ময়মনসিংহে গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন ‘গোশালা’
Published: 17th, March 2025 GMT
আশপাশের দু-তিন কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামের শিক্ষার আলো ছড়াতে ২৭ বছর আগে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হলেও সেটি এখন গোশালায় রূপ নিয়েছে। জাতীয়করণ না হওয়া, বেতন–ভাতা না পাওয়া ও শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে মামলার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যালয়টি। গ্রামের একমাত্র বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকায় দূরের পাঠশালায় যাচ্ছে শিশুরা।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের কাহেদগ্রামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ওই অবস্থায় ১৯৯৮ সালের ৩ এপ্রিল স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুল হক একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ ইউনিট বরাবর ৩৩ শতাংশ জমি দেন। বিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় কাহেদগ্রাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সিরাক বাংলাদেশ নামে একটি এনজিওর পরিচালনায় সরকারি অর্থায়নে সেখানে ৫ লাখ টাকা অনুদানে ৫ কক্ষবিশিষ্ট একটি আধা পাকা স্কুল ভবন হয়। ১৯৯৯ সালে বিদ্যালয়টির পাঠ কার্যক্রম শুরু হয়। তবে শিক্ষকেরা বেতন না পাওয়ায় কয়েক দফায় বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়।
৯ মার্চ বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, দরজা–জানালা ভাঙা। সামনে বারান্দাও ভেঙে পড়েছে। সামনে কয়েকটি গরু। শ্রেণিকক্ষগুলোয় গরুর জন্য খড় রাখা। বিদ্যালয়টিকে এখন গোশালা হিসেবে ব্যবহার করছেন জমিদাতা পরিবারের সদস্যরা। কথা হয় জমিদাতার ভাতিজা মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এলাকার জন্য স্কুলটি খুব দরকার। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে জটিলতায় স্কুলটি এখন বন্ধ হয়ে গেছে। যেহেতু স্কুলের কার্যক্রম নেই, তাই ফেলে না রেখে গরু ও অন্যান্য জিনিস রাখা হয়।
চারজন শিক্ষকের স্থলে অতিরিক্ত শিক্ষক হয়ে যাওয়ায় আদালতে মামলার কারণে মূলত স্কুলটির জাতীয়করণ আটকে যায়। মো.আলী সিদ্দিক, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা
জমিদাতার ছেলে ও শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুলটি চালুর পর কয়েক দফা বন্ধ হয়। সর্বশেষ ২০১০ সাল থেকে পুরোদমে চালু হয়ে ২০১১ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা শুরু হয়। ২০১২ সালের দিকে বিদ্যালয়টির শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে মাকসুদুল হাসান নামের একজন শিক্ষক আদালতে একটি মামলা করেন। ২০১০ সালে মাকসুদুলের নিয়োগ হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শফিকুল ইসলাম ওরফে সুরুজকে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে বাদ দেওয়া হয় মাকসুদুলকে। এ নিয়ে মামলার কারণে জাতীয়করণ আটকে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা স্কুলটি চালিয়ে গেলেও বিনা বেতনে আর পারছিলাম না এবং জাতীয়করণেরও আশা দেখছিলাম না। ওই অবস্থায় স্কুলটির কার্যক্রম বন্ধ করে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছি।’ তিনি মনে করেন, একজন শিক্ষক নিয়ে জটিলতায় পুরো স্কুলটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। কর্তৃপক্ষ সদয় হলে স্কুলটি আবার চালু হতে পারে।
শিক্ষকদের সরবরাহ করা কাগজপত্রে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে সর্বশেষ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের সুপারিশ পাঠায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। সেখানে শাফিয়া বেগম, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. শফিকুল ইসলাম, শামীমা নাসরিন কর্মরত আছেন দেখিয়ে জাতীয়করণের সুপারিশ করেন বিভিন্ন প্রকৃতির বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণসংক্রান্ত উপজেলা যাচাই–বাছাই কমিটির সভাপতি তৎকালীণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। কিন্তু বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়নি।
কাগজপত্র দেখে বন্ধ স্কুলটি চালু করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।মো. এরশাদুল আহমেদ, ইউএনও, ঈশ্বরগঞ্জএ প্রসঙ্গে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা (বর্তমানে ধোবাউড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) মো. আলী সিদ্দিক বলেন, বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হওয়ার জন্য সব মানদণ্ড পূর্ণ করেছিল। কিন্তু এনজিওর মালিক চারজন শিক্ষক নিয়োগ দিলেও সেখানে আওয়ামী লীগের লোকজন আরও শিক্ষক নিয়োগ দেন। চারজন শিক্ষকের স্থলে অতিরিক্ত শিক্ষক হয়ে যাওয়ায় আদালতে মামলার কারণে মূলত স্কুলটির জাতীয়করণ আটকে যায়। স্কুলটি ২০১৬ সাল পর্যন্ত সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিলেও জাতীয়করণ হচ্ছে না দেখে পরে বন্ধ হয়ে যায়। এখনো যদি সব পক্ষ মিলে উদ্যোগ নেয়, তাহলে স্কুলটি আবার চালু হওয়ার সুযোগ আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য নাজমুল হক, স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস সাত্তার ও লুৎফুর রহমান বলেন, গ্রামটিতে কোনো স্কুল না থাকায় দূরের স্কুলে গিয়ে শিশুদের পড়ালেখা করতে হয়। অথচ গ্রামের স্কুলটি ভেঙে ভেঙে পড়ছে। এটি চালু করা গেলে গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে।
এনজিও সিরাকের প্রতিষ্ঠাতা আওরঙ্গজেব বেলাল বলেন, এই বিদ্যালয় ছাড়া আরও কয়েকটি বিদ্যালয় উপজেলাটিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যালয়টিতে যখন জাতীয়করণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তখন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রভাব খাটিয়ে মাকসুদুল হাসান নামের একজন শিক্ষককে বাদ দিয়ে শফিকুল ইসলাম ওরফে সুরুজ নামের একজনকে নিয়োগ দেখিয়ে জাতীয়করণের প্রস্তাব পাঠান। এ নিয়ে মামলার কারণে স্কুলটি জাতীয়করণ হয়নি।
বিষয়টি নজরে আনা হলে ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, কাগজপত্র দেখে বন্ধ স্কুলটি চালু করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ত য়করণ র ব দ য লয়ট কর মকর ত ল ইসল ম র জন য উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ
গাজীপুর মহানগরীর তেলিপাড়া এলাকায় একটি শিল্প কারখানার শ্রমিকরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। এর ফলে এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুর্ভোগ পড়েছেন বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী ও চালকরা।
রবিবার (১৬ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লুমেন টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
শ্রমিকরা জানান, প্রতিমাসেই বেতন দিতে দেরি করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। রমজান মাস উপলক্ষে আগে বেতন দিতে বলা হয়েছিল তাদের। আজ বেতন দেওয়ার কথা ছিল। এখন কর্তৃপক্ষ বলেছে, আজও নাকি বেতন দেবে না। রমজান মাস বেতন ছাড়া সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
আরো পড়ুন:
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৩ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক
ঈদ বোনাসের দাবি
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের, যান চলাচল বন্ধ
লুমেন টেক্সটাইল কারখানা শ্রমিক আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের কারখানায় ৩০০-৪০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। রাত ১১টা ১২টা পর্যন্ত ডিউটি করায় কোনো নাইট বিল দেয় না কর্তৃপক্ষ। ইনক্রিমেন্ট নেই। ডিসেম্বর থেকে ছুটি দেয়নি। মাসের ১৫-২০ তারিখ বেতন দেয়। রমজান মাসের কারণে আগে বেতন চেয়েছি, তবু ম্যানেজমেন্ট গুরুত্ব দেয় না। বেতন দেওয়ার কথা কিন্তু দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এজন্য আমরা মহাসড়ক অবরোধ করেছি।”
এ বিষয়ে জানতে লুমেন টেক্সটাইল কারখানার ভেতরে গিয়ে কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ওসি কায়সার আহমেদ বলেন, একটি কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। বর্তমানে সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করা হচ্ছে।
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ