কিষানি থেকে উদ্যোক্তা উপকূলের নারীরা
Published: 17th, March 2025 GMT
সংসারের খরচ মেটাতে মাঝে মধ্যে অন্যের জমিতে কাজ করতেন উপকূলীয় উপজেলা দাকোপের তিলডাঙ্গা গ্রামের রাধিকা শীল। কিন্তু বছরখানেক আগে তিনি নিজের জমিতে চাষ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। বেসরকারি একটি সংস্থা বীজ, সার ও অর্থ সহায়তা দিল। সরকারের কৃষি বিভাগ দিল প্রশিক্ষণ। এখন নিজের পুকুরে মাছ ও ধান চাষ করেন রাধিকা।
রাধিকা শীল জানান, আগে বছরের বড় একটি সময় ঋণ করে চলা লাগত। এখন বাড়ির সামনের জমিতে মাছ, ধান ও সবজি চাষ করেন। সমন্বিত খামার থেকে বছরে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হয়। আগের ঋণ পরিশোধের পর এখন কিছু টাকাও জমেছে। নতুন করে এ বছর কুমড়ো ও সবজি চাষের জন্য এক বিঘা জমি ইজারা নিয়েছেন।
শুধু রাধিকা শীলই নন, বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় কৃষিশ্রমিক থেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন উপকূলের নারীরা। তারা এখন নিজেরাই নিজেদের জমিতে ফসল ফলান। কেউবা মাছ চাষ করেন।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় উপকূলের বেশির ভাগ গ্রাম লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এখানে ফসল ফলানো চ্যালেঞ্জ। তা ছাড়া ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই ফসল নষ্ট হয়। এসব কারণে দাকোপ, কয়রাসহ উপকূলের উপজেলাগুলোতে কৃষিকাজে অনাগ্রহ ছিল মানুষের।
সম্প্রতি লবণসহিষ্ণু ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন এবং অনেক বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় কৃষকদের মাঝে চাষাবাদের পুরোনো ঝোঁক ফিরে এসেছে। তারা ফসলের পানির জন্য পুকুর তৈরি করছেন। সেই পানিতে মাছ, ধান ও সবজি সমন্বিত চাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে অনেকের।
দাকোপ ও কয়রা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামগুলোর মানুষ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। বাকিরা কৃষিকাজ ও মাছ চাষ করেন। দাকোপের বিভিন্ন গ্রামে গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি মাঠেও শ্রমিকের কাজ করেন নারীরা।
সহজাত এই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিণত করতে ভূমিকা রেখেছে বেসরকারি সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড। দুই উপজেলার প্রায় ৬ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিণত করেছে তারা।
দাকোপের তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের মধ্যপাড়ার চন্দ্রা বিশ্বাস তাদেরই একজন। তিনি বলেন, আগে অন্যের জমিতে কাজ করার পাশাপাশি সবজি চাষ করেছেন। কিন্তু প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর সবকিছুই পাল্টে গেছে। এখন মাছও চাষ করেন তিনি। আইলে টমেটো, লাউ, ঢ্যাঁড়শসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেন। দুটি থেকেই আয় হয়।
একই ধরনের বক্তব্য দিলেন একই গ্রামের মমতা রায়। পশু পালনের পাশাপাশি সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী তিনি। তাঁর ক্ষেতে কাজ করেন গ্রামের অনেক পুরুষ।
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ সময় ধরে লবণপানিতে চিংড়ি চাষের কারণে এখানে মানুষের মধ্যে চাষের প্রবণতা কম ছিল। এখন দ্রুত সেটা বাড়ছে। নারীরাও এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন।
উপকূলের নারীদের অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে যারা কাজ করছে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড তাদের মধ্যে অন্যতম। কোরিয়ার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা কোআইসার অর্থায়নে পাঁচ বছর ধরে এ কাজ করছেন তারা।
সংস্থার ক্লাইমেট চেঞ্জ রেসিলেন্স প্রোগ্রাম ম্যানেজার মশিউর রহমান বলেন, উপকূলের অতিদরিদ্র ৪ হাজার পরিবারকে বাছাই করে তাদের বীজ থেকে চারা উৎপাদন, কম পানি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন, হাস-মুরগি, ছাগল পালন ও ঘেরের আইলে সবজি চাষসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের সবাই নারী। শুরুতে সামান্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হলেও নারীরাই তাদের প্রচেষ্টায় ঋণ নিয়ে বড় খামার তৈরি করেছেন। নিজেদের প্রচেষ্টায় উপকূলের নারীরা এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপক ল উপক ল র ন র চ ষ কর ন সহয গ ত ক জ কর উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিব ‘মেগাস্টার’, আমি ওই পর্যায়ে যাইনি: বললেন হামজা
বিমানবন্দর থেকে হবিগঞ্জের বাড়ি—যখন যেদিকে যাচ্ছেন হামজা চৌধুরী, টের পাচ্ছেন তাঁকে ঘিরে উন্মাদনা। হাজারো মানুষ ভিড় করছেন তাঁর বাড়ির সামনে। তাঁকে বরণ করে নিতে ছিল ফুলের তোড়া, ফ্লেয়ার ও পতাকা। বাংলাদেশে পা রেখেই ক্রীড়াঙ্গন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন হামজা।
আরও পড়ুন‘আফনারা সবাই আসছেন আমারে দেখবার লাগি, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’: নিজের বাড়িতে সংবর্ধনা মঞ্চে হামজা১ ঘণ্টা আগেহামজাই কি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় তারকা? গত কয়েক দিন ধরে এই আলোচনাও আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাঁর তুলনাটা হচ্ছে মূলত ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের সঙ্গে। দুজনের মধ্যে কার বেশি খ্যাতি, এ নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা তুঙ্গে—তখন প্রশ্নটা পৌঁছে গেছে হামজার কাছেও।
হবিগঞ্জে নিজ বাড়িতে বাবার সঙ্গে হামজা