১০ টাকা কিনতে হচ্ছে সাড়ে ১৪ টাকায়
Published: 17th, March 2025 GMT
ঈদে নতুন পোশাকের পাশাপাশি নতুন নোট সংগ্রহ করে থাকেন অনেকে। শিশুদের ঈদ আনন্দের বড় অংশজুড়ে থাকে নতুন টাকা। তবে এবারের ঈদে নতুন নোট বাজারে আসছে না। এর প্রভাব পড়েছে নতুন নোট বিক্রির দোকানগুলোতে। এসব দোকান থেকে ক্রেতাদের ৫, ১০, ২০ টাকাসহ সব ধরনের নতুন নোট কিনতে হচ্ছে আগের চেয়ে বাড়তি টাকায়। প্রতি বান্ডিলের দাম গত ঈদের মৌসুমের চেয়ে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট এলাকায় বিভিন্ন অস্থায়ী দোকানে নতুন নোট বিক্রি হয়। সেখানে ঈদের আগে থেকে নতুন নোট বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখেন বিক্রেতারা। প্রতিবারই এসব দোকানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ১০ ও ২০ টাকার নোটের।
গতকাল রোববার সরেজমিনে বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে ১০ টাকার নতুন নোট নেই। যেসব দোকানে রয়েছে, সেখানে বিক্রেতারা ১০ টাকার এক বান্ডিল নতুন নোটের জন্য ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা চাচ্ছেন। ১ বান্ডিলে ১০০টি ১০ টাকার নোট থাকে এবং এর মূল্যমান ১ হাজার টাকা। অর্থাৎ একটি ১০ টাকার নতুন নোটের দাম পড়ছে সাড়ে ১৪ টাকা। অন্যদিকে ২০ টাকার ১০০টি নতুন নোটের বান্ডিলের জন্য চাওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৩৫০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
এবারের ঈদে নতুন নোট বাজারে আসবে না—এমন খবরে দোকানগুলোতে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা মূলত ছেঁড়া ও পুরোনো টাকার ব্যবসা করেন। এ ছাড়া রমজানের আগে নতুন নোট সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। বিক্রেতারা জানান, এ বছর নতুন নোটের জন্য বান্ডিলপ্রতি ক্রেতাদের ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। গত বছর রমজানের সময় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বাড়তি দিয়েই মিলেছে নতুন নোটের বান্ডিল।
ঈদ সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছরই নতুন নোট বাজারে ছাড়ে। তবে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ১০ মার্চ জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, টাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় বাধে আপত্তি।
নগরের নিউমার্কেট এলাকায় অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন অস্থায়ী দোকানি নতুন টাকা বিক্রি করেন। সরেজমিনে ঘুরে দোকানগুলোতে তেমন ক্রেতা দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা জানান, ২০ রোজার পর থেকে ক্রেতাদের মধ্যে নতুন টাকার চাহিদা বাড়বে।
১৯৮৬ সাল থেকে বিপণিবিতানের নিচে নতুন টাকা বিক্রি করে আসছেন কামাল হাওলাদার। স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে সংসার তাঁর। স্থায়ী নিবাস পটুয়াখালীতে। জীবিকার তাগিদে ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রামে এসে পরিচিতদের মাধ্যমে যুক্ত হন এ পেশায়। বর্তমানে নিউমার্কেট এলাকার নতুন নোট বিক্রেতাদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে প্রবীণ। তবে চট্টগ্রামে নতুন টাকা বিক্রির প্রচলন আরও আগে হয়েছে বলে জানান তিনি।
কামাল হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের বছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতা কম। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা দিচ্ছে না, তাই দাম বেশি। আমি ১০ টাকার বান্ডিল এবার পাইনি। দামও বেশি তাই আর সংগ্রহ করিনি। ৫০ টাকার বান্ডিল আছে বেশি। পাশাপাশি ১০০ ও ২০০ টাকার বান্ডিলও আছে।’
নতুন নোট বিক্রির জন্য ক্রেতার অপেক্ষায় এক বিক্রেতা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নত ন ন ট ব ক র র নত ন ন ট নত ন ন ট র নত ন ট ক ১০ ট ক র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় সেই চিকিৎসাকর্মীদের ওপর কাছ থেকে ১০০টির বেশি গুলি ছুড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী: অডিও বিশ্লেষণের তথ্য
গাজায় ১৫ জন চিকিৎসাকর্মীকে হত্যার সময় ইসরায়েলি সেনারা ১০০টিরও বেশি গুলি ছুড়েছে। এর মধ্যে কিছু গুলি মাত্র ১২ মিটার (৩৯ ফুট) দূর থেকে করা হয়েছে। একটি মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওর ফরেনসিক অডিও বিশ্লেষণে এমনটি দেখা গেছে। অডিও বিশ্লেষণের কাজটি করিয়েছে বিবিসি ভেরিফাই। দুজন বিশেষজ্ঞ এই বিশ্লেষণ করেন।
বিবিসি ভেরিফাইয়ের যাচাই করা ১৯ মিনিটের ওই ভিডিও পরীক্ষা করে দেখা গেছে, গত ২৩ মার্চ ফিলিস্তিনের গাজার সর্বদক্ষিণের শহর রাফার কাছে ঘটনাটি ঘটে। ভিডিওতে ঘটনার আগের মুহূর্তগুলোও দেখানো হয়েছে।
বিশ্লেষণে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের দাবির মিল পাওয়া গেছে। সংস্থাটি এর আগে দাবি করেছিল, ওই চিকিৎসাকর্মীদের ‘খুব কাছ থেকে নিশানা করা হয়েছিল।’ তবে ৫ এপ্রিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, আকাশ থেকে তোলা এক ভিডিও ফুটেজে সৈন্যদের ‘দূর থেকে’ গুলি চালানোর দৃশ্য দেখা গেছে।
বিবিসি ভেরিফাই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা সরাসরি এ বিশ্লেষণের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
আইডিএফের এক মুখপাত্র বলেছেন, তাঁরা এ হামলার তদন্ত করছেন এবং বারবার দাবি করেছেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি আইডিএফ। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট ইসরায়েলি বাহিনীর এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে, যেমন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন হামলায় বেঁচে যাওয়া নবম চিকিৎসাকর্মী। আইডিএফ তাঁকে ১৫ ঘণ্টা আটক করে রেখেছিল।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা হামলায় নিহত চিকিৎসাকর্মী রিফাত রাদওয়ানের মুঠোফোন থেকে সম্পূর্ণ ভিডিওটি উদ্ধার করেছে। আইডিএফ তাঁকে হত্যা করে ছোট একটি গর্তে কবর দিয়ে দেয়।
রিফাত রাদওয়ানের ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতে সম্মুখ বাতি ও জরুরি ফ্লাশলাইট জ্বালিয়ে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন চিকিৎসাকর্মীদের ওই দল। এ সময় হাই-ভিউ জ্যাকেট পরে থাকায় কমপক্ষে একজন কর্মীকে হলেও দেখা যাওয়ার কথা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, গাড়িতে থাকা ওই দলটির গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল এবং তাঁরা গাড়ির বাতি নিভিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু রিফাত রাদওয়ানের করা ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর সেনাবাহিনী তাদের বক্তব্য পরিবর্তন করে স্বীকার করেছে যে তাদের দাবি ভুল ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বিবিসি ভেরিফাইকে জানিয়েছেন, তাঁরা মুঠোফোনের মাইক্রোফোন থেকে গুলির দূরত্ব পরিমাপ করতে শব্দ তরঙ্গ এবং স্পেকট্রোগ্রাম ব্যবহার করেছেন। সংক্ষিপ্ত সময়ের ব্যবধান ইঙ্গিত দেয়, ভিডিওটি যত এগিয়েছে, মাইক্রোফোন ও গুলির মধ্যকার দূরত্ব তত কমেছে।
অডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথম গুলিটি করা হয় ৪০ থেকে ৪৩ মিটার দূর থেকে। কিন্তু ভিডিওর শেষ দিকে গুলির শব্দ এসেছে মাত্র ১২ মিটার দূর থেকে।
যুদ্ধাঞ্চলে তদন্ত পরিচালনার ক্ষেত্রে ২০ বছরেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাবেক ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা ক্রিস কব-স্মিথ বলেন, ৫০ মিটার দূর থেকে ইসরায়েলি সেনারা ‘স্পষ্টতই দলটিকে মানবিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত দল হিসেবে চিহ্নিত করতে পারতেন।’ তাঁরা নির্ণয় করতে পারতেন, ওই চিকিৎসাকর্মীরা নিরস্ত্র ছিলেন এবং কোনো হুমকি তৈরি করছিলেন না।’
অডিও বিশেষজ্ঞ রবার্ট মাহের বলেন, গুলির শব্দ যেভাবে আসছিল, তাতে এটি স্পষ্ট যে একই সময়ে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
মাহের বলেন, একের পর এক গুলি বর্ষণের কারণে গুলির শব্দ পৃথকভাবে শনাক্ত করা যায়নি। তবে উভয় বিশেষজ্ঞই আলাদাভাবে নির্ণয় করেছেন যে ওই সময় ১০০টিরও বেশি গুলি ছোড়া হয়েছিল। তবে কী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তা নির্ণয় করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা।
বিবিসির অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ২৩ মার্চ ইসরায়েলি সেনারা কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি অগ্নিনির্বাপণের কাজে ব্যবহৃত ট্রাকে যে নির্বিচারে গুলি চালান, সে ঘটনার ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। ওই ঘটনায় ১৫ উদ্ধারকর্মী (চিকিৎসাকর্মী) নিহত হয়েছিলেন।
প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) এ ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সসহ ওই গাড়িগুলো রাতের অন্ধকারে সম্মুখবাতি জ্বালিয়ে ও জরুরি ফ্লাশলাইট চালু রেখে ছুটে চলেছে। হঠাৎই এসব যানের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু হয়।