দিনটি ছিল রোববার, সরকারি ছুটির দিন। তারিখের হিসেবে ১৭ মার্চ, ১৯৭৪। ওই দিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫৪তম জন্মবার্ষিকী। অবশ্য ওই মার্চ মাসেই তিনি বেশ অসুস্থ ছিলেন। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য রুশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯ মার্চ সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কো যান। তাঁর ঢাকা ত্যাগের দুইদিন আগেই ঘটে সেই ঘটনা।

কী ঘটেছিল সেদিন

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ১৭ মার্চ পল্টনে জনসভা করে জাসদ। সভা শেষে দলের সভাপতি মেজর (অব.

) এম এ জলিল ও সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে নেতা–কর্মীরা মিছিল নিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনসুর আলীর রমনায় মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন ঘেরাও করতে যান। ওই সময় মন্ত্রী কেরানীগঞ্জে ছিলেন। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে মিছিলকারীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা মন্ত্রীর বাড়ির লোহার গেটে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন ও ভেতরে ইটপাটকেলও ছোড়েন। পুলিশও বাসার ভেতর থেকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়; শুরু হয় সংঘর্ষ। এ সময় ঘটনাস্থলে আসেন রক্ষীবাহিনীর সদস্যরাও। মূল ঘটনা ঘটে এরপরেই। এক পর্যায়ে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পুলিশকে সহায়তা দিতে থাকে রক্ষীবাহিনী। তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি করে। মেজর জলিল ও আ স ম রব, শাজাহান সিরাজ, মমতাজ বেগমসহ জাসদের অনেক নেতা–কর্মীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির সামনের রাস্তায় আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই সময় পুলিশ জাসদের প্রায় অর্ধশত নেতা–কর্মীকে আটকও করে। সে সময়ই গুলিতে নিহত হন ৬ জন।

‘ইত্তেফাক’ জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীর হামলায় আহত ৩৬ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনজন মারা যান। আহতদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁরা হলেন বাচ্চু মিয়া, কাজী মোস্তফা, আবুল কাশেম, আব্দুল বারেক, শাহজালাল, ফরহাদ, আবদুল হাই, শহীদুল্লাহ, আবুল হোসেন, মাঈনুদ্দীন খান বাদল, শামসুদ্দীন আজাদ, মোহাম্মদ বেলায়েত ও একজন অজ্ঞাতনামা। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইডেন কলেজের ছাত্রী মুকুল দেসাই, জাহাঙ্গীর ও শহীদুল হক। এর মধ্যে মুকুল দেসাই ও শহীদুল হকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সেই ঘটনায় আহতদের ছবি প্রকাশ করেছিল বাংলার বাণী

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মেঘনা আলমের মুক্তিসহ বিশেষ ক্ষমতা আইন বিলোপের দাবি

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক মেঘনা আলমের মুক্তির দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। একইসঙ্গে এই আইন বিলোপেরও দাবি জানানো হয়েছে। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। কমিটির পক্ষে এই বিবৃতি পাঠান সংগঠনের সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

বিবৃতিতে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনা আলমের আটকের ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের স্বৈরাচারি আচরণের বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ একটি ফ্যাসিবাদী আইনের ধারা, যার বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা আগে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছেন। অথচ এই আইন ব্যবহার করেই সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের অন্যায় আচরণ ও প্রতারণা ঢাকতে একজন নারীকে বাড়িতে হামলা করে তুলে নিয়ে তাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে বহু গুম ও স্বেচ্ছাচারি আটকের ভিত্তি তৈরি করে নাগরিকের মানবাধিকারকে নিষ্পেষিত করা হয়েছিল। জুলাইয়ে শিক্ষার্থী শ্রমিক জনতার বিপুল রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যখন জনগণের আকাঙ্খা হয়ে উঠেছে, তখন এ রকম আইনের ব্যবহার পুনরায় ফ্যাসিবাদী তৎপরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।’ 

মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে পুলিশের আনা ‘মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনীতিক সম্পর্ক নষ্ট করার’ অভিযোগকে বিভ্রান্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্র যদি একজন কূটনীতিকের ব্যক্তিগত বিদ্বেষের জের ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে নাগরিকের অধিকার হরণ করে, তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়। একইসঙ্গে কূটনৈতিক প্রশ্নে দ্ব্যর্থহীন নতজানুতা প্রকাশ পায়। 

বিবৃতিতে অবিলম্বে মেঘনা আলমের মুক্তি এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন (১৯৭৪) বিলোপের দাবি জানায় ‎‎গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। একইসঙ্গে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনায় ৩৮ নাগরিকের নিন্দা
  • মেঘনা আলমের মুক্তিসহ বিশেষ ক্ষমতা আইন বিলোপের দাবি
  • ছাত্রীদের বহিষ্কারের বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে: আনু মুহাম্মদ