পুলিশের ১২৭ কর্মকর্তার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক চলছে
Published: 17th, March 2025 GMT
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের ১২৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ বৈঠক চলছে।
সোমবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয় বলে জানা গেছে। এতে সভাপতিত্ব করছেন প্রধান উপদেষ্টা নিজেই।
এর আগে রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার সারা দেশের মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি জানান, পুলিশের উচ্চপদস্থ ১২৭ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। একইসঙ্গে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত ওই বৈঠকে দেশের সব জেলার পুলিশ সুপার (এসপি), রেঞ্জ ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক), মহানগর পুলিশ কমিশনার, সব ইউনিটের প্রধান, পুলিশ সদর দপ্তরের তিনজন ডিআইজি ও সব অতিরিক্ত আইজিপি এবং আইজিপিদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের দাবি উপস্থাপন করা হতে পারে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পুলিশের একশ্রেণির সদস্য নির্বিচার গুলি করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পুলিশকে প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ রাখতে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের দাবি ওঠে।
পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। এতে তারা উজ্জীবিত হবেন। বাহিনীতেও ইতিবাচক বার্তা যাবে। পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হলে সেখানে স্বাভাবিকভাবে নানা প্রত্যাশা ও সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। এই বৈঠকেও এ ধরনের বিষয় সামনে আসতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকার গত ৩ অক্টোবর পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। সংস্কার কমিশনের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি পুলিশের জন্য পৃথক একটি কমিশন গঠনের পক্ষে মত দেন।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ সংস্কার কমিশন একটি নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করে। প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে, নাকি সাংবিধানিক কাঠামোভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হবে– সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ ছাড়া পুলিশ কমিশনের গঠন, কার্যপরিধি, সাংবিধানিক বা আইনি বাধ্যবাধকতা ইত্যাদি বিষয় আরও বিচার-বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। বাছাই কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে বিভিন্ন পেশা থেকে চারজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি পুলিশ কমিশনের সদস্য হবেন। এর মধ্যে একজন আইনজ্ঞ, একজন অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, সমাজবিজ্ঞান বা পুলিশিং বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষাবিদ ও একজন মানবাধিকারকর্মী থাকবেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, প্রতিবেদনের এই অংশ নিয়ে জোর আপত্তি রয়েছে পুলিশ সদস্যদের। সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে সাধারণ মানুষের চাওয়াকে অগ্রাহ্য করেছে বলেও মনে করেন পুলিশ সদস্যরা। তারা বলছেন, কমিশন গঠনই করা হয়েছে বিশেষজ্ঞ সদস্যদের মাধ্যমে। সেখানে যখন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ‘বিশেষজ্ঞ মতামত’ গ্রহণের কথা বলা হয়, তখন তাদের ভূমিকা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ ছাড়া ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণের’ কথাটিকে সংস্কার প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বলেও মনে করছেন কর্মকর্তাদের অনেকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত পর স থ ত সদস য গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
মৌলভীবাজারে শাহ নিমাত্রার (রহ.) দরগাহের ওরস বন্ধের দাবিতে কর্মসূচির ঘোষণা, উত্তেজনা
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা বাজারে হজরত শাহ নিমাত্রার (রহ.) দরগাহের ওরস নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। একটি পক্ষ ওরস বন্ধের দাবিতে আজ শুক্রবার বাদ জুমা উপজেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে গত বুধবার রাতে ওরসের দাবিতে ফুলতলা বাজারে মিছিল হয়। আজ সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ওরস শুরু হয়েছে। ।
উপজেলার ফুলতলা বাজারের এক পাশে হজরত শাহ নিমাত্রার দরগাহ। প্রতিবছর সেখানে ওরস অনুষ্ঠান হয়। এতে অনেক লোকজনের সমাগম ঘটে। এবার ১১ থেকে ১৩ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী ৫৪তম বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এবার ওরসের পোস্টারে কোনো কাফেলায় (ভক্তদের আসর) নারী অথবা নারী শিল্পী রাখা যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন ধরে ওরসের প্রস্তুতি চলছে। এ উপলক্ষে সেখানে অন্তত শতাধিক দোকানপাট বসেছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার স্থানীয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর করা একটি আবেদন দেওয়া হয়, যাতে ওরস বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। ওই আবেদনে বলা হয়েছে, ফুলতলা বাজারে অবস্থিত ফুলতলা বশির উল্লাহ উচ্চবিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র। ওরসে উচ্চস্বরে গান-বাজনা ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে পরীক্ষার পরিবেশ বিনষ্টের আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা সদরে মাইকিং করা হয়। এতে ফুলতলায় ওরসে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবিতে আজ বাদজুমা উপজেলা সদরের জাঙ্গিরাই চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে গত বুধবার ফেসবুকে খবর ছড়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওরস স্থগিত করা হয়েছে। এরপর ওরস আয়োজনের পক্ষে লোকজন বুধবার রাতে ফুলতলা বাজারে মিছিল বের করেন। এ সময় সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
দরগাহ পরিচালনা কমিটির কার্যকরী সদস্য ও ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইমতিয়াজ গফুর বলেন, গতকাল থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরের পরীক্ষা ১৫ এপ্রিল। ওরস এর আগেই সম্পন্ন হয়ে যাবে। তাই ওরসের কারণে পরীক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কার বিষয়টি সঠিক নয়। ওরস নিয়ে কিছু লোক অপপ্রচার করছেন। প্রতিবারের মতো এবারও ওরস হবে।
ওরসকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও বাবলু সূত্রধর।
জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ওরস নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁরা তৎপর আছেন।