ডিসি হতে কর্মকর্তাদের আগ্রহ হঠাৎ কমেছে, কারণ কী
Published: 17th, March 2025 GMT
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হওয়ার আগ্রহে হঠাৎ ভাটা দেখা দিয়েছে। আগে যেখানে এ পদে নিয়োগ পেতে ব্যাপক আগ্রহ থাকত, তদবিরও হতো; সেখানে এখন ডাক পেয়েও সাক্ষাৎকার দিতে যাচ্ছেন না প্রায় অর্ধেক সংখ্যক কর্মকর্তা।
ডিসি নিয়োগে এখন পর্যন্ত দুটি ব্যাচের ২৬৯ কর্মকর্তাকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডেকেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু সাক্ষাৎকার দিতে গেছেন ১৩৬ জন, অর্থাৎ প্রায় ৪৯ শতাংশ কর্মকর্তা সাক্ষাৎকারে অনুপস্থিত থেকেছেন।
ডিসি নিয়োগে কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অনুপস্থিত ৪৯% কর্মকর্তা।জেলা প্রশাসক পদটি সব সময়ই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য আকর্ষণীয়। এটি মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ। মনে করা হয়, পদটি সম্মানজনক। এ পদে ক্ষমতা ও সুবিধা রয়েছে। কর্মকর্তাদের একাংশ সব সরকারের সময়েই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, জ্যেষ্ঠ আমলা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে গিয়ে ডিসি হতে তদবির করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দিকে ডিসি হতে বিক্ষোভ ও হট্টগোল করেছিলেন বেশ কিছু কর্মকর্তা।
কেন হঠাৎ আগ্রহ কমে গেল, তা জানতে সাক্ষাৎকারে ডাক পাওয়া অন্তত ১০ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা মোটাদাগে পাঁচটি কারণ তুলে ধরেছেন। প্রথমত, বিগত তিনটি বিতর্কিত, একতরফা ও পাতানো নির্বাচনের সময়ে ডিসি পদে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা এখন জবাবদিহির মুখে পড়ছেন। অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেকেরই সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এখন ডিসি হলে আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে। কোনো না কোনো সময় তাঁদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে প্রশাসনের ৪৩ কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাঁরা রাতের ভোট নামে পরিচিতি ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ডিসি হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ ছাড়া ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় ডিসি পদে দায়িত্ব পালনকারী (চাকরির বয়স ২৫ বছর হয়েছে) ২২ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অতীতেও কিছু কর্মকর্তা ডিসি নিয়োগের সাক্ষাৎকারে যেতেন না। এবার অনাগ্রহী কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে ডিসি পদের মতো গুরুত্ব জায়গায় তুলনামূলক কম দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নিয়োগ পেয়ে যেতে পারেন।দ্বিতীয়ত, মাঠ প্রশাসনের পরিস্থিতিকে এখন ডিসি পদে দায়িত্ব পালনের উপযোগী মনে করছেন না অনেকে। তাঁদের ভাষ্য, এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মাঠ প্রশাসনের ওপর নানাভাবে চাপ তৈরি করছেন। সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কাজে হস্তক্ষেপ ও তদবির করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ‘মব’ (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) তৈরি করা হচ্ছে। ফলে স্বাধীনভাবে কাজ করা কঠিন।
তৃতীয়ত, বর্তমান সরকার অন্তর্বর্তীকালীন। এ সরকারের আমলে ডিসি পদে দায়িত্ব পালনকারীদের পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার কী চোখে দেখবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে কারও কারও।
চতুর্থত, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভালো পদে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা নিজে থেকেই সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়া থেকে বিরত থাকছেন। তাঁরা মনে করছেন, তাঁদের ডিসি নিয়োগ করা হবে না। ফলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে লাভ নেই।
পঞ্চমত, এখন অনিয়ম-দুর্নীতির সামান্য অভিযোগ উঠলে সরকারের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখে পড়তে হবে। ঝুঁকি নিয়ে ডিসি পদে গেলেও ক্ষমতার চর্চা করা কঠিন হবে। ফলে এ পদে এখন গিয়ে লাভ নেই বলে মনে করছেন কোনো কোনো কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত তহবিল বা এলআর ফান্ড থাকে। সেই ফান্ডের অর্থ খরচ করতে পারেন ডিসিরা। কারও কারও বিরুদ্ধে এ তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। মনে করা হয়, অসাধু ডিসিদের অবৈধ আয়ের বড় উৎস এলআর ফান্ড।প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকে এ সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার কোনো অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে নেই। তিনি দক্ষ বলেও পরিচিত। ডিসি নিয়োগের সাক্ষাৎকারে ডাক পেলেও তিনি যাননি।
কেন, তা জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, এখন ডিসি হলে বিপদ আছে। একে তো মাঠ প্রশাসনে নানা রকম চাপ। তার ওপর ভবিষ্যতে শাস্তির মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে। দেখা গেল চাপে পড়ে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্তের কারণে পরে জবাবদিহি ও দুদকের অনুসন্ধানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
ডিসি পদ কেন আকর্ষণীয়
জেলা প্রশাসনের সব দায়িত্ব পালন করেন ডিসি। জেলায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ক ডিসি। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিসহ শতাধিক কমিটির সভাপতি ডিসি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ডিসির জন্য বড় বাংলোবাড়ি থাকে, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ থাকে, পুলিশি প্রহরা থাকে এবং বাসায় নিরাপত্তাকর্মী ও রান্না করে দেওয়ার লোক থাকে।
জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত তহবিল বা এলআর ফান্ড থাকে। সেই ফান্ডের অর্থ খরচ করতে পারেন ডিসিরা। কারও কারও বিরুদ্ধে এ তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। মনে করা হয়, অসাধু ডিসিদের অবৈধ আয়ের বড় উৎস এলআর ফান্ড।
সাধারণত উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ডিসি নিয়োগ করা হয়। সাক্ষাৎকার নেওয়ার চল আগে থেকেই ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা, তদবির ও নেতাদের পছন্দে ডিসি নিয়োগ করা হতো বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ করা সব ডিসিকে প্রত্যাহার করা হয়। খালি হওয়া পদগুলোয় নিয়োগ দেওয়া নিয়ে সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছিল। তখন ১৭ কর্মকর্তাকে শাস্তিও দেওয়া হয়েছিল। ডিসি নিয়োগ নিয়ে তদবির ও সমন্বয়ক দাবি করা এক ব্যক্তির প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও উঠেছিল।
ডিসি নিয়োগে সাক্ষাৎকার নেয় পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি, যেটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এ কমিটি গত জানুয়ারি থেকে নতুন ডিসি নিয়োগের জন্য কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ডিসি নিয়োগের জন্য এবার প্রশাসন ক্যাডারের ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রায় ৪০০ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ হয়েছে। তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডিসি পদে নিয়োগ দিতে ২৫তম ব্যাচের ১১৫ জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। এর মধ্যে সাক্ষাৎকার দিতে যান ৬১ জন, অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ কর্মকর্তা সাক্ষাৎকারে অংশ নেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন, দুর্নাম হতে পারে—এ ভয়ে ডিসি হতে না চাওয়া অস্বাভাবিক নয়।সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার২৭তম ব্যাচ থেকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয় ১৫৪ জনকে। এর মধ্যে উপস্থিত হন ৭৫ জন, অর্থাৎ ৪৯ শতাংশ কর্মকর্তা সাক্ষাৎকার দিতে যান। সাক্ষাৎকারের অপেক্ষায় আছেন ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। সে ব্যাচ থেকেও উপস্থিতি কম হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৫ মার্চ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ২৭তম ব্যাচের ৭৪ জন উপসচিবকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। তালিকায় ৮ নম্বরে থাকা অর্থ বিভাগের উপসচিব কে এম আলমগীর কবির সাক্ষাৎকার দিতে যাননি। কেন যাননি, জানতে চাইলে গতকাল রোববার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়েই নিজের পেশাজীবন গড়তে চান। তিনি বলেন, ‘অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ডিসি হব না।’
আরও কয়েকজন কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে ব্যক্তিগত কারণ সামনে এনেছেন, কিন্তু অনানুষ্ঠানিক আলাপে তাঁরা নানা শঙ্কার কথা তুলে ধরেন। তাঁরা এ–ও বলেছেন, মাঠ প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করলে প্রশাসনের শীর্ষ পদে যাওয়ার সুযোগ বাড়ে। দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে, কিন্তু এখনকার অভিজ্ঞতা বলছে, ঝুঁকি অনেক বেশি।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫ ও ২৭তম ব্যাচে ৫০০ জনের মতো কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁদের সবাইকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়নি। এবার সাক্ষাৎকারে উপস্থিতি বাধ্যতামূলকও করা হয়নি। কিন্তু বড় অংশের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশাসনে নানা আলোচনা চলছে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের (এপিডি) অতিরিক্ত সচিব মো.
কারা ডিসি হওয়ার যোগ্য
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বর্তমানে বিসিএস ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন ও ২৭তম ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তা ডিসি পদে রয়েছেন। ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের উপসচিব থেকে শিগগিরই পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম সচিব করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য তাঁদের মাঠ প্রশাসন থেকে তুলে আনা হবে। আবার কোনো কোনো ডিসির কর্মদক্ষতা ভালো নয়। তাঁদেরও ডিসি পদে রাখা হবে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনেক জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে।
কারা ডিসি হবেন, সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি নীতিমালা রয়েছে। ২০২২ সালে প্রণীত সবশেষ ‘পদায়ন নীতিমালায়’ জেলা প্রশাসক পদে পদায়নের বিষয়ে বলা হয়, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মচারীদের মধ্য থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার এক বছর পর ডিসি পদে পদায়নের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। ডিসি পদে ‘ফিট লিস্ট’ বা যোগ্য তালিকা তাঁদের নিয়েই করা হবে, যেসব কর্মকর্তার মাঠ প্রশাসনে ন্যূনতম দুই বছর চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ছাড়া একজন কর্মকর্তার আগের পাঁচ বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনের (এসিআর) রেকর্ড এবং চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা প্রতিবেদন সন্তোষজনক হতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ডিসি পদে পদায়নে নীতিমালায় কিছুটা শিথিলতা আনা হয়। এতে বলা হয়, বিগত সরকারের সময়ে অনেক কর্মকর্তা পদোন্নতিবঞ্চিত ছিলেন, তাই মাঠ প্রশাসনে দুই বছরের অভিজ্ঞতা না থাকলেও কর্মকর্তারা ডিসি হতে পারবেন। সাধারণত একজন কর্মকর্তা তিন বছর ডিসি পদে থাকেন। সরকার এ বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের জুন নাগাদ সংসদ নির্বাচন করার কথা বলছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অতীতেও কিছু কর্মকর্তা ডিসি নিয়োগের সাক্ষাৎকারে যেতেন না। এবার অনাগ্রহী কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে ডিসি পদের মতো গুরুত্ব জায়গায় তুলনামূলক কম দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নিয়োগ পেয়ে যেতে পারেন। কেউ কেউ বলছেন, ডিসি পদে নিয়োগে সাক্ষাৎকারে অনাগ্রহের কারণে দলবাজ ও বিতর্কিত নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পিছু হটা যাবে না।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন, দুর্নাম হতে পারে—এ ভয়ে ডিসি হতে না চাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, প্রশাসনের আকর্ষণ হচ্ছে ডিসি পদ। এ পদে যেতে সবার আগ্রহ থাকে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তার কারণে ডিসি পদটি বিতর্কিত হয়ে গেছে।
আবদুল আউয়াল মজুমদার আরও বলেন, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর মাঠ প্রশাসনে অনেক দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তা ডিসি হয়ে যেতে চাইবেন না। রাজনৈতিক সরকার যদি মাঠ প্রশাসনে ডিসিদের ওপর খবরদারি বন্ধ করে এবং তাঁদের পেশাদারির সঙ্গে কাজ করতে দেয়, তখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতি হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য চ র কর মকর ত র কর মকর ত দ র সরক র র আমল কর মকর ত র কর মকর ত ক ন কর মকর ত ২৭তম ব য চ র জন ত ক ন মন ত র ন য় গ কর এখন ড স উপসচ ব তদব র প রথম ক ষমত আওয় ম করছ ন বছর র র সময় তহব ল
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক এমপি ওয়াহেদসহ চারজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ময়মনসিংহ-১১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এম এ ওয়াহেদ, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাত মালেকসহ চারজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১৭ মার্চ) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের পৃথক চার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ ওয়াহেদ, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাত মালেকসহ চারজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চারটি আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনগুলো মঞ্জুর করে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অন্যরা হলেন- সাবেক উপ সচিব মো. দিদারুল আলম চৌধুরী এবং জনৈক মোতাহের হোসেন চৌধুরী।
এম এ ওয়াহেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন উপপরিচালক মোজাম্মিল হোসেন। আবেদনে বলা হয়, এম এ ওয়াহেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
গোপন ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এম এ ওয়াহেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে (ময়মনসিংহ, ঢাকা এলাকা ছাড়াও অন্যান্য এলাকায়) এবং দেশের বাইরে- পাপুয়া নিউগিনি, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে। এম এ ওয়াহেদ দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করে তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর করার চেষ্টা করছেন বলে অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তিনি বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধানকার্য ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
রাহাত মালেকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মো. ফজলুল হক দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, জাহিদ মালেক ও রাহাত মালেকের বিরুদ্ধে দুদক মামলা দায়ের করেছে। রাহাত মালেক তার পিতার অবৈধ আর্থিক সহায়তায় অসৎ উদ্দেশ্যে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত ১১ কোটি ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার ১৬১ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখেছেন এবং ৫১টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ৬৬৩ কোটি ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৬৯ টাকা লেনদেন করেছেন মর্মে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাহাত মালেক দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন মর্মে বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন। একই আদালত জাহিদ মালেকেরও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
দিদারুল আলম চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান। আবেদনে বলা হয়, দিদারুল আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অনুসন্ধান চলছে।
অভিযোগ অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়, দিদারুল আলম চৌধুরী যে কোনো সময় দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বিদেশ গমন রহিতকরণ করা প্রয়োজন।
মোতাহের হোসেন চৌধুরীর দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞায় দুদকের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ বিদেশে পাচার করেছেন মর্মে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশের বর্তমান বাস্তবতায় মোতাহার হোসেন দেশ ত্যাগ করতে পারেন মর্মে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক।
ঢাকা/মামুন/এনএইচ