কুমিল্লা নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ ইমরান হোসেন নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা।  

রবিবার (১৬ মার্চ) রাত ১০ টায় কুমিল্লা নগরীর নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকার ট্রমা সেন্টার নামের একটি হাসপাতালে এ মৃত্যু ঘটে।

ইমরান হোসেন নগরীর দ্বিতীয় মুরাদপুর এলাকার হুমায়ুন কবিরের ছেলে।

এ ঘটনায় হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে রোগীর বিক্ষুব্ধ স্বজনরা। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

এদিকে ইমরানের মা নাজমা বেগম সাংবাদিকদের জানান, বুকের অসুখ জনিত কারণে গত ১৫ দিন আগে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ইমরান হোসেন ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিল। গত বুধবার তার অপারেশনের জন্য পুনরায় তাকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের  চিকিৎসক আতাউর রহমান গত শনিবার ইমরান হোসেনের অপারেশন করেন। 

নাজমা বেগমের অভিযোগ, ‘ভুল চিকিৎসার’ কারণে রবিবার বিকেলের দিকে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা অবস্থায় ইমরান হোসেন মারা যান। 

রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে জানান, ইমরান আইসিইউতে মারা যাওয়ার পরও সে জীবিত আছে বলে দুইবার প্রায় ২৭ হাজার টাকার ওষুধ নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর মৃত্যুর পরও দেখতে না দিয়ে রোগী বেঁচে আছে বলে জানিয়ে আরও প্রায় তিন লাখ টাকার বিল হাতিয়ে নেয়।

এদিকে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিহতের পরিবারের সাথে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদল নেতা ফখরুল ইসলান মিঠু কুমিল্লা মহানগর ড্যাবের এক নেতারা মাধ্যমে চার লক্ষ টাকায় সমঝোতা হয়েছে বলে জানা গেছে। হাসপাতালে একটি গোপনকক্ষে এই সমঝোতা হয়। সমঝোতাপত্রে অভিযুক্ত দুই নেতা স্বাক্ষরসহ একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। 

এ বিষয়ে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদল নেতা ফখরুল ইসলান মিঠু সমঝোতার খবরটি অস্বীকার করেছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাউকে না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম জানান, ভাঙচুরের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঢাকা/রুবেল/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইমর ন হ স ন সমঝ ত

এছাড়াও পড়ুন:

ভিডিও দেখে দালালের বাড়ি ঘেরাও

সমুদ্রপথে ইউরোপে লোক পাঠানোর কথা বলে অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন ঝালকাঠির বাসন্ডা ইউনিয়নের দারখী গ্রামের আকাশ মোল্লা। সম্প্রতি ছোট ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসেন তিনি। জাঁকজমক অনুষ্ঠানের সেই ভিডিও আপলোড করেন সামাজিক মাধ্যমে। এরপর শুরু হয় বিপত্তি। ভিডিও থেকে তাঁর অবস্থান নিশ্চিত করে গত শনিবার বাড়িতে চলে আসেন প্রতারিত যুবকদের স্বজন। বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন তারা। অবস্থা বেগতিক দেখে  কৌশলে পালিয়ে যান আকাশ ও তাঁর স্ত্রী।      
জানা গেছে, মালয়েশিয়া থেকে ১৮ লাখ টাকায় সমুদ্রপথে অস্ট্রেলিয়া নেওয়ার কথা বলে মালয়েশিয়া প্রবাসী যুবকদের ইন্দোনেশিয়া দ্বীপে আটকে রাখেন আকাশ মোল্লা। এরপর নির্যাতন করে আরও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। দেশ থেকে টাকা না পাঠালে নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। তাঁর কবল থেকে মুক্তি পেতে কোনো উপায় পাচ্ছিলেন না ভুক্তভোগী যুবকরা। সম্প্রতি আকাশের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে নির্যাতনের ভিডিওসহ প্রমাণ নিয়ে শনিবার বিকেলে ঝালকাঠিতে এসেছেন তারা। প্রথমে আকাশ বাড়িতে আছে জানালেও পরে অস্বীকার করেন স্বজনরা। এক পর্যায়ে আকাশের স্ত্রী সুমনা আক্তার সাথি উত্তেজিত হয়ে ভুক্তভোগীর স্বজনদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। কিছুক্ষণ পর সাংবাদিক ও প্রশাসনের লোকজন এলে তিনিও উধাও হয়ে যান। রাত ৮টার দিকে সদর থানার সেকেন্ড অফিসার মো. আমিনুল, এসআই ফরিদ হোসেন এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ বিষয়ে অভিযোগ শোনার জন্য থানায় নিয়ে যান ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনের।    
এ সময় কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর এলাকার অরুণ মিয়ার সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘একটু ভালো থাকার আশায় ছেলে আলাউদ্দিনকে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে তাকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কথা বলে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে আকাশ। আরও টাকা চেয়ে নির্যাতন করেছে। সে এখানে আছে জানতে পেরে এসেছি। আকাশকে না পেলেও তার স্ত্রী ঘরেই ছিল। সে কীভাবে পালিয়ে গেল? পুলিশ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তারা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পিছু হটেছে।’   
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, সাধারণত যেখানে ঘটনা ঘটে, সেখানে মামলা হয়। তা ছাড়া আকাশ মোল্লার বাড়িতে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পেলে তাঁকে কীভাবে আইনের আওতায় আনা যায় দেখা হতো। তাই আমাদের কিছুই করার নেই।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, মাদারীপুরের পূর্ব সাইচপাড়া গ্রামের পারুল বেগমের ছেলে আরাফাত সরদার ও ভাইয়ের কাছ থেকে আকাশ 
ব্যাংক এজেন্ট ও চেকের মাধ্যমে ১৮ লাখ করে মোট ৩৬ লাখ টাকা নিয়েছেন তিন কিস্তিতে। এরপর ইন্দোনেশিয়া দ্বীপে নিয়ে আটক করে আরও টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে আরও ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। 
একই কায়দায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার রখিবপাড়া গ্রামের মৌসুমী আক্তারের স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী সুমন হালদার ও তাতিকান্দি গ্রামের মরজিনা বেগমের ছেলে তাইম হোসেন ও ভাই তমিজ হোসেনের কাছ থেকেও ৩৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। শুধু তারা নয় এ রকম ৪০ যুবককে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে জিম্মি করে নির্যাতন ও বাড়তি টাকা আদায় করছেন আকাশ। ভুক্তভোগীদের স্বজনরা আকাশের বাড়িতে অবস্থান নিলে তাঁর স্ত্রী গেম না দেওয়ার (অস্ট্রেলিয়া না পাঠানোর) হুমকি দিয়েছেন। 
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আকাশ তাঁর ভাই পলক ও বাবা কবির মোল্লা মালয়েশিয়া থাকতেন। এক বছর আগে কবির মোল্লা দেশে এসে এসএ পরিবহনের পাশে ভাঙারি ব্যবসা শুরু করেন। পলকের বিয়ে উপলক্ষে ছয় মাস আগে ঝালকাঠি আসেন তারা। লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন। তারা হঠাৎ করে বড়লোক হয়ে গেছে বলে জানান প্রতিবেশীরা। এলাকার কারও সঙ্গে তাদের তেমন ওঠাবসা নেই। 
আকাশ ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ভাই রাতুল হাসান পলক বলেন, ভাই-ভাবি বাসায় নেই। ভাই মালয়েশিয়া থাকাকালে এ ধরনের কোনো চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা জানি না। আমিও মালয়েশিয়া থাকি। বিয়ে করতে বাড়ি এসেছি। ভাই মালয়েশিয়া থেকে কিছু দিন আগে এলেও ভাবি বাড়িতেই থাকেন।
পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায় বলেন, ভুক্তভোগী যুবকদের স্বজনরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফ্যানে ঝুলছিল স্বামী, খাটে পড়েছিল স্ত্রীর মরদেহ
  • ফ্যানে ঝুলছিল স্বামীর মরদেহ, খাটের ওপর স্ত্রীর
  • ভিডিও দেখে দালালের বাড়ি ঘেরাও