কোরআনের মাধ্যমে জীবন সমৃদ্ধ করার ৭ উপায়
Published: 17th, March 2025 GMT
আল্লাহ কোরআনকে আত্মিক রোগের নিরাময়, পথনির্দেশক এবং বিশ্বাসীদের জন্য রহমত হিসেবে বর্ণনা করেছেন (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৫৭)। পৃথিবী ও পরকাল উভয় জগতের জন্য কোরআন জীবনের জন্য একটি ভালো নির্দেশিকা। কিন্তু কীভাবে সেই নির্দেশিকা অবলম্বনে আপনি জীবনকে সমৃদ্ধ করবেন, তার ৭টি উপায় জানাচ্ছি:
কোরআন পাঠ করা
সঠিক তাজবিদসহ কোরআন পাঠ করলে হৃদয় প্রশান্ত হয়, আত্মা শান্তি অনুভব করে, ঘর বরকতময় হয়, আল্লাহর নৈকট্যবোধের অনুভূতি দেয় এবং মানসিক চাপ কমিয়ে দুঃখ বা শোকের ব্যথা লাঘব করে। ফজরের পর প্রতিদিন কয়েক পৃষ্ঠা কোরআন পাঠ করা সৎ পথ অনুসরণের এবং আল্লাহর রজ্জু ধরে রাখার ভালো উপায়।
আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আল-আস (রা.
অনুবাদ ও তফসির পড়া
কোরআন সঠিকভাবে বুঝলে আমরা বাস্তবতার একটি ভালো ধারণা পেতে পারি। বিশেষজ্ঞ স্কলারের রচিত কোরআনের সুন্দর অনুবাদ এবং তফসির পড়তে পারেন। তফসির কোরআনের গোপন রহস্য গুলি উন্মোচন করতে সাহায্য করে এবং শব্দ, আয়াত ও সুরার গূঢ় রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়।
কোরআন মুখস্থ করা
হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি কোরআন থেকে কোনো অংশ মুখস্থ করে না, সে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরের মতো।’ (তিরমিজি: ২,৯১৩)
আল্লাহর এই মহিমাময় বাণী আপনার হৃদয়ে স্থান পেলে রাতের দীর্ঘ নামাজেও ক্লান্তি অনুভব করবেন না। কোরআনে বর্ণিত নানা ঘটনার সঙ্গে জীবনের মিল খুঁজে পাওয়া যায় তখন, প্রতিদিন হৃদয়ে সেই সব আয়াত বাজতে থাকে। ফলে দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে আপনার এক ধরনের অন্তর্দৃষ্টি লাভ হবে।
আরও পড়ুনযে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়০৫ মার্চ ২০২৫মনোযোগ দিয়ে কোরআন শোনা
ভ্রমণে বা হাঁটতে হাঁটতে কিংবা অবসরে বসে বিশুদ্ধ কোরআন পাঠ শুনতে পারেন। অথবা কোনো আলেমের রেকর্ডেড ব্যাখ্যা শুনুন। কোরআনের কোর্স বা ক্লাসেও যুক্ত থেকে মনোযোগ দিয়ে অনুধাবন করার চেষ্টা করা যায়। এটি এমন এক আধ্যাত্মিক জগতের সন্ধান দেবে আপনাকে, যা ব্যাখ্যার অতীত।
কোরআন অনুযায়ী জীবনাচরণ
দৈনন্দিন জীবনে কোরআন অনুসরণ করুন। কোরআন পথনির্দেশনা হিসেবে মানবজাতির জন্য পাঠানো হয়েছে, শুধু পাঠ বা মুখস্থ করার জন্য নয়। কোরআনের সঙ্গে সম্পর্কিত সকল ইবাদতে যদি কেবল কোরআন পড়েন এবং শেখেন, আর আদেশগুলো অনুসরণ না করেন, তাহলে তা কিয়ামতের দিন আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
আরও পড়ুনকোরআন তিলাওয়াতে সিজদার নিয়মাবলী০৫ মার্চ ২০২৫অন্যদের কোরআন শেখানো
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সে, যে কোরআন শেখে এবং অন্যদের তা শেখায়।’ (বুখারি: ৫,০২৭)
বাস্তবেও কোরআন প্রচার করা খুব কঠিন কাজ নয়। বন্ধুদেরকে চায়ের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে কিছু আয়াত পড়ুন এবং তার অনুবাদ ও তফসির নিয়ে আলোচনা করুন। অথবা দেখুন, আপনার কোনো প্রতিবেশী কোরআন শিখতে চান দীর্ঘদিন ধরে, কিন্তু সুযোগ করতে পারছেন না। তার সঙ্গে আলাপ করে একটি সময় বের করে নিন।
‘আহলুল কোরআন’ হওয়া
‘কোরআন আসর’ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন, যারা হবেন কুরআনপ্রেমী, আহলুল কোরআন। এর মাধ্যমে মুসলিম-প্রতিবেশে একটি অবর্ণনীয় সুন্দর সম্পর্কের সৃষ্টি করা সম্ভব। এই প্রেম নিখাদ এবং শুধু আল্লাহর জন্য, আল্লাহ নিশ্চয় এর সর্বোত্তম প্রতিদান আপনার জীবনে দেবেন।
কোরআন বহু মানুষের জীবনকে উজ্জ্বল রঙে পূর্ণ করেছে, আত্মাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করেছে এবং আল্লাহর কাছাকাছি থাকার অনুভূতি দিয়েছে। আপনি কি সেই সুন্দর অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে চান? তাহলে কোরআনের কাছে আসুন, কোরআনকে ভালোবাসুন।
সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডট কম
আরও পড়ুন‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া’ কখন পড়ব০৪ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রআন প ঠ ক রআন শ ক রআন র প ঠ কর র জন য আল ল হ আপন র তফস র
এছাড়াও পড়ুন:
‘সন্তানের উসিলায় আজীবন পহেলা বৈশাখ ভিন্নভাবে পালন করতে পারব’
বাড়ির পাশে মুরগির খামার। খামারে স্বামী মমিনুল ইসলামকে সহযোগিতা করেন স্ত্রী রত্না বেগম। দীর্ঘ কয়েক মাস তিনি একাই চালিয়ে যাচ্ছেন খামারের সব কাজ। কারণ, রত্না বেগম এখন হাসপাতালের বেডে। রোববার মধ্য রাতে হঠাৎ প্রসব বেদনার যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না। স্বজনদের পরামর্শে বাধ্য হয়ে রাতেই তাঁকে রংপুর নগরীর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পহেলা বৈশাখ সকাল ৬টায় তাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় পুত্রসন্তান। শিশুটির জন্মগ্রহণের খবরে চারদিক সরব হয়ে ওঠে। কিন্তু মমিনুলের মুখে হাসি নেই। কারণ তিনি ইতোমধ্যে জেনে গেছেন সন্তান সুস্থ থাকলেও প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী।
হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ডা. ফারহানা ইসলাম জানান, অস্ত্রোপচার করতে হয়নি। স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে রত্নার। তিনি এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হননি। তাঁর শরীরে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। সন্তান সুস্থ-স্বাভাবিক রয়েছে, মায়ের দুধ পান করছে।’
‘পর পর দুটি কন্যাসন্তানের পর ছেলে হইল, আল্লাহ আমাদের আশা পূরণ করেছে। পহেলা বৈশাখ সকালে সন্তানের জন্ম হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। সন্তানের উসিলায় আজীবন আমরা পহেলা বৈশাখ ভিন্নভাবে পালন করতে পারব।’ সন্তান কোলে তুলে আনন্দের এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের বাবা মমিনুল ইসলাম।
রংপুর সদর উপজেলার খলেয়া গঞ্জিপুর গ্রামের বাসিন্দা মমিনুল ২০১২ সালে পার্শ্ববর্তী গ্রামের রত্না বেগমকে পরিবারের সিদ্ধান্তে বিয়ে করেন। খেটে খাওয়া দম্পতির পর পর তাদের দুটি কন্যাসন্তান হয়। তৃতীয় সন্তানের আশায় প্রহর গুনছিলেন পরিবারের সবাই। যদিও অন্তঃসত্ত্বাকালীন পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেননি তারা। জানতেন না সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিনক্ষণ। ভরসা করেন সৃষ্টিকর্তার ওপর। তবে তারা মনে করেন সন্তান নেওয়ার আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এতে অনেক জটিলতা কমে আসে।
বাড়ির খামারের আয় দিয়েই মূলত পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। ধর্মভীরু মা-ই তাদের দুই কন্যাসন্তানের নাম রেখেছেন। বড় মেয়ে জান্নাতুল মুনতাহার বয়স ১১ বছর। স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। পাঁচ বছর বয়সের জান্নাতুল মাওয়া স্থানীয় মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করে মাত্র। তৃতীয় সন্তান এলো এবার। হিসাব অনুযায়ী এ মাসের যে কোনো সময় সন্তান প্রসব হতে পারে ধারণা ছিল এ দম্পতির। বাংলা নববর্ষের দিনই হবে এমন ধারণা ছিল না।
এটি শুভ লক্ষ্মণ উল্লেখ করে মমিনুল ইসলাম জানান, ভালো দিনেই ছেলের জন্ম হয়েছে। বাংলা বর্ষবরণে যেদিন বাঙালিরা তাদের প্রাণের উৎসবে মেতে ওঠে; এমন উৎসবের দিনে সন্তান জন্ম হওয়ায় তার জন্মদিন যেমন সহজে মনে থাকবে, তেমনি প্রতি বছর উৎসবের মধ্যেই জন্মদিন পালন হবে।
সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান মমিনুল। তিনি বলেন, ছেলেকে কুরআনের হাফেজ বানিয়ে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে জীবনে কত কষ্টই না করেন বাবা-মা। কিন্তু এক সময় বাবা-মায়ের খোঁজ নেওয়ার মতো সময় থাকে না ওই সন্তানের। সবকিছু থাকার পরও শেষ সময়ে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হয় অনেক বাবা-মাকে। তাই সন্তানকে মানবিক শিক্ষা দিয়ে মানুষ হিসেবে তৈরি করতে চাই।
তিনি আরও জানান, রোববার রাতে রত্না বেগমের প্রসব বেদনা উঠলে ভাড়া করা গাড়িতে ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানকার ডাক্তার-নার্সরা আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। প্রসবের ব্যবস্থা করেন। অবশেষে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। পহেলা বৈশাখ সকালে সন্তান জন্ম নিলেও কেউ আমাদের কোনো শুভেচ্ছা জানায়নি। দৈনিক সমকাল নবজাতকসহ আমাদের সন্তানকে ফুল দিয়ে বরণ করেছে, তা আজীবন মনে থাকবে।’
পহেলা বৈশাখ সকালে ওই হাসপাতালের ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, রত্না বেগম বেডে শুইয়ে থাকলেও মমিনুল ইসলাম ওয়ার্ডের মধ্যে সন্তানকে কোলে জড়িয়ে পায়চারি করছেন। নবজাতকের শরীরে তখন শুধুই টাওয়াল জড়ানো। তবে খবর পাওয়ার পর বাড়ি থেকে স্বজনরা এসে তাকে জামা পরিয়েছে। বাজার থেকে কিনে পহেলা বৈশাখের লাল টুকটুকে জামা পরাবেন বলে জানান মমিনুল। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তাঁর কোলেই প্রথম উঠেছে এই নবজাতক।
শিশুর নাম রেখেছেন মোহাম্মদ রাইয়ান। তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে আগেই নাম ঠিক করে রেখেছিলেন বলে জানান। মমিনুলের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন কোনো কথা না বললেও হাসপাতালের বেডে শুইয়ে সন্তানের মা রত্না বেগম সবকিছু দেখছিলেন এবং শুনছিলেন। তাঁর কাঙ্ক্ষিত সন্তানকে বরণ করে নেওয়ায় যেন চোখের ভাষায় কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন তিনিও।
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে সন্তান ও মায়ের সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করেন মমিনুল। আমার খামারের সঙ্গী এখন হাসপাতালে। তাকে সুস্থভাবে নিয়ে যেন দ্রুত হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে পারি এটাই এখন চাওয়া।