উত্তর মেসিডোনিয়ায় নৈশ ক্লাবে আগুনে হতাহত ব্যক্তিদের শুরুতেই যে হাসপাতালে নেওয়া হয়, তার বাইরে আহাজারি করছিলেন দ্রাগি স্টোজানোভ। আগুনে একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছেন এই বাবা।

স্টোজানোভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে সবার সামনে বলতে দিন, আমার ছবি তুলুন। আমি একজন মৃত মানুষ, আমি সবকিছু হারিয়েছি...পুরো ইউরোপের জানা দরকার। দুঃখজনক এই ঘটনার পর, এ জীবন দিয়ে আমি কী করব? আমি এ জীবন চাই না। আমার একটি সন্তানই ছিল এবং আমি তাঁকে হারিয়ে ফেলেছি।’

স্থানীয় সময় গত শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ইউরোপের বলকান অঞ্চলের দেশ নর্থ মেসিডোনিয়ায় দ্য পালস ক্লাব নামে একটি নৈশ ক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫৯ জন নিহত এবং আরও ১৫৫ জন আহত হয়েছেন।

সেই রাতে বোনকে নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছিলেন মারিজা তাসেভা। দুবোন মিলে গিয়েছিলেন কোচানির ওই নৈশ ক্লাবে, দেশটির জনপ্রিয় হিপ হপ ব্যান্ড ডিএনকের গান শুনতে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ১৯ বছর বয়সী তাসেভা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘সবাই চিৎকার শুরু করে এবং বলতে থাকে, বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও।’

আগুন থেকে বাঁচতে লোকজন পাগলের মতো বেরিয়ে যাওয়ার দরজার দিকে ছুটতে থাকে। কিন্তু বেরিয়ে যাওয়ার একটি মাত্র পথ ছিল এবং সেখানে প্রায় ৫০০ মানুষ ছিল। নৈশ ক্লাবের পেছন দিকে আরেকটি দরজা থাকলেও সেটি তালাবদ্ধ ছিল।

তাসেভা বলেন, ‘আমি জানি না কীভাবে, কিন্তু আমি মাটিতে পড়ে গিয়েছিলাম, আমি উঠতে পারছিলাম না এবং সেই সময় লোকজন আমাকে পদদলিত করে চলে যেতে থাকে।’

তবে শেষ পর্যন্ত প্রাণ নিয়ে সেখান থেকে বের হতে পেরেছেন তাসেভা, কিন্তু তাঁর বোন পারেনি।

তাসেভা বলেন, ‘আমার বোন মারা গেছে। আমি বেঁচে গেছি, সে পারেনি।’

এ ঘটনার জন্য দায়ী সন্দেহে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যেসব মন্ত্রণালয় থেকে ওই অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেখানকার কর্মকর্তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দ্য পালস ক্লাবে শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে (রোববার ০১:৩০ জিএমটি) আগুনের সূত্রপাত হয়।

রাজধানী থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরের শহর কোচানিতে নৈশ ক্লাবটি অবস্থিত। নৈশ ক্লাব হিসেবে পরিচালনার জন্য সেটির নিবন্ধন ছিল না। আগে এটি কার্পেট রাখার গুদাম ছিল।

ওই নৈশ ক্লাব পরিচালনার সঙ্গে ঘুষ প্রদান এবং দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

কোচানি হাসপাতালের প্রধান ক্রিস্টিনা সেরাফিমোভস্কা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার সময় পদদলিত হয়ে বেশির ভাগ মানুষ মারা গেছেন।’

সংবাদ সংস্থা এএফপিকে সেরাফিমোভস্কা বলেছেন, ‘৭০ জন রোগী পোড়া ক্ষত এবং কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।’

হাসপাতালের বাইরে থাকা রেডক্রসের স্বেচ্ছাসেবক মোস্তফা সাইদভ বলেছেন, যারা মারা গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ।

সাইদভ আরও বলেন, ভেতরে যেখানে মৃতদেহ শনাক্ত করা চলছে, সেখানে পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ। সেখানে যেসব বাবা-মা এসেছেন, তাঁদের বয়সও কম, তাঁরা চল্লিশের কোঠায়। তাঁদের সন্তানদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। পরিস্থিতি নিষ্ঠুর, বিশৃঙ্খল, গল্পগুলো খুবই বেদনাদায়ক এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক তরুণ প্রাণ হারিয়েছেন।’

কেউ কেউ নিজেদের সন্তানদের খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন এক ব্যক্তি। আগুনে ওই ব্যক্তির এক স্বজন আহত হয়েছেন।

হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা প্রিয়জনের খবর পেতে হাসপাতালের বাইরে ভিড় করছেন। অনেককে ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছে, কেউ কেউ জবাব খুঁজছেন।

উত্তর মেসিডোনিয়ার প্রেসিডেন্ট গোরদানা সিলজানভস্কা-দাভকোভা বলেছেন, এ ঘটনার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এবার যাঁরা জড়িত, তাঁদের কেউ বিচার এড়াতে পারবেন না।

প্রেসিডেন্ট বলেছেন, মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু হয় না, বিশেষ করে তরুণ প্রাণের।

গুরুতর আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বুলগেরিয়া, গ্রিস, সার্বিয়া ও তুরস্কের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোরদানা।

এ ঘটনায় উত্তর মেসিডোনিয়ায় সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও পড়ুননর্থ মেসিডোনিয়ার নৈশক্লাবে আগুন, নিহত ৫৯১৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ন র জন য ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

‘পুষ্পা’ নির্মাতার পরের ছবিতে খলনায়ক শাহরুখ

দক্ষিণের মণিরত্নম, অ্যাটলি কুমারের সঙ্গে কাজ করেছেন বলিউড তারকা শাহরুখ খান। এবার দক্ষিণের আরেক খ্যাতনামা পরিচালকের সঙ্গে তাঁর কাজ করার খবর নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। খবর যে ‘পুষ্পা’ পরিচালক সুকুমারের সঙ্গে হাত মেলাতে চলেছেন ‘কিং খান’। আর সুকুমারের ছবিতে তাঁকে নেতিবাচক চরিত্রে দেখা যাবে বলে শোনা যাচ্ছে। এই গুঞ্জন প্রকাশ্যে আসার পর সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে।

দক্ষিণের পরিচালকেরা শাহরুখ খানের সঙ্গে কাজ করতে দারুণ আগ্রহী। এই তালিকায় আছে সুকুমারের নাম। এর আগে গুঞ্জন ছিল যে সুকুমারের সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারধর্মী ছবিতে আসতে চলেছেন শাহরুখ।

সুকুমার। নির্মাতার ফেসবুক থেকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ