যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল তহবিলে পরিচালিত ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) ‘ট্রাম্পবিরোধী’ ও ‘উগ্রবাদী’, এমন অভিযোগ তুলে সংবাদ সংস্থাটির ব্যয় কমিয়ে এটির আকার একেবারে ছোট করে ফেলতে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করদাতাদের যেন আর উগ্রবাদী প্রচারে অর্থ ব্যয় করতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে এই আদেশ জারি করা হয়েছে।

মার্কিন ধনকুবের এবং ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টাদের অন্যতম ইলন মাস্ক তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) ব্যবহার করে ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ট্রাম্প মার্কিন সরকারের ব্যয় কমানোর কাজ দেখভালের দায়িত্ব যে অধিদপ্তরের ওপর দিয়েছেন, মাস্ক সেটির প্রধান।

ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) মূলত একটি রেডিও পরিষেবা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কাজ করতে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভিওএ কর্তৃপক্ষ বলেছে, এখনো তারা সপ্তাহে গড়ে কয়েক কোটি শ্রোতার কাছে পৌঁছাতে পারেন।

ভিওএর পরিচালক মাইক আব্রামোভিচ বলেছেন, তিনি এবং বলতে গেলে তাঁর ১ হাজার ৩০০ কর্মীর প্রায় সবাইকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

এর ফলে ভিওএ তার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনে অক্ষম হয়ে পড়েছে বলেও মনে করেন আব্রামোভিচ। তিনি বলেন, বিশেষ করে এখনকার মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, যখন ইরান, চীন ও রাশিয়ার মতো প্রতিপক্ষ দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে অসম্মান করার লক্ষ্যে মিথ্যা গল্প তৈরি করতে কোটি কোটি ডলার খরচ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের সংগঠন ন্যাশনাল প্রেসক্লাব বলেছে, এই আদেশ মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতির অবমূল্যায়ন।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, যদি রাতারাতি একটি পুরো সংবাদকক্ষকে একপাশে সরিয়ে দেওয়া হয়, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অবস্থা নিয়ে তারা আর কী–ই বা বলতে পারেন। একটি সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে টুকরো টুকরো করে ফেলা হচ্ছে। এটি শুধু কর্মীসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নয়, এটি একটি মৌলিক পরিবর্তন যা ভিওএতে স্বাধীন সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎকে বিপদগ্রস্ত করবে।

ট্রাম্পের আদেশের লক্ষ্যবস্তু ভিওএর মূল (মাদার) কোম্পানি ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়া (ইউএসএজিএম)।

সিবিএস নিউজ বলেছে, ভিওএর কর্মীদের ই–মেইল করে তাঁদের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। ইউএসএজিএমের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ক্রিস্টাল টমাস কর্মীদের ওই ই–মেইল পাঠিয়েছেন।

একটি সূত্র সিবিএসকে বলেছে, সব ফ্রিল্যান্স কর্মী ও আন্তর্জাতিক চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বলা হয়েছে যে এখন তাঁদের দেওয়ার মতো কোনো অর্থ নেই।

সিবিএস ই–মেইলগুলো দেখেছে। সেগুলোয় দেখা গেছে, রেডিও ফ্রি এশিয়া এবং রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টির প্রধানদের বলা হয়েছে, তাঁদের ফেডারেল বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।

ভিওএ ও ইউএসএজিএমের অধীন অন্য সংবাদমাধ্যমগুলো বিশ্বজুড়ে ৪০ কোটির বেশি শ্রোতাকে সেবা দেওয়া কথা বলেছে।

চেক প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ান লিপাভস্ক বলেছেন যে তিনি আশা করছেন, প্রাগে রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি চালু রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাহায্য করবে।

লিপাভস্ক আরও বলেন, তিনি আজ সোমবার ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠকে আংশিকভাবে হলেও রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টির পরিষেবা চালু রাখার পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুনট্রাম্পের নির্দেশে ভয়েস অব আমেরিকার ১৩০০ কর্মী ছুটিতে যাচ্ছেন১৬ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের নির্দেশে ভয়েস অব আমেরিকার ১৩০০ কর্মী ছুটিতে যাচ্ছেন

ভয়েস অব আমেরিকার ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি কর্মীকে গতকাল শনিবার থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আরও দুটি সংবাদমাধ্যমের তহবিলও বাতিল করা হয়েছে।

এক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারি তহবিলে পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার মূল প্রতিষ্ঠান এবং আরও ছয়টি ফেডারেল সংস্থাকে কর্মী হ্রাস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ভয়েস অব আমেরিকার পরিচালক মাইকেল আব্রামোভিচস বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ হাজার ৩০০ সাংবাদিক, প্রযোজক ও সহযোগীদের প্রায় সবাইকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৫০টি ভাষায় পরিচালিত এই সম্প্রচার মাধ্যমকে প্রায় পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে এক পোস্টে আব্রামোভিচ লেখেন, ‘৮৩ বছরের মধ্যে প্রথমবার বহু ভাষাভাষীর ভয়েস অব আমেরিকা নীরব হয়ে যাচ্ছে, এ জন্য আমি গভীরভাবে ব্যথিত। বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াইয়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছিল।’

ভয়েস অব আমেরিকার মূল প্রতিষ্ঠান দ্য ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়া (ইউএসএজিএম) তাদের আরও দুই সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি ও রেডিও ফ্রি এশিয়ার বরাদ্দও বাতিল করা হয়েছে। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে রেডিও ফ্রি ইউরোপ সম্প্রচারিত হয়। এ ছাড়া ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকেও এটি শোনা যায়। রেডিও ফ্রি এশিয়া চীন ও উত্তর কোরিয়ায় সম্প্রচারিত হয়।

ট্রাম্পের এই নির্দেশে জনপ্রিয় একটি সংবাদমাধ্যম ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোতেও ভয়েস অব আমেরিকা নির্ভরযোগ্য সংবাদের মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়।

গত শুক্রবার ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন। ওই আদেশে ইউএসএজিএম এবং আরও ছয়টি স্বল্প পরিচিত সংস্থাকে তাদের কার্যক্রমের পরিধি আইন অনুযায়ী সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। বলা হয়, আমলাতন্ত্রকে সংকুচিত করতে এটা করা জরুরি।

নাৎসি প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে ১৯৪২ সালে ভয়েস অব আমেরিকা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখনো এক সপ্তাহে ভয়েস অব আমেরিকার গ্রাহক বিশ্বের ৩৬ কোটি মানুষ।

একটি গ্রুপ হিসেবে ইউএসএজিএমের কর্মীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। কংগ্রেসের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে তাদের বাজেট বরাদ্দ ছিল ৮৮ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।

ভয়েস অব আমেরিকার সাবেক উপস্থাপক ক্যারি লেককে প্রতিষ্ঠানটির নতুন পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তিনি ট্রাম্পের অনুগত হিসেবে পরিচিত।

একটি বিবৃতিতে লেক ইউএসএজিএমকে ‘দৈত্যকার একটি পচে যাওয়া প্রতিষ্ঠান এবং আমেরিকার করদাতাদের ওপর বোঝা’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং বলেন, এটিকে আর কার্যকর করা সম্ভব নয়।

িবৃতিতে লেক নিজেকে ইউএসএজিএমের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, তিনি আইনের অধীন প্রতিষ্ঠানটির আকার যতটা সম্ভব কমিয়ে আনবেন।

রেডিও ফ্রি ইউরোপ তাদের ওয়েব সাইটে বলেছে, রাশিয়া সরকার তাদের অবাঞ্ছিত প্রতিষ্ঠান বলে ঘোষণা করেছে এবং রাশিয়া ও রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের অঞ্চলগুলোতে দর্শকশ্রোতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, যদি রেডিও ফ্রি ইউরোপের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ থাকে অথবা তারা এর কোনো বিষয়বস্তু শেয়ার করে, তবে তাদের জরিমানার মুখোমুখি বা কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে।

চেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ান লিপাভস্কি বলেন, রেডিও ফ্রি ইউরোপ কর্তৃত্ববাদী শাসনে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ‘বাতিঘর’ ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিপাভস্কি লেখেন, ‘যাঁরা স্বাধীন নন, তাঁদের জন্য বেলারুশ থেকে ইরান, রাশিয়া থেকে আফগানিস্তান, আরএফই এবং ভয়েস অব আমেরিকা খবর পাওয়ার অল্প কয়েকটি স্বাধীন উৎস।’

আরও পড়ুনভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের রেডিও সম্প্রচার বন্ধ হচ্ছে১৫ জুলাই ২০২১

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভয়েস অব আমেরিকার ১৩০০ কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটি 
  • বাধ্যতামূলক ছুটিতে ভয়েস অব আমেরিকার ১৩০০ কর্মী
  • ট্রাম্পের নির্দেশে ভয়েস অব আমেরিকার ১৩০০ কর্মী ছুটিতে যাচ্ছেন