মাদ্রাসাছাত্র হত্যা মামলায় দুই আ. লীগ নেতা রিমান্ডে
Published: 17th, March 2025 GMT
ঢাকার লালবাগ থানায় দায়ের হওয়া মাদ্রাসাছাত্র শাহেনুর রহমান হত্যা মামলায় চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাজী সিরাজুল ইসলাম রাডো এবং কামরাঙ্গীরচর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন সরকারের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (১৭ মার্চ) সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক কবির হোসেন তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। অসুস্থতা ও বয়স্ক বিবেচনায় তাদের রিমান্ড নামঞ্জুরের প্রার্থনা করা হয়।
এ সময় আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চান সিরাজুল ইসলাম। আদালত অনুমতি না দিলেও কথা বলেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আমি আহত হয়েছি। শেখ হাসিনা আমাকে ভারতে চিকিৎসা করিয়েছেন।’’ এরই মাঝে আদালত তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে, গত ১২ মার্চ একই মামলায় ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিমের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার এক দিন পরে লালবাগ থানাধীন বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি বিজয় মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। ওই মিছিলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গুলি চালালে মাদ্রাসাছাত্র শাহেনুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর নিহতের ভাই মো.
ঢাকা/মামুন/রাজীব
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষে মেয়ের জন্ম, ডাক্তার খুশি হয়ে নাম রেখেছেন বৈশাখী
পহেলা বৈশাখে তৃতীয় সন্তান এসেছে চাঁদপুরের শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের পরিবারে। বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালে চাঁদপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাদের ঘরে।
তাদের চরম এক টানাপড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মেয়ের আগমনে বেশ খুশি শাহাদাত-রিনা দম্পতি। সকালে মেয়ের মিষ্টিমুখ দেখে চিকিৎসক এবং নার্স হাসপাতালে নবজাতকের নাম তালিকাভুক্ত করার সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন, ‘আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় বৈশাখী দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’ নবজাতকের মা-বাবা মাথা নেড়ে সায়ও দেন।
তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন, ইচ্ছে করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামটার সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জড়িয়ে রাখতেই পারেন। সেটা আপনাদের বিষয়।
নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় একজন রিকশাচালক। ৮ বছর আগে দুই ছেলে- ৫ম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে সেমিপাকা ছোট্ট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে।
শহরে এসে ভাড়ায় রিকশা চালান শাহাদাত। ৩'শ টাকা রিকশা মালিককে দেন আর এক দেড়-দুইশ টাকায় চলে সংসার।
বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়ে সন্তানটিকে নিয়ে কথা হয় শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা উঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবীসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান হাসপাতালের গেট খুলে দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে নিয়ে যায়। পর পরই ডিউটি ডাক্তার আসেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। তবে চিকিৎসক নার্সরা আমার ভাবীকে বলেন, চিন্তা করবেন না, সব কিছু ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ, উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মা আর গর্ভের সন্তান ভালো আছে।
শাহাদাত হোসেন বলেন, হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে যায়। আর সে সময়ই হাসপাতালের পাশের অফিসার্স ক্লাব থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। ঠিক তখনই গেট খুলে দিয়ে দারোয়ান বলেন ভেতরে আসেন আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বললেন- সকাল সাড়ে আটটায় আপনার মেয়ে জন্ম নিয়েছে। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। আর বাচ্চার ওজন ২ কেজি ৯ শ গ্রাম।
পহেলা বৈশাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনার মেয়েকে কি উপহার দিলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সরল হাসি দিয়ে রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, এই ভোররাতে তারা আমার বউ আর সন্তানের সেবায় একটুও হেলা করেনি। এটাই আমার মতো গরীব বাবার কাছে অনেক বড় উপহার। এর আগেও এই হাসপাতালে দুই-একবার গিয়েছিলাম। তারা তখনও অনেক যত্ন নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ জানান, নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগী রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনরূপ হেলা করিনি আমরা। আর এখানে আগে থেকেই আমরা গর্ভবতী মায়েদের প্রসব এবং অন্যান্য চিকিৎসাগুলো দিয়ে থাকি।
শাহাদাত হোসেন বলেন, গরীব ঘরের মেয়েকে কতদিন নিজের কাছে আগলে রাখতে পারবো আল্লাহই ভালো জানেন। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মনুষ করার।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেচে থাকে সবাই এই দোয়া করবেন।