আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক মাস আগে পাঁচ বছরের জন্য আর্থিক লেনদেন প্ল্যাটফর্ম ‘বিনিময়’-এ বড় অঙ্কের বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।

‘বিনিময়’-এর জন্য আইসিটি বিভাগের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) দিয়ে ২৭৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের একটি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

চালুর পর ‘বিনিময়’ জনপ্রিয়তা পায়নি। আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বিনিময়’ ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আওয়ামী ঘনিষ্ঠদের আর্থিক সুবিধা দিতেই এ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর উদ্যোগটি বাতিল করে আইসিটি বিভাগ। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রস্তাবটি বাদ দেওয়া হয়েছে।’
আইসিটি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) প্রকল্পের আওতায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ইন্টার-অপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম (আইডিটিপি) ‘বিনিময়’ চালু হয় ২০২২ সালের নভেম্বরে। ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) মধ্যে আর্থিক লেনদেনের জন্য প্ল্যাটফর্মটি করা হয়।

বিনিময় চালুর পর তা সুবিধা করতে পারেনি। বিনিময়ে লেনদেন তেমন না হওয়া সত্ত্বেও থেমে থাকেনি আইসিটি বিভাগ।

২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে ২৭৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ‘বিনিময় প্ল্যাটফর্ম উন্নত ও স্থিতিশীলকরণ’ নামের প্রকল্পের উদ্যোগ আইসিটি বিভাগের আগ্রহে গ্রহণ করা হয়েছিল।

প্রকল্প প্রস্তাবের উদ্দেশ্য-লক্ষ্যে বলা হয়েছিল, প্ল্যাটফর্মটি সমৃদ্ধ করা, কারিগরিভাবে আরও শক্তিশালী করা, পরিচালনায় সহায়তার পাশাপাশি সরকারি বিল, বেতন-ভাতা, কর-ভ্যাট সংগ্রহ, পেনশন, মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জের মতো সুযোগ তৈরি করা।

আইসিটি বিভাগ সূত্র বলছে, যে প্রকল্প থেকে ‘বিনিময়’ তৈরি করা হয়েছে, সেখানে বেশি অর্থ ব্যয়ের সুযোগ ছিল না। তাই এখান থাকে আরও লাভবান হতে বিসিসিকে দিয়ে আরেকটি প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.

আহসান এইচ মনসুর গত জানুয়ারি মাসে বলেছিলেন, মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) আন্তলেনদেন পরিচালনার জন্য বিনিময় নামের যে প্ল্যাটফর্ম করা হয়েছিল, সেটি ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের শেল কোম্পানি। এমএফএসে আন্তলেনদেনব্যবস্থা এগোতে না পারার একটা বড় কারণ, এটি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীন দেওয়া হয়েছিল।

সজীব ওয়াজেদ ছাড়াও এ প্ল্যাটফর্ম থেকে সুবিধা নিয়েছেন সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ছেলে জারেফ হামিদ। বিনিময় প্ল্যাটফর্মটি ওরিয়ন ইনফরমেটিক্স, মাইক্রোসফট, ফিনটেক লিমিটেড ও সেইন ভেঞ্চারস যৌথভাবে তৈরি করে। এর মধ্যে ফিনটেক লিমিটেড নসরুল হামিদের স্ত্রী সীমা হামিদ ও ছেলে জারেফ হামিদের, যা ২০২২ সালে নাম পরিবর্তন করে হয় ভেলওয়্যার লিমিটেড। এর মালিকানায় আছে জারেফ হামিদ ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি প্রাইম হোল্ডিংস এলএলসি। বিনিময় পরিচালনার জন্য ভেলওয়্যারের সঙ্গে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চুক্তি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিনিময় তৈরির আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একই ধরনের সেবা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেবাটি চালুর কথা ছিল। তখন এ নিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে শেষ পর্যন্ত সেবাটি আর চালু হয়নি। কারণ, এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হয় আইসিটি বিভাগ। নেওয়া হয় নতুন সরকারি প্রকল্প।

সূত্র জানায়, এখন ‘বিনিময়’ রাখতে চাচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘বিনিময়’-এর মতো সেবা থাকবে, তবে এ প্ল্যাটফর্ম (বিনিময়) ব্যবহার করা হবে না। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিনিময়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ভেলওয়্যারের সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো হচ্ছে না। তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। জবাব না পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, এ চুক্তি রাখার ইচ্ছা নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের। কারণ, সেবাটি প্রায় অকার্যকর হয়ে আছে। এ ছাড়া ভেলওয়্যারের সঙ্গে যে চুক্তিটি হয়, সেটার সবকিছু প্রস্তুত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে দেওয়া হয়েছিল।

সরকার পতনের পরপরই ‘বিনিময়’ নিয়ে আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সাল থেকে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার উদ্দেশ্যে বিনিময় তৈরির আলোচনা শুরু হয়। ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত বিনিময়ের গ্রাহকসংখ্যা ৩ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ জন। ‘বিনিময়’-এ গড়ে প্রতিদিন ২৮–৩০ লাখ টাকা লেনদেন হয়। একই সময় পর্যন্ত বিনিময়ে ৮৯ কোটি ৮২ লাখ ২৮ হাজার ৩৫০ টাকার লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি বিনিময় বন্ধের মতো কোনো সিদ্ধান্তে যায়, তবে সেটাকে সাধুবাদ জানাতে হবে। দেশের আর্থিক খাতের লেনদেনের প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট সিস্টেম থাকতে পারে। কিন্তু সর্বজনীন মাধ্যম (ইউনিভার্সাল পেমেন্ট গেটওয়ে এগ্রিগেটর) একটাই হতে পারে।

সেটা ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশকেই (এনপিএসবি) হতে হবে। অবশ্যই সেটা বেসরকারি খাতের হাতে থাকতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে এনপিএসবি সেবা আছে, সেটাকে বরং এখন শক্তিশালী করতে হবে। এখানে ব্যাংক, আর্থিক সেবা খাত, মার্চেন্ট, মার্কেট ও এমএফএস যুক্ত রয়েছে। বিনিময়ের পেছনের যে গোষ্ঠী আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছিল, তারা দেখেছে, বাংলাদেশে এমএফএস খাত ভালো করছে। তাই সেটাকে তারা টার্গেট (নিশানা) করেছিল।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম প রকল প র ভ লওয় য র ল নদ ন আর থ ক হয় ছ ল র জন য মন ত র আইস ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইবির ডি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ‘ডি' ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত বিভাগসমূহের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ২০২৪-২৫ বর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে।

এতে থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদভুক্ত তিনটি বিভাগ এবং কলা অনুষদের একটি বিভাগসহ মোট ৪ বিভাগে ৩২০টি আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।

রবিবার (১৬ মার্চ) দুপুর ১২ টা থেকে ভর্তি পরীক্ষার এ আবেদন শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ২৮ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত। এছাড়া আগামী ১১ মে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

আরো পড়ুন:

ইবিতে আওয়ামীপন্থিদের অংশগ্রহণে ভর্তি কমিটির সভায় বাঁধা

অবরোধ-মানববন্ধনসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী কর্মসূচি অব্যহত

শনিবার (১৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তি সুত্রে জানা যায়, ধর্মতত্ত্ব অনুষদভুক্ত তিনটি বিভাগ আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, দা'ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ ও আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ এবং কলা অনুষদভুক্ত আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগসহ মোট চার বিভাগের ৩২০টি আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।

এ বছর ১ হাজার ৫০০ টাকা আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের (iu ac.bd) মাধ্যমে ভর্তির আবেদন করা যাবে। শিক্ষার্থীদের মোবাইল/অনলাইন ব্যাকিং সেবার (বিকাশ/নগদ/রকেট) মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি জমা দিতে হবে।

ভর্তিচ্ছুদেরকে অবশ্যই ২০২৩ বা ২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান এবং ২০২০, ২০২১ অথবা ২০২২ সালে মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ৮০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হবে। এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে।

ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট (iu.ac.bd) পাওয়া যাবে। এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল, চূড়ান্ত ভর্তি প্রক্রিয়ার সময়সীমা এবং ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ক্লাস শুরুর তারিখ পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট http://www.iu.ac.bd/admission এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে জানানো হবে।

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান চার দিনের রিমান্ডে
  • ইবির ডি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু
  • ইবির ‘ডি’ ইউনিটে ভর্তির আবেদন শুরু, পরীক্ষা ১১ মে
  • লিন্ডের ৪০০ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা
  • প্রাইম ব্যাংকের ১৭.৫০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • দালালের জালে তরুণরা, স্বপ্ন দেখিয়ে সর্বনাশ
  • নোবিপ্রবিতে ২ ছাত্রদল নেতার জন্য মাস্টার্স চালু
  • মোবাইলে ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে ১.৩২ কোটি 
  • ২৩ কোটি রুপির চাপ টের পাচ্ছেন কলকাতা অলরাউন্ডার