দুই কোম্পানি একীভূত হচ্ছে প্রিমিয়ার সিমেন্টের সঙ্গে
Published: 17th, March 2025 GMT
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রিমিয়ার সিমেন্টের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে তার সহযোগী দুই কোম্পানি। কোম্পানি দুটি হলো ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস ও প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশন। খরচ কমাতে সহযোগী দুই কোম্পানিকে একীভূত করার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রিমিয়ার সিমেন্টের পরিচালনা পর্ষদ।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে নিয়ম অনুযায়ী, প্রিমিয়ার সিমেন্ট এ একীভূতকরণের সিদ্ধান্তের কথা গতকাল রোববার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে শেয়ারধারীদের জানিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রিমিয়ার সিমেন্টের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সহযোগী দুই কোম্পানিকে একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বর্তমানে কোম্পানি তিনটি আলাদাভাবে পরিচালিত হচ্ছে। লোকবল থেকে শুরু করে প্রশাসনিক খরচ সবই আলাদা। তাই খরচ কমিয়ে আনতে সহযোগী দুই কোম্পানিকে প্রিমিয়ার সিমেন্টের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।আমীরুল হক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রিমিয়ার সিমেন্টপ্রিমিয়ার সিমেন্ট জানায়, ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস ও প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশন নামের কোম্পানি দুটি প্রিমিয়ার সিমেন্টের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে। বর্তমানে এ দুটি কোম্পানির মালিকানার সঙ্গে প্রিমিয়ার সিমেন্টও যুক্ত রয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারধারী, সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আদালতের অনুমোদনের পর একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ন্যাশনাল সিমেন্টের ১৮ শতাংশ মালিকানা রয়েছে প্রিমিয়ার সিমেন্টের হাতে। আর প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশনের ৯৬ শতাংশ মালিকানা প্রিমিয়ার সিমেন্টের। একীভূতকরণের মাধ্যমে এ দুটি কোম্পানির শতভাগ মালিকানা প্রিমিয়ার সিমেন্টের কাছে ন্যস্ত হবে। তাতে বিলুপ্ত হয়ে যাবে ওই দুটি কোম্পানির আলাদা সত্তা। বর্তমানে এসব কোম্পানি আলাদা আলাদা সত্তা নিয়ে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। প্রিমিয়ার সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, দুটি কোম্পানিকে একীভূত করা হলে তাতে প্রশাসনিক ব্যয় কমবে। এতে প্রিমিয়ার সিমেন্টের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী ইছানগরে অবস্থিত। ১৯৯৬ সালে কোম্পানিটি চালু হয়। এটির মালিকানার সঙ্গে প্রিমিয়ার সিমেন্ট যুক্ত হয় ২০১৩ সালে। ওই বছর কোম্পানিটির ১৮ শতাংশ মালিকানা নেয় প্রিমিয়ার সিমেন্ট। বাকি ৮২ শতাংশ মালিকানা ব্যক্তিশ্রেণির উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে। এখন কোম্পানিটি একীভূত হলে ব্যক্তিশ্রেণির উদ্যোক্তারা তাঁদের হাতে থাকা শেয়ার প্রিমিয়ার সিমেন্টের কাছে হস্তান্তর করবেন। বিনিময়ে তাঁরা প্রিমিয়ার সিমেন্টের শেয়ার পাবেন।
বর্তমানে ন্যাশনাল সিমেন্টের কারখানার বার্ষিক সিমেন্ট উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। কোম্পানিটির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে কোম্পানিটির টার্নওভার বা বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৯৪ কোটি টাকা। ওই বছর সব ধরনের খরচ বাদ দেওয়ার পর কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছিল প্রায় সোয়া এক কোটি টাকা। একীভূত হলে কোম্পানিটির এ আয় যুক্ত হবে প্রিমিয়ার সিমেন্টের আয়ের সঙ্গে।
শেয়ারবাজারের কোম্পানিন্যাশনাল সিমেন্ট ও প্রিমিয়ার পাওয়ার নামে দুটি আলাদা কোম্পানিকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রিমিয়ার সিমেন্টের পরিচালনা পর্ষদ।অন্যদিকে প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশনের যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে। কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫ মেগাওয়াট। মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে প্রিমিয়ার সিমেন্টের কারখানাতেই এই বিদ্যুকেন্দ্র অবস্থিত। সিমেন্ট কারখানার উৎপাদন নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। এটির উৎপাদিত শতভাগ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় প্রিমিয়ার সিমেন্ট কারখানায়। কোম্পানিটির মালিকানার ৯৬ শতাংশই রয়েছে প্রিমিয়ার সিমেন্টের হাতে। বাকি ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় রয়েছে ব্যক্তিশ্রেণির কয়েকজন উদ্যোক্তা। কোম্পানিটি এখন প্রিমিয়ার সিমেন্টের সঙ্গে একীভূত হলে তাতে ব্যক্তিশ্রেণির উদ্যোক্তাদের হাতে থাকা ৪ শতাংশ শেয়ার প্রিমিয়ার সিমেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বিনিময় তাঁরা প্রিমিয়ার সিমেন্টেরও সমপরিমাণ শেয়ার পাবেন। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশন সাড়ে ১০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। বছর শেষে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
দুই কোম্পানি একীভূতকরণের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে কোম্পানি তিনটি আলাদাভাবে পরিচালিত হচ্ছে। লোকবল থেকে শুরু করে প্রশাসনিক খরচ সবই আলাদা। তাই খরচ কমিয়ে আনতে সহযোগী দুই কোম্পানিকে প্রিমিয়ার সিমেন্টের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাতে খরচ কমলে প্রিমিয়ার সিমেন্ট দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হবে।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, দুই কোম্পানিকে একীভূত করতে প্রিমিয়ার সিমেন্টকে নতুন করে প্রায় তিন কোটি শেয়ার ইস্যু করতে হবে। আদালত ও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের পর এসব শেয়ার ইস্যু করা হবে। ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের হাতে থাকা ন্যাশনাল সিমেন্ট ও প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশনের মালিকানা বুঝে নিতে এসব শেয়ার ইস্যু করা হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রিমিয়ার সিমেন্টের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুতে প্রিমিয়ার সিমেন্টের নতুন এসব শেয়ার ইস্যু করা হবে। তাতে প্রিমিয়ার সিমেন্টের পরিশোধিত মূলধন বাড়বে ৩০ কোটি টাকা।
প্রিমিয়ার সিমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কোম্পানিটির কর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৯০১। অন্যদিকে প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশনের ২৪ জন ও ন্যাশনাল সিমেন্টে ৭৬২ জন কর্মী রয়েছেন। সব মিলিয়ে তিন কোম্পানিতে লোকবল দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৬৮৭ জন। কোম্পানি তিনটি একীভূত হলেও কোনো কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হবে না বলে জানিয়েছেন কোম্পানির শীর্ষ এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, সব কর্মী প্রিমিয়ার সিমেন্টের কর্মী হিসেবে কাজ করবেন।
প্রাক্–বাজেট আলোচনায় পরামর্শ
প্রাক্-বাজেট আলোচনায় অর্থ পদেষ্টাকে ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায়ের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ম য় র স ম ন ট র পর শ য় রব জ র পর চ ল অন য য় সহয গ উৎপ দ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
হাতিরঝিলে নানা আয়োজনে দুই দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা
হাতিরঝিল এম্ফিথিয়েটার এবং এর সংলগ্ন এলাকায় আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পরিদর্শন করেছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম।
রোববার সন্ধ্যায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে ২ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য বৈশাখী মেলার সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনকে সাদরে বরণ করে নেওয়ার জন্য ও বাঙালি জাতির প্রাণের এই উৎসবকে রাজধানীবাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এ বছর নানাবিধ আয়োজন করেছে রাজউক। পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে এবং নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ব্রেইন থিওরি নামক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় রাজউক এর তত্ত্বাবধানে আয়োজন করা হয়েছে ২ দিন ব্যাপী এই চৈত্র সংক্রান্তি ও বর্ষবরণ উৎসব। রাজউক চেয়ারম্যান জনাব রিয়াজুল ইসলাম আজ সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন এবং এই আয়োজনকে উৎসব মুখর করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
বর্ষবরণের এই উৎসব আয়োজনে হাতিরঝিল এম্ফিথিয়েটার এলাকায় থাকছে ঐতিহ্যবাহী খাবার ও নানাবিধ জিনিসের বিভিন্ন স্টল, শিশু-কিশোরদের চিত্তবিনোদনের জন্য কিডস জোনসহ বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক রাইড যার মধ্যে রয়েছে নাগরদোলা, মেরি গো রাউন্ড, লম্ফ জম্ফ ইত্যাদি। এছাড়াও থাকছে শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সকলের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মেলা পরিদর্শনকালে রাজউক চেয়ারম্যান প্রতিটি স্টল ঘুরে দেখেন এবং রাইডসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশেষ গুরত্বারোপ করেন। মেলায় আগতদের সাথে রাজউক চেয়ারম্যান কথা বলেন। হাতিরঝিল এলাকায় এ ধরনের আয়োজনে দর্শনার্থীরা তাদের আনন্দের কথা এবং মেলা ভ্রমণকালে তাদের সুবিধা অসুবিধাসমূহ তাকে অবহিত করেন।
এসময় মেলা প্রাঙ্গণে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খাবারের প্যাকেট ও অন্যান্য আবর্জনা নিয়ে রাজউক চেয়ারম্যান অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আয়োজক প্রতিষ্ঠানকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণের জন্য কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন।
এছাড়াও মেলার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে তিনি দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন এবং যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানোর পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন।
প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব এই পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নিতে দেশবাসীর সাথে আমরাও প্রস্তুত আছি। অনাবিল আনন্দের মধ্য দিয়ে আমরা আগামীকালের উৎসব পালন করব। রাজধানীবাসী যেন নিশ্চিন্তে আনন্দঘন পরিবেশে এই উৎসব পালন করতে পারে, তার জন্য রাজউক সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এ বছর আমরা ঢাকাবাসীর কাছে অন্যরকম একটি আয়োজন পৌঁছে দিব।
এসময় তিনি রাজধানীসহ সমগ্র দেশবাসীর প্রতি নববর্ষের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন এবং সকলে সপরিবারে এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিবেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। রাজউক চেয়ারম্যান আগামীকাল বিকেল ৪:০০ ঘটিকায় বৈশাখী মেলায় উপস্থিত থেকে অংশগ্রহণকারীদের সাথে বৈশাখের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিবেন এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করবেন।
মেলা পরিদর্শনকালে মেলা প্রাঙ্গণে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম, মেলা আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ফরিদ আহমেদসহ মেলার আয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।