রমজান এলেই গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) নেমে আসে এক অন্যরকম আবহ। সারা বছর পড়াশোনার ব্যস্ততায় ডুবে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ মাসে যেন এক অন্য রকম আনন্দ আর সংহতির সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ে।
পুরো রমজান মাস জুড়ে গোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ইফতার আয়োজন থাকে চোখে পড়ার মতো। বন্ধু-সহপাঠী ছাড়াও ক্যাম্পাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জেলা ও অঞ্চলভিত্তিক সংগঠন এবং বিভাগগুলোর পক্ষ থেকে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। এভাবে পুরো রমজান জুড়ে একের পর এক সংগঠনের ইফতার পার্টি চলতে থাকে।
এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রথম রোজা থেকে শুরু করে প্রতিনিয়ত চলছে মহাসমারহে ইফতার মাহফিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা থাকায় শিক্ষার্থীরা ইচ্ছে থাকলেও পরিবারের কাছে যেতে পারেননি। আবার অনেকে আবাসিক হল খোলা থাকায় চাকরির প্রস্তুতির জন্য বন্ধুদের সঙ্গে হলে থেকে গেছেন। প্রতিদিনের ক্লাস, পরীক্ষা সেমিনার, লাইব্রেরির ব্যস্ততার মাঝে ইফতারের সময়টা হয়ে ওঠেছে এক প্রশান্তির বিরতি। ক্যাম্পাসে যেন এক আলাদা উচ্ছ্বাসের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। গড়ে ওঠেছে এক মধুর মিলনমেলা।
রসায়ন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জামিউল ইসলাম জয় বলেন, “পরিবার থেকে দূরে, রমজানে বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতার চাদর থেকে দূরে থেকেও ক্ষণিকের জন্য বন্ধুত্বের মিশেলে এই সময়টুকুই হয়ে ওঠে অনন্য। দলগত ইফতারে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পাশাপাশি পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নতি হয়।”
ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসাইন্স বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাকিউর রহমান সরকার তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “ফিশারিজ বিভাগ আমাদের পরিবারের মত। পরিবারে যেমন ভাই-বোন এক সঙ্গে ইফতার করলে অনেক ভালো লাগে। তেমনি বিভাগে সিনিয়র জুনিয়র মিলে ইফতার করলে অনেক ভালো লাগা কাজ করে। এটাই হয়তোবা ফিশারিজ পরিবারের সঙ্গে আমার শেষ ইফতার।”
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র ইফত র রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আবরার হত্যা: আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় কাল
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), জেল আপিল ও আপিলের ওপর আগামীকাল রোববার রায় ঘোষণা হতে পারে।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের রোববারের কার্যতালিকায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিল রায়ের জন্য রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, রাষ্ট্র বনাম মেহেদী হাসান রাসেল এবং অন্যান্য শিরোনামে রায়ের জন্য ডেথ রেফারেন্সটি কার্যতালিকায় রয়েছে। ডেথ রেফারেন্সের নিচে লেখা আংশিক শ্রুত; এর সঙ্গে আপিল ও জেল আপিলগুলো রয়েছে।
ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), জেল আপিল ও আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এখন রায়ের জন্য আদালতের রোববারের কার্যতালিকায় এলো।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।’ অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
ওই মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়, যেটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
ফৌজদারি কোনো মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে, তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যেটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করতে পারেন। সাধারণত ডেথ রেফারেন্স ও এসব আপিলের ওপর একসঙ্গে হাইকোর্টে শুনানি হয়ে থাকে।
ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর কারাগারে থাকা দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেল আপিল ও আপিল করেন। পৃথক জেল আপিল গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে ওঠে। সেদিন আদালত তা শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। পাশাপাশি নিয়মিত আপিল করেন কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা। আসামিদের এই ডেথ রেফারেন্স, জেল আপিল ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে একসঙ্গে শুনানি হয়।
গত বছরের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু করে। এরপর পেপারবুক থেকে উপস্থাপনের মাধ্যমে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় শুনানি হয়। সেদিন থেকে মধ্যে এক দিন ছাড়া প্রতি কার্যদিবসে শুনানি হয়। সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি নিয়ে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, খন্দকার বাহার রুমি, নূর মুহাম্মদ আজমী ও রাসেল আহম্মেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল জব্বার জুয়েল, লাবনী আক্তার, তানভীর প্রধান ও সুমাইয়া বিনতে আজিজ শুনানিতে ছিলেন। আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, মাসুদ হাসান চৌধুরী, মোহাম্মদ শিশির মনির প্রমুখ শুনানিতে অংশ নেন।