Samakal:
2025-03-17@05:55:56 GMT

ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে হবে

Published: 17th, March 2025 GMT

ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে হবে

ধর্ষণ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে শিশু সুরক্ষা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা পাঁচটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। এসব সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেছেন, আইনি দিক ও অপরাধের ভয়াবহতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে হবে। ধর্ষণকে শুধু নারী নির্যাতন ও নারী নিপীড়ন বললে এর ভয়াবহতা হালকা হয়ে যায়।

গতকাল রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় শিশু অধিকারবিষয়ক এনজিওদের (বেসরকারি সংস্থা) প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সেভ দ্য চিলড্রেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। আরও বক্তব্য দেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক (প্রভাব, প্রচারাভিযান ও যোগাযোগ) নিশাত সুলতানা, সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক (শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকারবিষয়ক সুশাসন বিভাগ) আবদুল্লা আল মামুন, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের পরিচালক (কর্মসূচি ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সমন্বয়ক তামান্না হক রীতি, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস প্রমুখ। 

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো.

সাজ্জাত আলী সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকে ‘ধর্ষণ’ শব্দের পরিবর্তে ‘নারী নির্যাতন’ বা ‘নারী নিপীড়ন’ ব্যবহার করার আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে শাহীন আনাম বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনার ধর্ষণ শব্দটি সংবাদমাধ্যমে ব্যবহার না করতে বলেছেন। কারণ, তাঁর কাছে শব্দটি ভালো লাগে না। এতে খুবই অবাক হয়েছি।’

নিশাত সুলতানা বলেন, ধর্ষণের ঘটনাকে ধর্ষণই বলতে হবে। এটাকে নমনীয় করে বলার কোনো সুযোগ নেই। আবদুল্লা আল মামুন বলেন, নারী নির্যাতন একটি বড় আমব্রেলা (বিস্তৃত বিষয়)। তার মধ্যে ধর্ষণ একটি অন্যতম জঘন্য অপরাধ। সব অপরাধকে যদি সাধারণীকরণ করা হয়, তাহলে যথাযথ আইন প্রয়োগ সম্ভব হবে না।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক রাখা উচিত। তা না হলে হয়রানিমূলক মামলা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তামান্না হক বলেন, ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত, বিচারপ্রক্রিয়া, সাক্ষী ও ভুক্তভোগীর সুরক্ষা ইত্যাদি যেসব বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে, তা মোকাবিলায় নিয়মিত কাজ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগামকে রাজস্ব বাজেটে নেওয়া; শিশুদের অধিকার, সুরক্ষা ও কল্যাণে পৃথক শিশু অধিদপ্তর স্থাপন ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত ও কার্যকর সমাধানে ‘শিশু সংস্কার কমিশন’ গঠনের দাবি জানানো হয়। 

ডিএমপি কমিশনার বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন: ইফতেখারুজ্জামান
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ডিএমপি কমিশনার ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধের মাধ্যমে বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন। ধর্ষকের সুরক্ষা দেওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। বিষয়টি কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তার এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা উচিত।

রোববার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে টিআইবি আয়োজিত ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন, এখনই!’ শীর্ষক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি। 
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকে, তাদের আচরণে, কথায়-বার্তায়, চর্চায় কিন্তু আমরা নারীবান্ধব অবস্থা দেখতে পাই না। খুবই দুঃখজনক বিষয়। ধর্ষণ যখন ঘটবে অত্যন্ত জোরালোভাবে আরও সেটিকে প্রচার করতে হবে। যাতে এ বিষয় মানুষের নজরে আসে।
মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের সহকারী সমন্বয়ক সাইমুম মৌসুমী। 

কন্যাশিশু ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ। একই সঙ্গে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল সংস্থার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে শিশুদের ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়। 
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনি সহায়তা দেওয়ার কার্যক্রম আরও জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এ লক্ষ্যে প্যানেল আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে সংগঠনটি। গতকাল রাজধানীর তোপখানা রোডে মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভা হয়। এ ছাড়া মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু এক বিবৃতিতে বরগুনায় মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করায় বাবাকে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। 
এদিকে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবিতে গতকাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন হয়েছে।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক এবং সংশ্লিষ্ট অফিস ও প্রতিনিধি)

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ঘটন য় র পর চ ড এমপ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএমপি কমিশনার বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন: ইফতেখারুজ্জামান

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএম‌পি) ক‌মিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধের মাধ্যমে বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি মনে করেন, বিষয়টি কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাঁর (ডিএম‌পি ক‌মিশনার) এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা উচিত, প্রত্যাহার করা উচিত।

‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন, এখনই!’ শীর্ষক মানববন্ধনে ইফতেখারুজ্জামান এ কথা বলেন। আজ রোববার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে টিআইবি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানের ওপর সবচেয়ে বেশি নিশ্চিত করা বা নারীর অধিকার হরণের প্রতিরোধ করার দায়িত্ব, সেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তথা পুলিশ; পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখন বলেন ধর্ষণ শব্দটা ব্যবহার না করার জন্য; গণমাধ্যম—আপনাদেরকে যখন অনুরোধ করে তখন আমাদের অবাক হতে হয়। তাঁদের এই অবস্থানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে হয়। কারণ, এর মাধ্যমে তিনি যেটা করছেন, ডিএমপি কমিশনার বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন। ধর্ষকের সুরক্ষা দেওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। কোনো অবস্থায় এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাঁর এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা উচিত, প্রত্যাহার করা উচিত।’

গতকাল শনিবার এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে ডিএম‌পি ক‌মিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি দুটি শব্দ খুব অপছন্দ করি, এর মধ্যে একটি হলো ধর্ষণ। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা “নারী নির্যাতন” বা “নিপীড়ন” বলবেন। আমাদের আইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন বলা হয়েছে। যে শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে, সেগুলো আমরা না বলি।’

আজকের মানববন্ধনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকে, তাদের আচরণে, কথায়-বার্তায়, চর্চায় কিন্তু আমরা নারীবান্ধব অবস্থা দেখতে পাই না। খুবই দুঃখজনক বিষয়।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন সেখানে চর্চার কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেন

ইফতেখারুজ্জামান। গণমাধ্যমকর্মীদের ডিএমপি কমিশনারের কথা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান ইফতেখারুজ্জামান। ধর্ষণ যখন ঘটবে অত্যন্ত জোরালোভাবে আরও সেটিকে প্রচার করার আহ্বান জানান তিনি। যাতে এ বিষয় মানুষের নজরে আসে।

খুনিকে চোর বলতে পারবেন না উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশকে তো আমি আনসার বলতে পারব না। পুলিশ পুলিশই। পুলিশ যেভাবে কলঙ্কিত করেছে নিজেদের, সে কারণে কী মানুষ বলেছে “পুলিশ” শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না? সেই পুলিশ কীভাবে ধর্ষণ শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না—এ ধরনের মন্তব্য রাখতে পারে। সেটি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।’

এ সময় অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদাসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।

মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের সহকারী সমন্বয়ক সাইমুম মৌসুমী। এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেডিকেল কলেজ বন্ধের প্রতিবাদে অবরোধ
  • শিশুকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করেছেন হিটু শেখ
  • নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধ না করার দাবি চবি শিক্ষার্থীদের
  • বরগুনায় ধর্ষণ মামলার আসামি ও কিশোরীর বাবাকে হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • ঈদ বোনাসসহ সব বকেয়া পরিশোধের দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের মানববন্ধন
  • ডিএমপি কমিশনার বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন: ইফতেখারুজ্জামান
  • চাঁদাবাজির প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ বিক্ষোভ
  • কিশোরগঞ্জে নরসুন্দা নদীকে বাঁচানোর আকুতি
  • বর্তমান প্রশাসনে অনাস্থা, নতুন ব্যবস্থাপনার দাবি
  • মুন্সীগঞ্জের যুবদল নেতা হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতির দাবিতে মানব