সাতক্ষীরায় আহ্ছানিয়া মিশনে প্রতিদিন একসঙ্গে ৬ হাজার মানুষের ইফতারি
Published: 17th, March 2025 GMT
পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন একসঙ্গে এক-দুই হাজার নয়, একসঙ্গে ছয় হাজার মানুষের ইফতারির আয়োজন করা হয়। বছরের পর বছর ধরে চলছে এ আয়োজন। এই বিশাল আয়োজন করছে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃপক্ষ।
আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৩৫ সালে খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (রহ.) নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে আসার পর ১৯৪০-৪১ সাল থেকে তিনি প্রতিবছরই রমজানে এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন। প্রথম অবস্থায় স্বল্প পরিসরে কয়েকজনকে নিয়ে তিনি মিশন মসজিদে এ আয়োজন করতেন। পরে কলেবর বাড়তে থাকলে ইফতারির আয়োজন করতেন মিশন চত্বরে। তাঁর মৃত্যুর পরও এ আয়োজন অব্যাহত আছে। এখন এখানে একসঙ্গে ছয় হাজারের মতো মানুষ ইফতারি করেন। প্রতিনিয়তই এ সংখ্যা বাড়ে।
এ মিশনের মুখ্য হিসাবরক্ষক এবাদুল হক বলেন, শেডের নিচে বর্তমানে পাঁচ হাজার ব্যক্তির বসার ব্যবস্থা করা হয়। বাকি এক হাজার মানুষের ইফতারি আশপাশের বাড়িতে পাঠানো হয়। ইফতারিতে ডিম, ছোলা, চিড়া, ফিরনি, কলা, শিঙাড়া ও খেজুর দেওয়া হয়। এতে প্রতিদিন ব্যয় হয় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মিশনের শুভাকাঙ্ক্ষীরা এই খরচের জোগান দেন। রোজার দেড় মাস আগ থেকে তাঁদের প্রস্তুতি শুরু হয়। ঝড়বৃষ্টিতে রোজাদারদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্য প্রায় ছয় লাখ টাকা দিয়ে চলতি বছর অস্থায়ী শেড নির্মাণ করা হয়েছে। অস্থায়ী শেড প্রতি রমজান মাসে করা হয়ে থাকে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নলতা আহ্ছানিয়া মিশন বিশ্রামাগার চত্বরের পেছনে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। ২১ জনের একদল কর্মীর সমন্বয়ে কাজ চলছে। এ সময় সেখানে কাজ করতে থাকা জাকির হোসেন বলেন, ভোর পাঁচটা থেকে শুরু হয় ইফতারি তৈরির আয়োজন। তাঁদের কেউ ছোলা, কেউ ফিরনি রান্নার কাজ করেন। আবার কেউ শিঙাড়া, ডিম সেদ্ধ ও চিড়া ভেজানোর কাজে ব্যস্ত হন। অনেকে কলা ও খেজুর পরিষ্কার ও বাছাইয়ের কাজ করছেন। কেউ বোতলে পানি ভরছেন। কেউ থালা-বাটি পরিষ্কার করছেন। ইফতারের পর আবার সব গুছিয়ে রাখতে রাখতে রাত ১০টা বেজে যায়।
ভোর থেকে ইফতারি তৈরির মালামাল আসতে থাকে। প্রতিদিন বেলা আড়াইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত চলে ইফতারি তৈরির কাজ। বেলা দুইটার পর থেকে এক দল স্বেচ্ছাসেবক শুরু করেন বিশাল মাঠে ইফতার করার স্থান প্রস্তুতের কাজ।
অন্যান্য বছরের মতো ইফতারি তৈরির প্রধান বাবুর্চির দায়িত্ব পালন করছেন নলতা গ্রামের মো.
শিঙাড়া তৈরি করেন ১২ জনের একটি দল। ওই দলের প্রধান নলতা মোবারকপুর গ্রামের মো. মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে নলতা আহ্ছানিয়া মিশনে তিনি ইফতারি তৈরি কাজ করছেন। দেখতে দেখতে ৩৭ বছর পেরিয়ে গেল। আগে অল্প কয়েকজন সব কাজ করতেন। এখন কাজ সব ভাগ করা। বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর থেকে যখন মানুষ আসা শুরু করে, মনে হয় মিছিল আসছে। এত মানুষ দেখে মন জুড়িয়ে যায়।
স্বেচ্ছাসেবক দলের মাসুম বিল্লাহ বলেন, প্রতিদিন মাঠ প্রস্তুত, বসার ব্যবস্থা ও ইফতারি সরবরাহ করার জন্য চারটি দলে ৩০০ জনের স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন। সবাই এসেছেন নিজ উদ্যোগে। কথায় কথায় স্বেচ্ছাসেবকদের একজন মোমিনুর রহমান বলেন, ‘এখানে দূরদূরান্ত থেকে রোজাদারেরা ইফতার করতে আসেন। তাঁরা এসে যাতে ভালোভাবে বসতে পারেন, ইফতারি করতে পারেন, আমরা সেই চেষ্টা করি।’
নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন কার্যকরী পরিষদের সদস্য আবুল ফজল বলেন, ছয়টা বাজতে না বাজতেই বিশাল শামিয়ানার নিচ পূর্ণ হয়ে যায়। কাতারে কাতারে বসা রোজাদারদের সামনে স্বেচ্ছাসেবকেরা পৌঁছে দিতে থাকেন ইফতারি। ওই সময় যে দৃশ্যের সৃষ্টি হয়, তা ভ্রাতৃত্বের মিলনমেলা।
যশোর থেকে এখানে ইফতার করতে এসেছেন সাতজনের একটি দল। সেই দলের একজন মো. রকনুজ্জামান বলেন, ৮-১০ ধরে তাঁরা এখানে আসছেন। এত মানুষ মিলে ইফতার করার আনন্দ অন্য রকম।
নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, একসময় ১০ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হতো। কিন্তু করোনা মহামারির পর এ সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ জ র ম ন ষ র ইফত র ইফত র র একসঙ গ ত র কর ক জ কর র র পর করত ন করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
৫ বছরের জন্য উৎসে কর কমানোর দাবি বিজিএপিএমইএর
পাঁচ বছরের জন্য পণ্য রপ্তানিতে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও মোড়কপণ্য সরবরাহকারী কারখানামালিকদের সংগঠন বিজিএপিএমইএ। এ ছাড়া স্থানীয় বাজার থেকে কেনা কাঁচামালের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার, স্থায়ী বা অস্থায়ী আন্তঃ বন্ড স্থানান্তরের ব্যবস্থা, একসঙ্গে দুই বছরের জন্য আমদানিপ্রাপ্যতা প্রদানসহ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য এই দাবিগুলো জানায় বিজিএপিএমইএ। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাক্–বাজেট আলোচনায় দাবিগুলো তুলে ধরেন বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো. শাহরিয়ার।
বিজিএপিএমইএ বলছে, তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম এবং পোশাকসহ অন্য খাতের মোড়কপণ্য উৎপাদনে দেশ এখন স্বাবলম্বী। বর্তমানে কার্টন, পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, বোতাম, লেবেল, জিপার, হ্যাংট্যাগ ও গাম টেপসহ পোশাক খাতের ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের সরঞ্জাম এবং অন্যান্য খাতের মোড়ক তৈরি করে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। বিজিএপিএমইএর সদস্যসংখ্যা প্রায় দেড় হাজার।
মো. শাহরিয়ার কাঁচামালের আমদানি প্রাপ্যতা একসঙ্গে দুই বছর দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, দুই বছরের জন্য আমদানি প্রাপ্যতা দেওয়া হলে সেবাদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হবে। বন্ডের আওতায় বিনা শুল্কে আমদানির সুযোগ থাকায় রাজস্বের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না। এ ছাড়া তিনি কন্টিনিউয়াস বন্ডের সুবিধা চান। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতের মতো এ উপখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোয় কন্টিনিউয়াস বন্ডের সুযোগ না থাকায় উৎপাদন কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। এতে রপ্তানি কমে যায়।
কোম্পানির সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানতের মুনাফার ওপর উৎসে কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার দাবি জানান বিজিএপিএমইএর সভাপতি। তিনি বলেন, টাকার অবমূল্যায়ন ও ডলার–সংকটসহ বিভিন্ন কারণে তফসিলি ব্যাংকগুলোতে তারল্যসংকট রয়েছে। তারল্যসংকট দূরীকরণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঞ্চয়ী বিনিয়োগ ভালো ভূমিকা রাখে। তাই আমানতের মুনাফার ওপর উৎসে কর কমালে দেশের রপ্তানি বাড়বে।
পাঁচ বছরের জন্য উৎসে কর দশমিক ৫ শতাংশ করার দাবি জানানোর পেছনে মো. শাহরিয়ারের যুক্তি হলো, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে কোনো পণ্যে আর্থিক প্রণোদনা দিতে পারবে না। এরই মধ্যে প্রণোদনা কমাতে শুরু করেছে সরকার। প্রণোদনা হ্রাস বা বন্ধ হলে কিছু পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে পারবে না। সে জন্য উৎসে কর কমানো হলে রপ্তানি উৎসাহিত হবে।