‘তিনটে ছেলে-মেয়ে এতিম হয়ে গেছে, স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই’
Published: 17th, March 2025 GMT
রাজকী বেগমের চোখের সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। তাঁর ছেলেমেয়েদেরও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আহাজারি করতে করতে রাজকী বেগম বলছিলেন, ‘আমার তিনটে ছেলে-মেয়ে এতিম হয়ে গেছে, আমার স্বামী হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই।’
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শিলিমপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত শনিবার সকালে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজকী বেগমের স্বামী হাসিম মোল্যা (৩৮)। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রোববার বিকেলে গ্রামের বাড়িতে হাসিম মোল্যার মরদেহ এসে পৌঁছায়। আসরের নামাজ পর জানাজা শেষে স্থানীয় বাগমারা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালিয়ার হামিদপুর ইউনিয়নের শিলিমপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শনিবার সকালে ঠান্ডু মোল্যা ও জনি মোল্যা পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ১৩ জন ও ২ পুলিশ সদস্য আহত হন৷ স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে গুরুতর আহত জনি মোল্যা ও তাঁর ভাই হাসিম মোল্যাকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসিম মোল্যা মারা যান। ওই ঘটনায় সিরাজ মোল্যা ও আজিজার শেখ নামের দুজনকে ১টি একনলা বন্দুক, ২০টি গুলিসহ আটক করা হয়।
গতকাল বিকেলে শিলিমপুরে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার পরিবেশ থমথমে। নিহত ব্যক্তির প্রতিপক্ষ ঠান্ডু মোল্যা পক্ষের কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানো হয়েছে। মরদেহ আসার খবরে আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় লোকজন ভিড় করেছেন হাসিম মোল্যাদের বাড়িতে। অঝোরে কাঁদছেন বৃদ্ধ মা জাহিদা বেগম। তাঁর পাশেই কাঁদছেন হাসিম মোল্যার স্ত্রী রাজকী বেগম।
রাজকী বেগমের অভিযোগ, বাড়ির পাশে তাঁর সামনেই প্রতিপক্ষের লোকজন স্বামী ও সন্তানকে কুপিয়েছিলেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বামী মারা গেছেন। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজকী বেগম বলেন, ‘আমার সামনেই ওরা (প্রতিপক্ষ) স্বামীর মাথায় কোপ দেয়, হাত কেটে ফেলে। আমি কইছি, আর মারিস না, আমার কথা শুনল না। পাশেই আমার সন্তানরেও ওরা কোপাইয়ে ফেলাই থুইছে। ওই সময় আমার কেয়ামত হয়ে যাচ্ছে। আমি স্বামীর কাছে আসব, নাকি সন্তানের কাছে যাব। আমার ছেলের এক পায়ে তিনটে কোপ দেছে। আমি এসবের বিচার চাই।’
নিহত হাসিম মোল্যার বোন নাজনীন আক্তার বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আমার এক ভাইয়ের হাত কেটে দেছে, ভাতিজাকে কুপিয়েছে। আমার আরেক ভাইকে খুন করিছে যারা, তাদের ফাঁসি চাই।’
এদিকে হাসিম মোল্যার মৃত্যুর পর প্রতিপক্ষ ঠান্ডু মোল্যা পক্ষের লোকজন এলাকায় না থাকায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
গতকাল রাত ১০টার দিকে কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক। নিহত হাসিমের মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবার এখনো কোনো মামলা করেনি। তবে পুলিশকে মারধর এবং অস্ত্র, গুলিসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিশুকিশোরদের প্রথম রোজা
রমজান একটি আধ্যাত্মিক মাস। এই মাসের রীতিনীতির মধ্যে শিশুদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে রমজান তাদের কাছে আরও অর্থবহ করে তোলা যেতে পারে। যদিও রোজা রাখা শিশুদের জন্য চ্যালেঞ্জিং, তবে বাবা-মায়ের কিছু কৌশল এবং পারিবারিক ঐতিহ্যের উষ্ণতা তাদের অভিজ্ঞতাকে সুন্দর ও মনে রাখার মতো করে তুলতে পারে।
রোজা রাখার জন্য প্রস্তুতি ও অভ্যাস গঠন গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের জন্য রমজানে রোজা রাখা জরুরি নয়, তবে পারিবারিকভাবে সন্তানদের ছোটবেলা থেকে রোজার প্রস্তুতি নিতে উৎসাহিত করা যায়, যাতে তারা পরবর্তী সময়ে রোজা রাখতে প্রস্তুত থাকে। বাবা-মায়েদের উচিত তাদের সন্তানের শারীরিক সক্ষমতা, স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তারা কতক্ষণ রোজা রাখবে তা ঠিক করে দেওয়া।
সাহরি প্রশিক্ষণ
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ওমর জাবের ‘ন্যাশনাল চিলড্রেন ফাউন্ডেশন’র একটি নিবন্ধে বলেছেন যে, বাবা-মায়ের প্রথম থেকেই প্রত্যাশা করা উচিত নয় যে, ছোট শিশু পুরো একটা দিন রোজা রাখবে, বরং তাদের একটু একটু করে অভিজ্ঞতা দিতে হবে। পর্যায়ক্রমে তাদের রোজার সময়কাল বাড়ালে তাদের শরীর ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুনরোজার নিয়তের বিধান কী১২ মার্চ ২০২৫তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন, যা শিশুর রোজা রাখার সময় বাবা-মাকে মনে রাখতে হবে:
১. সাহরি খাবার: সাহরির খাবার অবশ্যই ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ হতে হবে। যেমন পূর্ণ শস্য, শিম, ফল, সবজি, চর্বিহীন মাংস, ডিম ও দুগ্ধজাত পণ্য।
২. খাবারে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলতে উৎসাহিত করা উচিত।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান: অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলতে হবে এবং রোজা না-রাখার সময়ও পর্যাপ্ত পানি পান করতে দিতে হবে।
৪. অতিরিক্ত খাবার বর্জন: কারণ এটি হজমের সমস্যা এবং অস্বস্তি ভাব হতে পারে। শিশুকে ছোট ছোট খাবার খেতে উৎসাহিত করুন।
আরও পড়ুনরমজানে অলসতা ভর করার কারণ১২ মার্চ ২০২৫শিশুদের উৎসাহিত করার উপায়
বাবা-মায়ের উচিত রমজান মাসে কিছু ইতিবাচক পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুদের উৎসাহিত করা। এখানে কয়েকটি ‘প্রোডাকটিভ মুসলিম’ ও ‘নাসা ফাউন্ডেশন’র ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়েছে:
১. রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা: রমজান মাস শুরুর আগে শিশুদের রমজান সম্পর্কে সচেতন করা উচিত। রমজান বড়দের রোজার মাস নয়, শিশুদের জন্যও রমজানের গভীরতা ও পবিত্রতা শেখানোর বহু কিছু আছে। যেমন: আল্লাহর প্রতি ভয়, দরিদ্রদের কষ্ট বোঝা এবং ক্ষুধায় ধৈর্য ধারণ করার মতো বিষয়গুলো তাদের পরিচিত করানো যায়।
২. বাড়ি সাজানো: বাড়ির মধ্যে রমজান মাসের পরিবেশ তৈরি করা শিশুদের জন্য রমজানকে আরও আনন্দময় করে তুলতে পারে। ফানুস, রমজান পোস্টার এবং চাঁদ-তারা খচিত স্টিকার ব্যবহার করা যায়। শিশুদের সঙ্গে নিয়ে রং-বেরঙের কাগজ কেটে সাজানোর আয়োজন করলে তারা নিজেদের রমজানের সঙ্গে আরও যুক্ত ভাববে।
আরও পড়ুনরমজানের মাঝের ১০ দিনে করণীয়১৩ মার্চ ২০২৫৩. একসঙ্গে খাবার প্রস্তুত করা: শিশুদের রমজান মাসের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর একটি দুর্দান্ত উপায় হলো তাদের সাহরি ও ইফতার প্রস্তুতিতে যুক্ত করা। শিশুরা টেবিল সাজাতে সাহায্য করতে পারে, অথবা তাদের স্ন্যাক্স বা মিষ্টান্ন, শরবত তৈরি করতে দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া প্রতিবেশীদের বাসায় ইফতার পৌঁছাতেও তাকে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
৪. রমজান ভিত্তিক কার্যক্রম: রমজানে শিশুদের জন্য বিভিন্ন আনন্দময় কার্যক্রমের সুযোগ করে দেওয়া যায়। যেমন, রমজান ক্যালেন্ডার তৈরি করা, যেখানে প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজ থাকবে। বা কোরআন থেকে একটি আয়াত পড়া অথবা নবীদের রোজা রাখার গল্প, অথবা নবী যুগের শিশুদের প্রথম রোজা রাখার ঘটনা শোনানো।
৫. রমজান মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া: রমজান মাসকে ব্যবহার করে শিশুদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, দরিদ্রদের সাহায্য করা এবং দানশীলতা শেখানো, পথে মুসাফিরকে খাবার বিতরণ বা অর্থ ও জামা কাপড় দান করা ইত্যাদি। এ জন্য তাকে ছোট কোনো উপহার দেওয়া যায়।
সূত্র: আলজাজিরা ডট নেট
আরও পড়ুনসাহরির যে ৭টি বিধান মনে রাখা জরুরি১২ মার্চ ২০২৫