জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস পরিবর্তন করার একটি সুপারিশ করেছে। ছয়টি আবশ্যিক বিষয় অন্তর্ভুক্তসহ পরীক্ষার নম্বর পুনর্বণ্টন করে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয় সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ।

বহুদিন ধরেই বিসিএস প্রার্থীদের অভিযোগ যে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেশি সুবিধা পান। যে বিষয়টি নিয়ে তাঁদের আক্ষেপ, সেটি হলো গণিত। প্রার্থীরা বলছেন, গণিত বাদ দিলে ফ্যাকাল্টিভিত্তিক বৈষম্য দূর হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা কমিশনের প্রস্তাব করা বিসিএসের সিলেবাস নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁরা মনে করেন, এতে প্রার্থীর মেধা যাচাইয়ে ঘাটতি থাকবে। এই ক্ষোভ আমলে নিয়ে বিসিএস লিখিত অংশ থেকে গণিত বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। একই যুক্তিতে বিসিএসের সিলেবাস থেকে বাদ পড়েছে মানসিক দক্ষতাও।

এ পরিস্থিতিতে বিসিএস সাধারণ ক্যাডারের লিখিত পরীক্ষার বিষয় নির্ধারণ অধিকতর বিশ্লেষণের দাবি রাখে। বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করতে হলে একজন প্রার্থীকে ন্যূনতম চার বছর মেয়াদি স্নাতক বা সমমান ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। তবে যদি কোনো প্রার্থী এইচএসসি পাস করার পর তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি বা সমমানের কোর্স করে থাকেন, তবে তাঁকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (মাস্টার্স) পাস করতে হয়। এরপরই তিনি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য হবেন।

মূল কথা হলো একজন প্রার্থী উচ্চতর শিক্ষা লাভ করার পর সামগ্রিক জ্ঞানের প্রতিযোগিতায় বিসিএসে অংশগ্রহণ করেন। তাই বিসিএসের সিলেবাসকে মাধ্যমিক কারিকুলামের ভিত্তিতে বিবেচনা না করে স্নাতকভিত্তিক বিবেচনাই বেশি যুক্তিসংগত বলে দাবি রাখে। বিসিএসের সিলেবাস অনুসারে অর্জিত জ্ঞানকে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত করে তিনটি ভাগে বিভাজন করা যায়।

বর্তমান সিলেবাস (৬টি বিষয়) ও মানবণ্টন (মোট ৯০০ নম্বর) অনুসারে মানবিক অনুষদ (বাংলা-২০০, ইংরেজি-২০০, বাংলাদেশ বিষয়াবলি-২০০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি-১০০) ৭৭.

৭৮ শতাংশ এবং বিজ্ঞান অনুষদ (গাণিতিক যুক্তি-৫০, মানসিক দক্ষতা-৫০, সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-১০০) ২২.২২ শতাংশ সিলেবাস-সুবিধা পেয়ে থাকেন।

সুপারিশ করা সিলেবাস (৬টি বিষয়) ও মানবণ্টন (মোট ৬০০ নম্বর) অনুসারে মানবিক অনুষদ (বাংলা রচনা-১০০, ইংরেজি রচনা-১০০, ইংরেজি কম্পোজিশনে ও প্রিসিস-১০০, বাংলাদেশ বিষয়াবলি-১০০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি-১০০) ৮৩.৩৩ শতাংশ এবং বিজ্ঞান অনুষদ (সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সমাজ ও পরিবেশ ও ভূগোল-১০০) ১৬.৬৭ শতাংশ সিলেবাস-সুবিধা পেয়ে থাকেন।

গণিতভীতির কারণে আজ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারক পর্যন্ত সবাই গণিত থেকে দূরে সরার চেষ্টা করছেন বা গণিতকে বাদ দিয়ে পথচলার নীতি অনুসরণ করছেন। এর জ্বলন্ত উদাহরণ বিসিএস থেকে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়টিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কর্তৃক বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা। এ ধরনের গণিতভীতির জন্য গণিত শিক্ষকেরা দায়ী নন এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি দূর করে আনন্দের সঙ্গে গণিতচর্চা ও শিক্ষা উপহার দেওয়ার সক্ষমতা একমাত্র গণিতবিদেরাই রাখেন বলে আমার বিশ্বাস।

বর্তমান ব্যবস্থায় মানবিকের একজন প্রার্থী বিজ্ঞানের প্রার্থী অপেক্ষা ৫৫.৫৬ শতাংশ বেশি সিলেবাস-সুবিধা পেয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় মানবিকের পক্ষে এ সুবিধা ৬৬.৬৬ শতাংশ বেশি। তাহলে স্পষ্ট যে বিজ্ঞানের প্রার্থীরা বর্তমান সিলেবাস ও মানবণ্টনের আলোকেই বড় ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। অধিকন্তু কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে বিজ্ঞানের প্রার্থীরা আরও বৈষম্যের শিকার হবেন তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

বিজ্ঞানের প্রার্থীদের উচ্চতর গণিত বিষয়ে জ্ঞান থাকায় গাণিতিক যুক্তিতে বেশি নম্বর পেয়ে বিসিএস পরীক্ষায় মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকেন বলে যে অজুহাত দেওয়া হচ্ছে, এর সঙ্গে একমত হওয়া যায় না।

বিসিএস পরীক্ষার গাণিতিক যুক্তির সিলেবাসের প্রতিটি কনটেন্ট মাধ্যমিকের গণিত (নবম-দশম শ্রেণি) অংশে বিদ্যমান রয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের গণিত বিষয়টি মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসা শাখার সব শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক বিধায় গাণিতিক যুক্তি বিসিএসে বর্তমানের মতো বহাল থাকলেও কেউ বেশি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নকারী যেন উচ্চতর গণিত থেকে কোনো প্রশ্ন না রাখেন, সে বিষয়ে সতর্ক রাখতে হবে।

আরও পড়ুনবিসিএস থেকে গণিত বাদ দেওয়ার সর্বনাশা চিন্তা কেন০৪ মার্চ ২০২৫

সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে বর্তমানে ১০০ নম্বর নির্ধারিত। অথচ সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে আরও তিনটি বিষয়, যথা সমাজবিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান ও ভূগোল যুক্ত করে মোট ১০০ নম্বরের বিজ্ঞান অংশ কমিশন থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে। সমানুপাতিক হিসাব করলে সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির (ভৌতবিজ্ঞান) জন্য কেবল ২৫ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মোট নম্বরের ৪.১৭ শতাংশ। এটি বিজ্ঞান বিভাগকে অবহেলার মাধ্যমে বৈষম্যকরণের নতুন মাত্রা বলে প্রতীয়মান হয়। শুধু তা-ই নয়, ব্যবসায় শিক্ষাকে একেবারে বাদ দিয়ে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনুকূলে বিষয় নির্বাচন করে তাঁদের অগ্রাধিকার বেশি দেওয়া হয়েছে, যা বিসিএসের মতো পরীক্ষার ক্ষেত্রে কখনো কাম্য নয়।

বিসিএস থেকে গণিত বাদ দেওয়ার মূল কারণ পরীক্ষার্থীদের গণিতভীতি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রে গণিতের শিক্ষক নয়, এমন শিক্ষক দিয়ে গণিত পড়ানো হচ্ছে। এখানে গণিত শিক্ষক বলতে যাদের গণিতের ওপর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কমপক্ষে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে তাঁদের বোঝানো হয়েছে। তাই ছাত্রছাত্রীরা গণিত পড়ছে কিন্তু শিখতে পাড়ছে না।

গণিতভীতির কারণে আজ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারক পর্যন্ত সবাই গণিত থেকে দূরে সরার চেষ্টা করছেন বা গণিতকে বাদ দিয়ে পথচলার নীতি অনুসরণ করছেন। এর জ্বলন্ত উদাহরণ বিসিএস থেকে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়টিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কর্তৃক বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা। এ ধরনের গণিতভীতির জন্য গণিত শিক্ষকেরা দায়ী নন এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি দূর করে আনন্দের সঙ্গে গণিতচর্চা ও শিক্ষা উপহার দেওয়ার সক্ষমতা একমাত্র গণিতবিদেরাই রাখেন বলে আমার বিশ্বাস।

বিজ্ঞানের প্রার্থীদের তুলনায় অন্য প্রার্থীরা বিসিএস পরীক্ষার মেধাতালিকায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই আমার প্রস্তাব হলো গণিত বাদ না দিয়ে বরং প্রত্যেক শাখার প্রার্থীদের প্রতিনিধিত্ব বিসিএস ক্যাডারে বজায় রাখতে হলে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসা শাখা হতে আবেদন করা প্রার্থীদের মধ্য থেকে আনুপাতিক হারে মেধাক্রম তৈরি করা যেতে পারে।

মাথাব্যথা হলে মাথা না কেটেই উপশমের ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্তমান সরকার সংস্কারে বিশ্বাসী ও বৈষম্য বিরোধী। বিসিএসের মতো পরীক্ষায় সিলেবাসের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বৈষম্য রাখা উচিত নয়। মানবিক বিভাগের প্রার্থীরা পিছিয়ে পড়া কোনো জনগোষ্ঠী নয় যে বিসিএস ক্যাডারে তাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য গণিত বাদ দেওয়ার কৌশল নিতে হবে। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়টি বিসিএস লিখিত পরীক্ষা হতে বাদ না দিয়ে বহাল রাখাই বেশি যুক্তিসংগত।

ড. মাহতাব উ. আহাম্মদ অধ্যাপক, গণিত বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব স এস র স ল ব স ব স এস থ ক স প র শ কর দ র গণ ত পর ক ষ র ব স এস প র জন য ব যবস ব ষয়ট করছ ন ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

বাঙালির প্রাণের উৎসব আজ

রৌদ্রকরোজ্জ্বল বৈশাখী দিন ফিরে এল আবার। সুরে-বাণীতে, সাজসজ্জায়, আহারে-বিহারে, আনন্দ-উল্লাসে আজ সোমবার বাংলার নতুন বছর ১৪৩২ বরণ করে নেবে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দেশের সব মানুষ। পুরোনো ব্যর্থতা ঝেরে ফেলে সবার কল্যাণ কামনায় উদ্‌যাপিত হবে নববর্ষের উৎসব। নববর্ষকে আবাহন জানিয়ে বহুকণ্ঠে ধ্বনিত হবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো...।’

বাংলা নববর্ষের চেয়ে বড় কোনো সর্বজনীন উৎসব দেশে আর নেই। এ কারণে মানুষে মানুষে মহাপ্রাণের মিলন ঘটানোর বর্ষবরণের এই উৎসব গভীর তাৎপর্যময় হয়ে আছে আমাদের জীবনে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর এবার নতুন পরিবেশে বর্ষবরণ উৎসব বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য তাই ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।

মূল প্রতিপাদ্য সামনে রেখে জাতীয়ভাবে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদ্‌যাপনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। উৎসব অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সব জাতিসত্তার প্রতিনিধিদের নিজ নিজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রমনার বটমূলে বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠান আয়োজন করবে ছায়ানট।

রাজধানীর বর্ষবরণের অন্যতম বর্ণাঢ্য আয়োজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শোভাযাত্রা। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র বদলে এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামকরণ করা হয়েছে। এই শোভাযাত্রার যে মোটিফগুলো তৈরি করা হয়েছিল, তার মধ্যে

২০ ফুট উচ্চতার ‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’ নামের মোটিফটি শনিবার ভোররাতে কে বা কারা আগুনে পুড়িয়ে দেয়। চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ঘটনার পরও তাদের শোভাযাত্রা বর্ণাঢ্যভাবেই পথে নামবে পয়লা বৈশাখ সকালে।

পয়লা বৈশাখের উৎসব গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবোধের যে উন্মেষ ঘটেছিল, তার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তার প্রতিবাদে বিপুল উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বৈশাখী উৎসব উদ্‌যাপিত হয়। রমনার বটমূলে ১৯৬৭ সালে ছায়ানট প্রথমবারের মতো আয়োজন করে তাদের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। কালক্রমে বর্ষবরণ উৎসবে যুক্ত হয় আরও অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। চারুকলার শোভাযাত্রা বর্ণাঢ্য করে তোলে আয়োজন। বহু সংগঠনের অংশগ্রহণে বর্ষবরণ বহু প্রাণের বিপুল উৎসবে পরিণত হয়।

বাংলা বর্ষবরণের উৎসব যত আড়ম্বর, উৎসাহের সঙ্গে উদ্‌যাপিত হয়, ব্যবহারিক জীবনে বাংলা সনের প্রয়োগ তেমন ব্যাপক নয়। প্রাত্যহিক জীবনের কাজকর্ম, শিক্ষা, ব্যবসা—সবই গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জি অনুসরণ করেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে বাংলা দিনপঞ্জি পুরোপুরি অব্যবহৃতও নয়। কৃষকেরা চাষাবাদ, ফসল রোপণ, ফসল তোলার ক্ষেত্রে বাংলা সনের হিসাব অনুসরণ করেন। অনেক ধর্ম সম্প্রদায়ও তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের জন্য বাংলা বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করে। কাজেই সমাজে নানা ক্ষেত্রে বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রয়োগ রয়েছে। সে কারণে নতুন বছর শুরু হলে নতুন প্রত্যাশা নিয়েই মানুষ তাকে বরণ করে নেয়।

নতুন বছরকে বরণ করার রীতি পৃথিবীর বহু দেশের সংস্কৃতিতে বহমান। আমাদের দেশে বছরের পয়লা দিনটিকে কেন্দ্র করে এই উৎসবে তুলে ধরা হয় দেশের গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। রাজধানীতে রমনার বটমূলে এবার ৫৮তম বারের মতো ছায়ানট আয়োজন করবে তাদের বর্ষবরণের প্রভাতি অনুষ্ঠান। এবার তাদের অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ভৈরবীতে রাগালাপের মধ্য দিয়ে শুরু হবে প্রায় দুই ঘণ্টার এ অনুষ্ঠান।

এ ছাড়া ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুরের ধারার আয়োজনে সকাল ৬টায় শুরু হবে সহস্রকণ্ঠের গানে গানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

চারুকলা অনুষদের আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে সকাল নয়টায়। আগেই জানানো হয়েছে, এবার শোভাযাত্রায় বিভিন্ন জাতিসত্তার প্রতিনিধিরা তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীকগুলো নিয়ে অংশ নেবেন। শোভাযাত্রাটি টিএসসি, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমি হয়ে আবার চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে।

সকাল থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হবে বিসিকের সঙ্গে যৌথ আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী লোক ও কারুশিল্প মেলা। এ ছাড়া বেলা সাড়ে তিনটা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হবে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে থাকবে একক ও দলীয় আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বেলা তিনটা থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে চলবে বৈশাখী ব্যান্ড শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় চীনা কারিগরি দলের পরিবেশনায় শুরু হবে বর্ণাঢ্য ড্রোন শো।

এসব প্রধান অনুষ্ঠান ছাড়াও অনেক এলাকাভিত্তিক এবং বহুতল আবাসিক ভবনগুলোতে ছোট ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। বরাবরের মতো ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ করে অনেক সংগঠন শহর ঘুরে সংগীত, আবৃত্তি পরিবেশন করবে।

রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশেই বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হবে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও প্রবাসী বাঙালিরা নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেবেন। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসব অনুষ্ঠানের সঙ্গেও দেশবাসীর এক রকমের সংযোগ ঘটে। এমন নানা আয়োজন উদ্যোগের ভেতর দিয়ে কালক্রমে বাংলা নববর্ষের উৎসব আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। প্রসারিত হচ্ছে বিপুল পরিসরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ