ধর্ষণ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে শিশু সুরক্ষা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা পাঁচটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। এসব সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেছেন, আইনি দিক ও অপরাধের ভয়াবহতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে হবে। ধর্ষণকে শুধু নারী নির্যাতন ও নারী নিপীড়ন বললে এর ভয়াবহতা হালকা হয়ে যায়।
গতকাল রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় শিশু অধিকারবিষয়ক এনজিওদের (বেসরকারি সংস্থা) প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সেভ দ্য চিলড্রেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। আরও বক্তব্য দেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক (প্রভাব, প্রচারাভিযান ও যোগাযোগ) নিশাত সুলতানা, সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক (শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকারবিষয়ক সুশাসন বিভাগ) আবদুল্লা আল মামুন, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের পরিচালক (কর্মসূচি ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সমন্বয়ক তামান্না হক রীতি, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস প্রমুখ।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো.
নিশাত সুলতানা বলেন, ধর্ষণের ঘটনাকে ধর্ষণই বলতে হবে। এটাকে নমনীয় করে বলার কোনো সুযোগ নেই। আবদুল্লা আল মামুন বলেন, নারী নির্যাতন একটি বড় আমব্রেলা (বিস্তৃত বিষয়)। তার মধ্যে ধর্ষণ একটি অন্যতম জঘন্য অপরাধ। সব অপরাধকে যদি সাধারণীকরণ করা হয়, তাহলে যথাযথ আইন প্রয়োগ সম্ভব হবে না।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক রাখা উচিত। তা না হলে হয়রানিমূলক মামলা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তামান্না হক বলেন, ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত, বিচারপ্রক্রিয়া, সাক্ষী ও ভুক্তভোগীর সুরক্ষা ইত্যাদি যেসব বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে, তা মোকাবিলায় নিয়মিত কাজ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগামকে রাজস্ব বাজেটে নেওয়া; শিশুদের অধিকার, সুরক্ষা ও কল্যাণে পৃথক শিশু অধিদপ্তর স্থাপন ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত ও কার্যকর সমাধানে ‘শিশু সংস্কার কমিশন’ গঠনের দাবি জানানো হয়।
ডিএমপি কমিশনার বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন: ইফতেখারুজ্জামান
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ডিএমপি কমিশনার ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধের মাধ্যমে বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন। ধর্ষকের সুরক্ষা দেওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। বিষয়টি কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তার এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা উচিত।
রোববার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে টিআইবি আয়োজিত ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন, এখনই!’ শীর্ষক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকে, তাদের আচরণে, কথায়-বার্তায়, চর্চায় কিন্তু আমরা নারীবান্ধব অবস্থা দেখতে পাই না। খুবই দুঃখজনক বিষয়। ধর্ষণ যখন ঘটবে অত্যন্ত জোরালোভাবে আরও সেটিকে প্রচার করতে হবে। যাতে এ বিষয় মানুষের নজরে আসে।
মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের সহকারী সমন্বয়ক সাইমুম মৌসুমী।
কন্যাশিশু ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ। একই সঙ্গে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল সংস্থার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে শিশুদের ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনি সহায়তা দেওয়ার কার্যক্রম আরও জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এ লক্ষ্যে প্যানেল আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে সংগঠনটি। গতকাল রাজধানীর তোপখানা রোডে মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভা হয়। এ ছাড়া মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু এক বিবৃতিতে বরগুনায় মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করায় বাবাকে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবিতে গতকাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন হয়েছে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক এবং সংশ্লিষ্ট অফিস ও প্রতিনিধি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ঘটন য় র পর চ ড এমপ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
মানববন্ধন শেষে আসামির বাড়িতে হামলা-অগ্নিসংযোগ
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আসামি গ্রেপ্তার ও তার বিচার দাবি করে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে আসামির বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বিকেলে উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের সোনালিয়া চকবাজার গ্রামে গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিক্ষুব্ধরা। পরে সন্ধ্যার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
স্থানীয়রা জানান, গত শুক্রবার গিয়াস উদ্দিনের কলা বাগানে তারই চাচা আকবর আলীর ছাগল যাওয়াকে কেন্দ্র করে দুইজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে হামলার শিকার হন আকবর আলী (৬৫)। মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
এই ঘটনার জেরে গত শনিবার গিয়াস উদ্দিনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মির্জাপুর থানায় মামলা হয় এবং ওই রাতে দুইজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক রাশেদুজ্জামান।
তবে সোমবার বিকেলে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। মানববন্ধনে এলাকার ৫ শতাধিক মানুষ অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে উত্তেজিত জনতার একটি অংশ গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে হামলা হামলার পর অগ্নিসংযোগ করে। অগ্নিসংযোগের সময় ওই বাড়িতে নারী ও শিশুরা অবস্থান করছিলেন। তবে তারা নিরাপদে সরে যান বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার সকালে মির্জাপুর থানার ওসি বলেন, পুলিশ-সেনাবাহিনীর যৌথ অবস্থানে পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।