আদালতে কাঁদলেন শাজাহান খান, জানালেন মামলার কারণ
Published: 17th, March 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর বাড্ডায় রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহতের মামলায় রিমান্ড শুনানি চলাকালে আদালতে কেঁদেছেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান। আদালতকে জানিয়েছেন তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কারণ।
সোমবার (১৭ মার্চ) সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে তার রিমান্ড শুনানি হয়।
সকাল ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে শাজাহান খানকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। তখন তিনি আইনজীবীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করেন। এ সময় তাকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।
সকাল ১০টা ৮ মিনিটের দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। শাজাহান খানের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক শফিউল আলম।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষে মিজানুর রহমান (বাদশা) রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
রিমান্ড শুনানিকালে ১০টা ২৭ মিনিটের দিকে শাজাহান খান বলেন, “মাননীয় আদালত আমাকে একটু সময় দিন কথা বলার। আমি কথা বলতে চাই।”
আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন শাজাহান খান। তিনি বলেন, “পিপি সাহেব বলেছেন, আন্দোলনে পুলিশ গুলি করেছে। সে অর্ডার তো দিতে পারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গুলি চালানোর অর্ডার তো আমি দিতে পারি না। আমি জড়িত না। কেন আমার বিরুদ্ধে এ মামলা হলো? শুধু আমার বিরুদ্ধে না, আমার বড় ছেলে আসিবুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। সে এখন জেলে।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাজাহান খান বলেন, “পাঁচ মাস ধরে আমার ছেলের সঙ্গে দেখা নেই। আমার ছেলে কী করেছে? আমি ঢাকায় থাকলেও ছেলে থাকত মাদারীপুরে। আপনি এখনই চেক করতে পারেন। আর সিরাজুল ইসলাম কে?”
তখন বিচারক বলেন, “আপনার বিষয়ে আইনজীবী কথা বলেছেন।” তবু, শাজাহান খান দুই হাত জোর করে কথা বলার জন্য সময় চান। বলেন, “একটু সময় দিন। উনারা (আইনজীবী) ভালোভাবে বিষয়টা বলতে পারেননি। সিরাজুল চেয়ারম্যান ছয়টা হত্যা মামলার আসামি। আমি তার পক্ষে ছিলাম না। তাই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ মামলা দিয়েছে।”
পরে আদালত শাজাহান খানের চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে টিস্যু দিয়ে দুই চোখ মুছতে থাকেন শাজাহান খান।
শুনানি শেষে ১০টা ৪০ মিনিটে হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতকড়া পরিয়ে আদালত থেকে বের করা হয় শাজাহান খানকে। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেন। তখন তিনি বলেন, “কথা বলা নিষেধ? কথা তো বলতে হবে। গণতান্ত্রিক দেশ।”
এরপর শাজাহান খান বলেন, “এ দেশের মায়েরা, বোনেরা এখন রাস্তায় নামছেন উপদেষ্টার পদত্যাগের জন্য।“ পুলিশ সদস্যরা তাকে দ্রুত হাজতখানায় নিয়ে যান।
গত বছরের ১৯ জুলাই বাড্ডা থানাধীন উত্তর বাড্ডা বিসমিল্লাহ হোটেলের পাশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন রফিকুল ইসলাম। সেখানে গুলিতে আহত হন তিনি। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রফিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিহতের মামা পরিচয়ে লুৎফুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
শাজাহান খানের আইনজীবীরা আদালতকে জানিয়েছেন, মামলার বাদীকে চিনেন না রফিকুল ইসলামের মা ও স্ত্রী। তাকে দেখেনও নাই। তাদের বাড়ি শাজাহান খানের সংসদীয় আসন এলাকায়। লুৎফুর রহমানের শ্বশুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। সিরাজুল ইসলাম মার্ডার কেসে পড়েন। শাজাহান খানের কাছে যান মামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। তখন শাজাহান খান জানান, আইনের বাইরে কিছু বলা যাবে না। এ কারণে মামলায় তাকে এবং তার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।
ঢাকা/মামুন/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র রহম ন আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
ন্যায়বিচার ও মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে হবে
চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের উদ্যোগে আদালতের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) মো. সোয়েব উদ্দীন খান, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল, মো. আবু বকর সিদ্দিক, মো. আলমগীর হোসেন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এস. এম. আলাউদ্দিন মাহমুদ ও নুসরাত জাহান জিনিয়া।
এছাড়া কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) হুমায়ুন কবির, উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আমীরুল ইসলাম, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিনিধি সাকিব শাহরিয়ার, চমেক পরিচালকের প্রতিনিধি ডা. জুনায়েদ আহমেদ, ফরেনসিক মেডিসিনের ডা. খালেদ হাসান, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির আহবায়ক এ. কে. এম মকবুল কাদের চৌধুরী, অ্যাডহক কমিটির সদস্য মুহাম্মদ শামসুল আলম এবং মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর মফিজুল হক ভূইয়া।
কনফারেন্সে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিআইডি) সাইকুল আহমেদ, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. মফিজ উদ্দিন, টুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার নিত্যানন্দ দাশ, পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, সিনিয়র জেল সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৬টি থানার অফিসার ইনচার্জ, মহানগর গোয়েন্দা শাখার পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রবেশন কর্মকর্তারা।
কনফারেন্সের শুরুতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান বিগত সভার সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরে বিচারাধীন মামলার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জদের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। আদালতে আসা-যাওয়ার পথে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের সকল থানার অফিসার ইনচার্জদের দক্ষতার সঙ্গে তদন্তকাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। তিনি মামলার সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করতে এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানে সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকর ভূমিকা পালনের বিষয়ে নির্দেশনা দেন। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আগের চেয়ে দ্রুত মেডিকেল সনদ দেওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধি ডা. জুনায়েদ আহমেদের মাধ্যমে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির আহবায়ক আইনজীবী এ.কে. এম মকবুল কাদের চৌধুরী আদালত এলাকার নিরাপত্তা
নিশ্চিতের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন এবং আদালতে আসা-যাওয়ার পথে অস্থায়ী ভাসমান দোকান যাতে বসতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা জন্য অনুরোধ করেন।
বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোঃ আলমগীর হোসেন তদন্তকার্যে আরো সচেতন হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোঃ আবু বকর সিদ্দিক চট্টগ্রাম মহানগরীতে চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আইন-শৃংখলা বিঘ্নকারী অপরাধ আইনের যথাযথ প্রয়োগের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) জনাব আমীরুল ইসলাম এবং পুলিশ প্রসিকিউশনের উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব হুমায়ুন কবির নিয়মিত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্স আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
মাননীয় চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় বিচার প্রশাসন, নির্বাহী বিভাগ, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। সামনের দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পারষ্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আসবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।