাড়া, গোপনীয়তার নিশ্চয়তা তাদের জন্য একটি বড় সুবিধা হিসেবে কাজ করছে। ব্র্যাকের মতো 
প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশিক্ষিত মনোবিদ এবং সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলরের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করছে, যা মানসিক সমস্যাগুলোর কার্যকরী সমাধান দিতে সক্ষম। 

যদিও অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ নানাবিধ সুবিধা প্রদান করছে, তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একজন মনোবিদও নেই, সেখানে প্রশিক্ষিত ও পেশাদার কাউন্সেলরের অভাব অনলাইন সেবার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া, অনেক তরুণ এখনও এই সেবা গ্রহণ করতে দ্বিধাগ্রস্ত থাকে। কারণ তারা মনে করে এটি তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্যকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে। আমাদের উচিত, এই উদ্যোগকে আরও প্রসারিত করা এবং তরুণদের জন্য একটি নিরাপদ ও সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা তাদের সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারবে।

মো. ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ্‌: 
লেখক ও গবেষক
ibrahimkhalilullah010@gmail.com
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নতুন আশার আলো