পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ২৩৯ বিডিআর সদস্যের জামিনের বিষয়ে আদেশ ১০
Published: 17th, March 2025 GMT
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলায় কারাগারে আটক থাকা ২৩৯ বিডিআর সদস্যের জামিনের বিষয়ে আদেশের তারিখ পিছিয়ে আগামী ১০ এপ্রিল ধার্য করেছেন আদালত।
সোমবার (১৭ মার্চ) ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া এ তারিখ নির্ধারণ করেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের প্রসিকিউটর আব্দুল হান্নান ভূইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার জামিনের বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য রবিবার (১৬ মার্চ) দিন ধার্য করেন। তবে, রবিবার আদেশ না দিয়ে ফের সোমবার (১৭ মার্চ) দিন ধার্য করা হয়।
গত ১৯ জানুয়ারি ১৭৮ জন জন বিডিআর সদস্যকে জামিন দেন একই আদালত। পরে গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্ত হন তারা।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।
ঢাকা/মামুন/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পেঁয়াজের দামে ক্রেতা খুশি, লোকসানে কৃষক
দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় ক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটেছে। কম দামে পেঁয়াজ কিনে তারা বাজারে স্বস্তি পাচ্ছেন। কিন্তু কৃষকরা ঠিক উল্টো অবস্থায় রয়েছেন। কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পেঁয়াজের উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তা তাদের জন্য লাভজনক নয়। এ পরিস্থিতি কৃষকদের জন্য এক নতুন দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি করতে এসেছেন রাজবাড়ীর কৃষক মো. সোলায়মান। ট্রাক ভাড়া দিয়ে এনে প্রতি মণ (৪০ কেজি) পেঁয়াজ ১২০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। এতে কেজিপ্রতি দাম হয় ৩০ টাকা।
সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ‘মায়ের দোয়া আড়তের’ সামনে কৃষক সোলায়মানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘‘চলতি বছর এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে গড়ে ২৪-২৫ মণ। এক মণ পেঁয়াজ বিক্রি করছি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ২৪ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হলে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হয় ২৮ হাজার ৮০০ টাকা।’’
আরো পড়ুন:
এক লাফে পেঁয়াজের দাম কমলো কেজিতে ১০ টাকা
রমজানে স্বাভাবিক থাকবে আদা-রসুন ও পেঁয়াজের দাম
‘‘অথচ বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ চাষে খরচ পড়েছে ৪০-৪৫ হাজার টাকা। লাভ তো দূরের কথা, প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ চাষে লোকসান হয়েছে ১২-১৫ হাজার টাকা। লোকসান হওয়ায় আগামীতে রাজবাড়ী ও ফরিদপুরে অনেক কৃষক পেঁয়াজ উৎপাদন করবেন না।’’
শুধু সোলায়মান একা নয়, এরকম অনেক কৃষক উৎপাদন খরচ অনুযায়ী পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় নীরবে ‘চোখের জল’ ফেলছেন।
যাত্রাবাড়ীতে কথা রাজবাড়ীর আরেক পেঁয়াজচাষি বোরহান শেখের সঙ্গে। বলেন, ‘‘পেঁয়াজ আবাদে বীজতলা তৈরি, সার, কীটনাশক দিয়ে জমি প্রস্তুত, সেচ, শ্রমিক মজুরিসহ প্রতি বিঘা জমিতে ৪৫-৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বেশিরভাগ জমিতে ফলন হয়েছে ২৫-৩০ মণ। এসব পেঁয়াজ ১১০০-১২০০ টাকা মণ বিক্রি করছি। পেঁয়াজ চাষ করে লাভ তো দূরের কথা, উল্টো লোকসান হচ্ছে।’’
এবার দশ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন ফরিদপুরের রহিম মোল্লা। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে গড়ে ৩০-৩৫ মণ। তিনি বলেন, ‘‘এ বছর প্রতি বিঘায় যার ফলন ভালো হয়েছে, তিনি সর্বোচ্চ ৪৩ মণ পেয়েছেন। পেঁয়াজের যে দাম পাচ্ছি, তাতে চাষাবাদ করা সম্ভব না। ওষুধ, সার, শ্রমিক খরচসহ সব কিছুর দাম বেশি। সরকার পেঁয়াজচাষিদের দিকে নজর না দিলে আগামীতে আর চাষ করা সম্ভব হবে না।’’
সবুজ নামের পাবনার আরেক কৃষক বলেন, ‘‘সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ না আনলে আমরা ভাল দাম পেতাম। জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল বৈষম্যর অবসানের জন্য। কিন্তু আমরা পেঁয়াজের চাষ করে আজ বৈষম্যের শিকার হয়েছি। উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছি। সঠিক দাম পাচ্ছি না। সরকারে কাছে পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি ২০০০-২২০০ টাকা করার দাবি করছি।’’
যাত্রাবাড়ী মায়ের দোয়া আড়তের প্রোপাইটার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘এ বছর পেঁয়াজের দাম কম থাকায় ক্রেতারা সন্তুষ্ট। দীর্ঘ ৫ বছরেও ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি। আমরা কৃষকের কাছ থেকে যে দামে কিনি, তার চেয়ে সামান্য লাভে বেচি। এ বছর দেখেছি কৃষকদের চোখে-মুখে কান্না। তারা নীরবে কান্না করছেন। যে দামে তারা পেঁয়াজ উৎপাদন করছেন, সেই দামে বিক্রি করতে পারেননি। এজন্য অনেকেই পেঁয়াজ বিক্রি করে হতাশ হয়ে এখান থেকে চলে যাচ্ছেন। আর বলছেন আগামী বছর চাষ করবেন না।’’
কৃষি বিভাগ জানায়, গত অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৬ লাখ টন। উৎপাদন হয়েছিল ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন। এ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৮ লাখ টন।
কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মৌসুমের সময় কৃষক পেঁয়াজ একসঙ্গে উত্তোলন ও বিক্রি করায় দাম কিছুটা কম থাকে। পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে বিক্রি করা হলে কৃষকরা সঠিক দাম পাবেন। কৃষক প্রান্তিক পর্যায়ে যেন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন, সে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ঢাকা/এনএইচ