কমলপুর কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম। আয়তনে ছোট হলেও দেশজুড়ে কমলপুর গ্রামের বেশ পরিচিতি। কারণ, বাটিক পোশাকের গ্রাম বা বাটিকপল্লি হিসেবে নাম কুড়িয়েছে এটি। এখানকার বাসিন্দারা সারা বছরই বাহারি বাটিকের পোশাক তৈরি করেন। তবে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে এই বাটিকপল্লিতে কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায় বহুগুণে।

কমলপুর গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ল বাটিকপল্লির কর্মব্যস্ততা। তৈরি হচ্ছে রংবেরঙের বাটিকের পোশাক। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে এ বছর নানা ধরনের নকশায় তৈরি করা হচ্ছে বাটিক শাড়ি ও থ্রি-পিস। সাদা কাপড়ের মধ্যে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা আর ক্রেতার চাহিদার কথা ভেবে নিত্যনতুন নকশা ফুটিয়ে তুলছেন কারিগরেরা।

কমলপুর বাটিকপল্লির তিনটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, প্রথমে প্রিন্ট করার জন্য কাপড় কেটে প্রস্তুত করা হয়। এরপর মোম দিয়ে সেই কাপড়ে নানা ধরনের নকশা করেন কারিগরেরা। রঙের স্থায়িত্ব বাড়াতে রং করার পর কাপড় সেদ্ধ করে একটি দল। সেখান থেকে তুলে কাপড়ে মাড় দিচ্ছে আরেক দল। এরপর সেই কাপড় কয়েক দফা পানিতে ধুয়ে মাঠে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। শুকানোর পর কাপড় ইস্তিরি করে বাজারজাত করার জন্য তৈরি করা হয়।

বাটিকের সিল্ক ও সুতি শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট, লুঙ্গি, বেডশিট, গজ কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির জন্য এই গ্রামে অন্তত ১০টি কারখানা আছে। শুরুটা কমলপুর থেকে হলেও এখন আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও বাটিকের পোশাক তৈরি হচ্ছে। তবে গুণে ও মানে এখনো সেরা বলে ক্রেতার পছন্দের শীর্ষে কমলপুরের বাটিকের পণ্য।

কমলপুর বাটিকপল্লির একটি কারখানার মালিক মো.

রাশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৭৫ সালের দিকে আমার চাচা লাল মিয়া মেম্বার এই গ্রামে বাটিক শিল্পের যাত্রা শুরু করেন। তাঁর হাত ধরেই বাটিক কুমিল্লার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। চাচা ভারতের কলকাতা ও ত্রিপুরা রাজ্যে কাপড়ে মোম ও রং দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ শেখেন। এরপর গ্রামে এসে তিনি বাটিক তৈরির কাজ ছোট আকারে শুরু করেন। কালের পরিক্রমায় বাটিকের চাহিদা বাড়তেই থাকে। বিশ্বের অনেক দেশে যাচ্ছে আমাদের গ্রামের বাটিকের পোশাক। আমাদের তৈরি এই বাটিকের পোশাক গুণে ও মানে অনন্য এবং পরতেও আরামদায়ক।’

বাটিক করার জন্য প্রথমে সাদা কাপড় সংগ্রহ করা হয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘পোলারে মাইর্যা ফালাইছে, নাতনিডার জীবনও শ্যাষ করলো’

বরগুনায় কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করার পর বাবাকে হত্যার ঘটনায় পরিবারটি শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। একদিকে কিশোরীটির দুর্দশা, অন্যদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে আর্থিক অনিশ্চয়তা তাদের ঘিরে ধরেছে। ওই পরিবারের প্রবীণ নারী ছেলে হারিয়ে, নাতনির অবস্থা দেখে আক্ষেপ করে বলছিলন, ‘আমরা বাঁচমু ক্যামনে? পোলারে মাইর্যা ফালাইছে। নাতনিডার জীবনও শ্যাষ করলো। এহন আমাগো দ্যাখবে কেডা?’

পরিবারটির ভাষ্য, বরগুনা সদরের বাড়ি থেকে ৪ মার্চ বিকেলে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল সপ্তম শ্রেণির ওই কিশোরী (১৪)। পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে সিজিত রায় নামের এক বখাটের নেতৃত্বে কয়েকজন মুখে কাপড় গুঁজে কিশোরীকে অপহরণ করে। এরপর তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরের দিন ৫ মার্চ সকালে ওই কিশোরীকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পার্কে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা (৩৭) ওই দিন রাতেই বরগুনা সদর থানায় সিজিত রায়সহ দুজনের নামে ধর্ষণের মামলা করেন। পরের দিন স্থানীয় জনতা দুজনকে ধরে পুলিশে দেয়। পুলিশ সিজিতকে আটক করে এবং তার বন্ধুকে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়। কিশোরীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে এবং ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে শাসাতে থাকে আসামিপক্ষ। এরপর ১১ মার্চ কর্মস্থলে গিয়ে নিখোঁজ হন কিশোরীর বাবা। ওই দিন রাত সোয়া ১২টার দিকে মুঠোফোনের রিংটোনের সূত্র ধরে বাড়ির পাশের ঝোপ থেকে কিশোরীর বাবার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামির বাবাসহ চারজনকে আটক করেছিল পুলিশ। পরে একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল শনিবার কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, এসব ঘটনার ধকলে সেই কিশোরী এখন নির্বাক। সে খাবার খাচ্ছে না, সারাক্ষণ চুপচাপ থাকছে, কারও সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলছে না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আর নীরবে চোখের পানি ফেলে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটির সবাই দিশাহারা। প্রতিবেশী ও অন্যরা সাময়িকভাবে তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করলেও দীর্ঘ মেয়াদে কীভাবে সংসার চলবে, তা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। টাকার অভাবে কিশোরীকে চিকিৎসকের কাছেও নিতে পারছেন না বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।

ছয়জনের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন কিশোরীর বাবা। ছোট্ট কাঠ-টিনের জরাজীর্ণ ঘর ও তার চারপাশ দেখে দারিদ্র্য টের পাওয়া যায়। কিশোরীর মা বললেন, ‘আমাগো আর কী জিগাইবেন? এর চাইতে আমাগো মাইর্যা হালাইলেও বাঁইচ্চা যাইতাম।’

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল দুপুরে কিশোরীর বাড়িতে যান। তিনি পরিবারটির খোঁজখবর নেন। তিনি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, হত্যা মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। ধর্ষণ মামলার আসামিরা কারাগারে আছে। পরিবারটি কঠিন সময় পার করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাদের এক মাসের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

এ বিষয়ে বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল হালিম আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, কিশোরীকে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ও তার এক বন্ধুকে আটক করা হয়েছিল। এরপর তাদের ওই কিশোরীর মুখোমুখি করা হয়। তখন একজনকে কিশোরী শনাক্ত করেনি। তাই মুচলেকা রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিশোরীর বাবা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে একজনের ব্যাপারে তদন্ত করে এই ঘটনায় জড়িত থাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হত্যা মামলাটি খুবই গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দল তদন্ত করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশে আসলেন হামজা চৌধুরী
  • লিভারপুলকে হারিয়ে নিউক্যাসলের ৭০ বছরের আক্ষেপ ফুরাল 
  • সেদিন রানার জন্যই খেলেছিল বাংলাদেশ
  • ধর্ষণের দায় একাই নিচ্ছেন মাগুরার সেই শিশুর বোনের শ্বশুর
  • বরগুনার সেই পরিবারটির সঙ্গে ফোনে কথা বললেন তারেক রহমান, পাশে থাকার আশ্বাস
  • মাগুরার শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা, বোন ছিলেন রান্নাঘরে
  • কখন আসছেন হামজা, গন্তব্য কোথায়?
  • দেশে বয়ে চলেছে বছরের প্রথম তাপপ্রবাহ
  • ‘পোলারে মাইর্যা ফালাইছে, নাতনিডার জীবনও শ্যাষ করলো’