ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত এ হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন শিশুও রয়েছে বলে জানিয়েছে হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর স্বাস্থ্য বিভাগ। খবর বিবিসির। 

ওয়াশিংটন জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন হুতি নেতাও রয়েছেন। যদিও হুতি গোষ্ঠী এই বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি। 

হুতি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, সোমবার (১৭ মার্চ) ভোরে রাতে বন্দরনগরী হুদাইদা এবং আল জাউফ এলাকায় নতুন করে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। 

আরো পড়ুন:

আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করে অভিযুক্ত ভেনেজুয়েলানদের বহিষ্কার করলো যুক্তরাষ্ট্র

যুদ্ধবিরতি নিয়ে পুতিনের সঙ্গে মঙ্গলবার কথা বলবেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বাহিনী শনিবার থেকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর বড় ধরনের বিমান হামলা শুরু করে। লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলে হুতিদের আক্রমণ বন্ধ করার লক্ষ্যে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে এই অভিযান বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বিবিসি বলছে, গত জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যে হুতিদের বিরুদ্ধে চলমান এই হামলাই এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান।

হুতি নেতা আব্দুল মালিক আল হুতি বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনে আক্রমণ চালিয়ে যাবে, ততদিন পর্যন্ত তার সশস্ত্র বাহিনী লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলোকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে যাবে।

নিহতের সংখ্যা হালনাগাদ করে হুতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনিস আল আসবাহি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছেন, পাঁচ শিশু এবং দুইজন নারীসহ ৫৩ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া এতে আহত হয়েছে ৯৮ জন।

দুই সন্তানের বাবা আহমেদ বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমি ১০ বছর ধরে সানায় বসবাস করছি, যুদ্ধের গোলাগুলির শব্দ শুনছি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কসস, এর আগে কখনও আমার এমন কিছুর অভিজ্ঞতা হয়নি।  

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহতভাবে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ফক্স টেলিভিশনের এক বিজনেস সাক্ষাৎকারে হেগসেথ বলেন, আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এই ক্ষেপণাস্ত্র অভিযান নৌপথের স্বাধীনতা এবং প্রতিবন্ধকতা থেকে পুনরুদ্ধারের অভিযান।

এর আগে গত শনিবার হুতিদের ওপর বিমান হামলার ঘোষণা দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের অপ্রতিরোধ্য প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করবো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেন, ইরানের অর্থায়নে এই হুথি ডাকাতরা যুক্তরাষ্ট্রের বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং আমাদের সৈন্য এবং মিত্রদের লক্ষ্য করেছে।

তাদের জলদস্যুতা, সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদের জন্য বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে এবং অনেকের জীবনকে হুমকিতে পড়েছে বলেও লিখেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হুতিদের সরাসরি সম্বোধন করে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে লিখেন, যদি তারা না থামে, তোমাদের ওপর ‘নরক বৃষ্টি’ হবে যা তোমরা আগে কখনও দেখোনি।

এদিকে হুতি গোষ্ঠী বলেছে, ইসরায়েল গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত তারা লোহিত সাগরের জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে এবং তাদের বাহিনী হামলার জবাব দেবে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, ইরানের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের ওপর নাক গলাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কর্তৃত্ব নেই। রবিবার (১৬ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ইসরায়েলি গণহত্যা এবং সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন বন্ধ করুন। ইয়েমেনি জনগণকে হত্যা বন্ধ করুন। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তেহরানকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আপনাদের সম্পূর্ণ জবাবদিহির আওতায় আনবে। এটি কিন্তু আপনাদের জন্য ভালো হবে না।

এক দশকের বেশি সময় ধরে ইয়েমেনে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে হুতিরা। ইয়েমেনের অধিকাংশ অঞ্চলই এখন তাদের দখলে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হলে এর প্রতিবাদে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে তারা ১০০ এর বেশি হামলা চালিয়েছে।

এরপর হুতিদের থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে হামলা শুরু হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তাই নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসে আবারও হুতিদের ওপর হামলার নির্দেশ দিলেন।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বল ছ ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

‘হতাশা তাড়িয়ে নতুন গতির সঞ্চার’

জ্যাক মা। চীনা ধনকুবের। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আলিবাবা থেকে অবসরে যান চীনের শিক্ষক দিবসে। ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা জ্যাক নিজেই এই দিনটিকে বিদায়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। বিদায়বেলা ৬০ হাজার কর্মীর সামনে দেওয়া জ্যাক মার বক্তৃতা থেকে অনুপ্রেরণার কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক

আজকের এই দিন, এই মঞ্চ আমার চেয়ে আলিবাবার সাফল্য এবং প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম-শৃঙ্খলার কথা বেশি মনে করিয়ে দিচ্ছে। বদলাচ্ছে পৃথিবী। এই বদলের প্রভাবও পড়ছে আমাদের ওপর। ফলে সামনে আসছে নতুন চ্যালেঞ্জ। প্রকৃতিও যাচ্ছে খারাপের দিকে। বাড়ছে আমাদের দুশ্চিন্তা। দরজায় দাঁড়িয়ে যেন টোকা দিচ্ছে নতুন দিন। নতুন হাওয়া। নতুন দিনের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন ও তার ব্যাপকতা এবং মানবিকতা। এই তিনটি লক্ষ্য যদি প্রযুক্তির হাত ধরে আমরা অর্জন করতে না পারি, তবে পৃথিবীর আলো-বাতাস আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে আমাদের জন্য।
উদারতাই বড় শক্তি
এই সময়ে দাঁড়িয়ে আপনি নিজেকে বড় প্রতিষ্ঠান বা সেরা প্রতিষ্ঠানে দেখতে না পেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। যে প্রতিষ্ঠানেই থাকুন না কেন, আপনার উদারতা এখন বড় শক্তি। এই শক্তি বলে আপনি ছোট প্রতিষ্ঠানে থেকেও দুনিয়া জয় করতে পারবেন। কেউ কেউ মনে করে বড় প্রতিষ্ঠানে তেমন ভুল হয় না। এটি ভুল ধারণা ছাড়া কিছুই নয়। আশপাশের অন্য দশটি প্রতিষ্ঠানের মতোই আলিবাবার ভুলের স্তূপ অনেক বড়। তবে আমরা এই ভুল থেকে ফুল ফুটিয়েছি। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এই ক্ষেত্রে সব সিদ্ধান্ত অর্থকেন্দ্রিক ছিল না। প্রতিষ্ঠান এবং মানবিকতাও ছিল আমাদের সিদ্ধান্তের শরীরজুড়ে।
প্রযুক্তি শুধুই ভালোর জন্য
ভালো এবং খারাপ সব কিছুতেই থাকে। আমি বিশ্বাস করি প্রযুক্তি শুধু ভালোর জন্য। এটি মানুষের হতাশা তাড়িয়ে নতুন গতির সঞ্চার করে। স্বপ্ন দেখায় নতুন করে। ভাবতে শেখায় তুমুল গতিতে। আলিবাবার ২০ বছরের যে জার্নি তাতে চোখ রাখলে বলতেই পারি যে, আগামীর দিনগুলোতে এ প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিতে ভর করে তুমুল গতিতে ছুটে চলবে। গতির এই ট্র্যাকে আলিবাবা তুলে আনবে  বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান ও তাদের কর্মীদের।
কেন করি এত অহংকার!
কত জায়গায় ঘুরেছি ব্যবসার কাজে। একবার গ্রিনিচ মানমন্দির ঘোরার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেখানে চোখ বড় করে ছায়াপথ ধরে ঘুরছি তো ঘুরছি! একসময় গোটা ছায়াপথ শেষও করে ফেলি। খুঁজে পাইনি সূর্য এবং প্রিয় পৃথিবীটাকে। তখন নিজেকে নিয়ে ভাবনায় পড়ে যাই। এত বড় ছায়াপথে পৃথিবীর অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না অথচ আমি এই পৃথিবীর কোনো এক কোণে পড়ে থাকা কোনো নচ্ছাড়! তবু এই পৃথিবীতে অনেক কিছুই আছে উপভোগ্য। অনেক কিছুই এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যা নিয়ে কাজ করা যায় অনায়াসে। আমি আগ্রহ নিয়ে এসবে পড়ে থাকতে চাই।
মানবিকতা জাগিয়ে তোলার কাজে...
প্রত্যেকের একটা নিজস্ব জগৎ থাকে। সেই জগৎজুড়ে ছড়িয়ে থাকে রাজ্যের স্বপ্ন। আলিবাবা আমার তেমনি অসংখ্য স্বপ্নের একটি।
মানুষ সেই স্বপ্নের পেছনে ছোটে। আমিও ছুটব। চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেওয়া মানে হাত-পা গুটিয়ে অবসরে চলে যাওয়া নয়। নতুন করে ব্যস্ততায় ডুব দেওয়া। শিক্ষা, পরিবেশ রক্ষা এবং মানুষের মধ্যে মানবিকতা জাগিয়ে তোলার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাই। এ কাজগুলোর অপেক্ষাই যেন করেছি এতদিন ধরে।
প্রিয় সবুজের কাছে
অপেক্ষার প্রহর গোনা হয়তো শেষ। কাল থেকে জীবন বইয়ের নতুন পৃষ্ঠা উল্টাব। চলে যাব প্রিয় সবুজের কাছে। সবুজই আমার প্রাণ! এই প্রকৃতি আর মানবিকতার কাছ থেকে আমি অবসর চাই না। তাদের জন্য মাঠে নামব কাল থেকে। তাদের সঙ্গে পথচলার নতুন অধ্যায় শুরু করব জীবনের। সেই জীবন পাহাড় ধরে কখনও আকাশপানে ছুটবে, কখনও ঝরনা থেকে গড়িয়ে নদী-সাগর হয়ে বয়ে চলবে অনন্ত পথের দিকে। এই পথে দেখা হবে আমাদের! 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঈদের ইত্যাদিতে এবারও বিদেশিদের জমকালো উপস্থিতি
  • ‘হতাশা তাড়িয়ে নতুন গতির সঞ্চার’