ঘরে ফিরে ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হামজা
Published: 17th, March 2025 GMT
বাংলাদেশের জার্সিতে ভারতের বিপক্ষে ২৫ মার্চ অভিষেক হতে যাচ্ছে হামজা চৌধুরীর। চাইলে সরাসরি ভারতে দলের ক্যাম্পে যোগ দিতে পারতেন। কিন্তু আগে ঘরে ফিরেছেন তিনি। সিলেটে এসে ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার ডিভিশনের এই ফুটবলার।
সোমবার সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। সঙ্গে ছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা।
এর আগে রোববার দিবাগত রাত বাংলাদেশ সময় ২টায় যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে বিমান ধরেন হামজা। তার বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট গ্রামে। সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছেন হাজারো ভক্ত।
বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার জন্য প্রথমবারের মতো দেশে এসে ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি। তার আগমণন সিলেট বিমানবন্দরে ভিড় জমান শত শত ভক্ত-সমর্থক। তাদের অনেকের হাতে ছিল ব্যানার।
হামজা ও তার পরিবারকে বরণ করে নিতে সিলেটে আসেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
হামজার আগমনে সংবাদ মাধ্যমকর্মীদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে বের হয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন এই ইংল্যান্ডের লিগে খেলা এই ফুটবলার। তবে ভক্তদের অতিরিক্ত চাপে বেশি কিছু বলতে পারেননি এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।
শুধু সিলেটি ভাষায় বলেন, আমরা উইন করমু ইনশাআল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আবার বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে ঢুকে যান। বাফুফে সদস্যরা জানান, বিমানবন্দর থেকে ফুটবলার হামজা গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাটে যাবেন। সেখান থেকে আগামীকাল ঢাকা যাবেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
পেঁয়াজের দামে ক্রেতা খুশি, লোকসানে কৃষক
দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় ক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটেছে। কম দামে পেঁয়াজ কিনে তারা বাজারে স্বস্তি পাচ্ছেন। কিন্তু কৃষকরা ঠিক উল্টো অবস্থায় রয়েছেন। কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পেঁয়াজের উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তা তাদের জন্য লাভজনক নয়। এ পরিস্থিতি কৃষকদের জন্য এক নতুন দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি করতে এসেছেন রাজবাড়ীর কৃষক মো. সোলায়মান। ট্রাক ভাড়া দিয়ে এনে প্রতি মণ (৪০ কেজি) পেঁয়াজ ১২০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। এতে কেজিপ্রতি দাম হয় ৩০ টাকা।
সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ‘মায়ের দোয়া আড়তের’ সামনে কৃষক সোলায়মানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘‘চলতি বছর এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে গড়ে ২৪-২৫ মণ। এক মণ পেঁয়াজ বিক্রি করছি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ২৪ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হলে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হয় ২৮ হাজার ৮০০ টাকা।’’
আরো পড়ুন:
এক লাফে পেঁয়াজের দাম কমলো কেজিতে ১০ টাকা
রমজানে স্বাভাবিক থাকবে আদা-রসুন ও পেঁয়াজের দাম
‘‘অথচ বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ চাষে খরচ পড়েছে ৪০-৪৫ হাজার টাকা। লাভ তো দূরের কথা, প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ চাষে লোকসান হয়েছে ১২-১৫ হাজার টাকা। লোকসান হওয়ায় আগামীতে রাজবাড়ী ও ফরিদপুরে অনেক কৃষক পেঁয়াজ উৎপাদন করবেন না।’’
শুধু সোলায়মান একা নয়, এরকম অনেক কৃষক উৎপাদন খরচ অনুযায়ী পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় নীরবে ‘চোখের জল’ ফেলছেন।
যাত্রাবাড়ীতে কথা রাজবাড়ীর আরেক পেঁয়াজচাষি বোরহান শেখের সঙ্গে। বলেন, ‘‘পেঁয়াজ আবাদে বীজতলা তৈরি, সার, কীটনাশক দিয়ে জমি প্রস্তুত, সেচ, শ্রমিক মজুরিসহ প্রতি বিঘা জমিতে ৪৫-৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বেশিরভাগ জমিতে ফলন হয়েছে ২৫-৩০ মণ। এসব পেঁয়াজ ১১০০-১২০০ টাকা মণ বিক্রি করছি। পেঁয়াজ চাষ করে লাভ তো দূরের কথা, উল্টো লোকসান হচ্ছে।’’
এবার দশ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন ফরিদপুরের রহিম মোল্লা। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে গড়ে ৩০-৩৫ মণ। তিনি বলেন, ‘‘এ বছর প্রতি বিঘায় যার ফলন ভালো হয়েছে, তিনি সর্বোচ্চ ৪৩ মণ পেয়েছেন। পেঁয়াজের যে দাম পাচ্ছি, তাতে চাষাবাদ করা সম্ভব না। ওষুধ, সার, শ্রমিক খরচসহ সব কিছুর দাম বেশি। সরকার পেঁয়াজচাষিদের দিকে নজর না দিলে আগামীতে আর চাষ করা সম্ভব হবে না।’’
সবুজ নামের পাবনার আরেক কৃষক বলেন, ‘‘সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ না আনলে আমরা ভাল দাম পেতাম। জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল বৈষম্যর অবসানের জন্য। কিন্তু আমরা পেঁয়াজের চাষ করে আজ বৈষম্যের শিকার হয়েছি। উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছি। সঠিক দাম পাচ্ছি না। সরকারে কাছে পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি ২০০০-২২০০ টাকা করার দাবি করছি।’’
যাত্রাবাড়ী মায়ের দোয়া আড়তের প্রোপাইটার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘এ বছর পেঁয়াজের দাম কম থাকায় ক্রেতারা সন্তুষ্ট। দীর্ঘ ৫ বছরেও ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি। আমরা কৃষকের কাছ থেকে যে দামে কিনি, তার চেয়ে সামান্য লাভে বেচি। এ বছর দেখেছি কৃষকদের চোখে-মুখে কান্না। তারা নীরবে কান্না করছেন। যে দামে তারা পেঁয়াজ উৎপাদন করছেন, সেই দামে বিক্রি করতে পারেননি। এজন্য অনেকেই পেঁয়াজ বিক্রি করে হতাশ হয়ে এখান থেকে চলে যাচ্ছেন। আর বলছেন আগামী বছর চাষ করবেন না।’’
কৃষি বিভাগ জানায়, গত অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৬ লাখ টন। উৎপাদন হয়েছিল ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন। এ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৮ লাখ টন।
কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মৌসুমের সময় কৃষক পেঁয়াজ একসঙ্গে উত্তোলন ও বিক্রি করায় দাম কিছুটা কম থাকে। পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে বিক্রি করা হলে কৃষকরা সঠিক দাম পাবেন। কৃষক প্রান্তিক পর্যায়ে যেন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন, সে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ঢাকা/এনএইচ