উমরানের ‘সর্বনাশে’ মুখে হাসি সাকারিয়ার
Published: 17th, March 2025 GMT
দুর্ভাগ্য পিছু ছাড়ছে না উমরান মালিকের। ২৫ বছর বয়সী এই পেসার এবার চোটের কারণে আইপিএল থেকে ছিটকে গেছেন। সেই যে গত বছরের আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলেছেন, এরপর একের পর এক চোটে পড়ে তাঁর মাঠে ফেরা শুধু পিছিয়েই চলেছে।
উমরানের এবারের চোটে অবশ্য আরেকজনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কলকাতা নাইট রাইডার্স উমরানের জায়গায় দলে ভিড়িয়েছে চেতন সাকারিয়াকে, যিনি দলটির নেট বোলার হিসেবে কাজ করছিলেন।
২০২২ আইপিএলে গতির ঝড় তুলে ভারতীয় ক্রিকেটে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন উমরান। জম্মু–কাশ্মীর থেকে উঠে আসা এই ফাস্ট বোলার তখন নিয়মিত ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করতেন। এর জেরে ভারত জাতীয় দলেও জায়গা করে নিয়েছিলেন। তবে খুব বেশি দিন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি।
গত বছর সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে মাত্র ১টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন উমরান। তাতে এক ওভারে ১৫ রান দেওয়ার পর আর বলও হাতে পাননি। ২০২৪ আইপিএলের পর একাধিকবার চোটে পড়েন উমরান। একবার পায়ের পাতায়, একবার হ্যামস্ট্রিংয়ে আরেকবার ডেঙ্গুতে ভুগে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দুলীপ ট্রফিতে খেলতে পারেননি। পরে সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরার পর আবার নিতম্বের চোটে পড়েন, মিস করেন রঞ্জি ট্রফি।
এবারের আইপিএলের আগে মেগা নিলাম থেকে তাঁকে ৭৫ লাখ রুপিতে দলে ভেড়ায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। গতকাল ফ্র্যাঞ্চাইজিটি জানায়, সুস্থ না হয়ে ওঠায় আইপিএল খেলা হচ্ছে না উমরানের। তাঁর জায়গায় খেলবেন সাকারিয়া।
২৭ বছর বয়সী সাকারিয়াও অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে। সর্বশেষ তাঁকে মাঠে দেখা গেছে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে। এরপর কবজির চোটের কারণে এক বছরের বেশি সময় মাঠের বাইরে ছিলেন।
সম্প্রতি মুম্বাইয়ের একটি টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে তাঁকে খেলতে দেখে নেট বোলার হিসেবে কলকাতা নাইট রাইডার্সে নিয়ে আসেন বোলিং কোচ ভরত অরুণ। ২০২২ সালের নিলামে ৪ কোটি ২০ লাখ রুপিতে বিক্রি হওয়া সাকারিয়া নেট বোলার হিসেবে যোগ দেন মাত্র ২ লাখ রুপিতে। তবে উমরানের চোট তাঁকে আবার আইপিএলের মঞ্চে ফিরিয়ে এনেছে।
এর আগে আইপিএলের তিন মৌসুম রাজস্থান রয়্যালস ও দিল্লি ক্যাপিটালসে মোস্তাফিজুর রহমানের সতীর্থ ছিলেন চেতন সাকারিয়া। এবারের আসরের উদ্বোধনী ম্যাচেই খেলবে সাকারিয়ার কলকাতা নাইট রাইডার্স। ইডেন গার্ডেনে আগামী শনিবার দলটির প্রতিপক্ষ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লিভারপুলকে হারিয়ে নিউক্যাসলের ৭০ বছরের আক্ষেপ ফুরাল
ইংল্যান্ডের প্রতিটা শহরেই একের অধিক ক্লাব আছে। তবে নিউক্যাসলই একমাত্র শহর যেখানে কেবল একটি ক্লাব। এই ক্লাবের ফুটবলাদের ভালোবেসে সমর্থকরা ‘টুন আর্মি’ ডাকে। সেই টুন আর্মিরা সবশেষ ৭০ বছর জেতেনি কোন ঘরোয়া শিরোপা। ২০২১ সালের আগস্টে সৌদি মালিকানার অধীনে ক্লাবটি গেলে, শিরোপা জেতাটা সময়ের ব্যাপার ছিল। তবে এরপরও সাড়ে তিন বছর লাগল। তবে এসবে সমর্থকদের থোড়াই কেয়ার। অবশেষে ইংল্যান্ডে কোন উল্লেখযোগ্য শিরোপা জিতল দলটি।
সুপার সানডেতে (১৬ মার্চ, ২০২৫) লিগ কাপের ফাইনালে লিভারপুলের মুখোমুখি হয়েছিল নিউক্যাসল। যেখানে ২-১ ব্যবধানে অল রেডদের হারিয়ে ১৯৫৫ সালের পর আবারও কোন ঘরোয়া আসরের শিরোপা উঁচিয়ে ধরল ম্যাগপাইরা।
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে দর্শকরা মাঠে ঢুকার মুহূর্তে স্কাই স্পোর্টস এক প্রবীন নিউক্যাসল সমর্থকের সাক্ষৎকার নিয়েছিল। সেখানে তাকে কেমন অনূভব করছেন জিজ্ঞেস করলে, তিনি আবেগী উত্তর দেন, “নার্ভাস...”। সাংবাদিক এবার বলেন, আপনাকে তো খুবই আবেগী মনে হচ্ছে! এর উত্তরে সেই সমর্থক বলেন, “৬০ বছর ধরে সমর্থন করছি, নিউক্যাসল আমার রক্তে।” এরপর চিরাচরিত নিয়মে সাংবাদিক জনপ্রিয় কথাগুলো আদায় করতে প্রশ্ন করলেন, আপনার কি মনে হয় ৭০ বছরের আক্ষেপ এবার ফুরোতে যাচ্ছে? সমর্থকের উত্তর দিলেন অনেক গভীরভাবে, “শিরোপা জয়ের ব্যাপরটা আমি গায়েই মাখাচ্ছি না, আমি শুধু জানি একটা ‘নবযুগের’ শুরু হতে যাচ্ছে।”
আরো পড়ুন:
অ্যানফিল্ডে রূপকথার গল্প লিখল পিএসজি
অ্যানফিল্ডে জাদু দেখানোর অপেক্ষায় পিএসজি
সমর্থকরা ধরে নিয়েই এসেছে যে, লিভারপুলের কাছে তারা হারতেই পারে, তবে থেমে থাকা যাবে না। শিরোপা জিতুক বা হারুক, তাদের সমর্থন আজীবনই থাকবে। এটাই আসলে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে সুপার ফর্মে থাকা লিভারপুলের সাথে নিউক্যাসলের।
১৯৫৫ সালে এফএ কাপ জেতার পর নিউক্যাসল আরেকটা শিরোপা জিতেছে বটে, তবে সেটা ইউরোপে। ১৯৬৯ সালে ফেয়ার্স কাপ জিতেছিল ম্যাগপাইরা। যা বর্তমানে ইউরোপা লিগ। এরপর আরও ৫ বার ঘরোয়া টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠে, যার ৩টি এফএ কাপ ও ২টি লিগ কাপ। সবশেষ ২০২২/২৩ মৌসুমে একই প্রতিযোগিতায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে হেরে রানার্স আপ হয়েছিল তারা।
অন্যদিকে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয়ের পথে এগিয়ে যাওয়া লিভারপুল মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে বিধ্বস্ত। হেক্স ( একই মৌসুমে ৬ শিরোপা) জেতার মৌসুমে গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ, ২০২৫) দিবাগত রাতে তারা পিএসজির বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেয়। এরপর গতরাতে লিগা কাপ খোয়ালো আর্নে স্লটের দল।
৬৫ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখেও গোলের জন্য লিভারপুল নিতে পারে কেবল সাতটি শট, এর দুটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে নিউক্যাসলের ১৭ শটের ছয়টি ছিল লক্ষ্যে। ড্যান বার্নের ৪৫ মিনিটের গোলে প্রথমার্ধ শেষ করে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে। বিরতির পর ৫২ মিনিটে আলেক্সান্ডার ইসাকের গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে দলটি।
আট মিনিট যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে নিউক্যাসলের জালে বল পাঠান ফ্রেদরিক চিয়েসা। শুরুতে অফসাইড দিলেও ভিএআরের সাহায্যে গোলের বাঁশি বাজান রেফারি। তাতে জেগে ওঠে লিভারপুলের আশা। তবে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার বাকি সময়টায় গোলের আর তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি অল রেডরা।
তাতেই শেষ হয় নিউক্যাসলের ৫৬ বছরের আক্ষেপ। ওয়েম্বলিতে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী ছিল নিউক্যাসলের তিন প্রজন্ম। যারা প্রিয় ম্যাগপাইদের ঘরোয়া শিরোপা জিততে দেখেনি। নিউ ক্যাসলের হয়ে প্রথম গোল করা ড্যান বার্ন তো বলেই ফেললেন, “আমি আজ ঘুমাবো না, কারণ আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্নে আছি।” টুনেও (নিউক্যাসল) কাল রাতে হয়ত কেউ ঘুমাতে পারেনি। তাদের মধুর স্বপ্ন যে চলছেই। সারা পৃথিবীতে আকাশ তার জাগাতে থাকলেও, উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের নিউক্যাসলে গতরাতের আকাশ নেমে এসেছিল মাটির কাছেই।
ঢাকা/নাভিদ