বেগুন চাষে ভাগ্যবদল, এখন নাম তাঁর ‘বেগুন বিপ্লব’
Published: 17th, March 2025 GMT
বিপ্লব শিকদার এখন এলাকায় ‘বেগুন বিপ্লব’ নামেই অধিক পরিচিত। পঞ্চাশোর্ধ্ব বিপ্লবের নামের সঙ্গে ‘বেগুন’ যুক্ত হলো কেন? পাশে তাঁর স্ত্রী সংগীতা রাণী এই প্রশ্ন শুনে হাসলেন। বিপ্লব বিব্রত না হয়ে বরং চওড়া হাসি দিয়ে গর্বের সঙ্গেই বললেন, ‘বেগুন চাষ করে আমার সমৃদ্ধি এসেছে বলেই লোকজন আমাকে এই নামে ডাকেন।’
বঙ্গোপসাগর–তীরের বরগুনার তালতলী উপজেলার পাজরাভাঙ্গা জনপদে বিপ্লবের এই সুখ্যাতির গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামে ঢুকতেই তা টের পাওয়া গেল। শহিদুল ইসলাম নামের এক যুবকের কাছে বিপ্লবের বাড়ি কোনটা জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘বেগুন বিপ্লব? ওই তো, সামনেই!’
একটু সামনে এগোতেই চোখে পড়ল সাজানো গোছানো এক সবুজ খেত। সারি সারি সবুজ বেগুনগাছ আর তাতে ঝুলছে বড় বড় বেগুন। চোখজুড়ানো এই মনোহর দৃশ্য যে কাউকে সতেজ করে। কাছে গিয়ে দেখা গেল, বিপ্লব ও সংগীতা দম্পতি পরম যত্নে গাছগুলোর পরিচর্যা করছেন। গাছ থেকে বেগুন কেটে ঝুড়িতে রাখছেন।
রোদের উত্তাপ থেকে একটু ছায়ার আশ্রয়ে এসে কথা তুলতেই বিপ্লবের মুখ ম্লান হলো। বললেন, ‘জীবনে অনেক কষ্ট করছি, এরপর এখন সাফল্য।’ সেই কষ্ট কেমন? প্রশ্ন শুনেই কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বিপ্লব বলে চললেন সেই কষ্টগাথা।
বিপ্লব শিকদারের বাবা নির্মল চন্দ্র শিকদার খেয়েপরে পরিবার নিয়ে ভালোই ছিলেন। এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে চারজনের সংসার চলছিল কৃষির ওপর। প্রায় ছয় একর জমি ছিল। কিন্তু বিপত্তি হয়, জমিজমা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে একসময় মামলায় জড়ানোর পর। প্রায় চার একর জমি বিক্রি করে মামলা চালাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হন। বিপ্লব তখন মাধ্যমিকের ছাত্র। বৃদ্ধ বাবার পরিবারে নেমে আসে ঘোরতর দুর্দিন। বিপ্লবের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। সংসারের হাল ধরতে তাঁকে আয়ের পথ খুঁজতে হয়। দারিদ্র্যের সঙ্গে অনবরত যুদ্ধ করতে করতে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন বিপ্লব। সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে তালতলী সদরে শুরু করেছিলেন সবজির ব্যবসা। পরে খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়া থেকে সবজি এনে পাইকারি ব্যবসা করেছিলেন কিছুদিন। কিন্তু বাজারের ওঠানামায় সেই ব্যবসা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি আরও হতাশ হন। দারিদ্র্য যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরপর বিয়ে করে সংসার হয়। সবকিছু সামলাতে গিয়ে হতাশায় নুয়ে পড়ে জীবন।
বিপ্লব শিকদার বলেন, এই যখন অবস্থা, তখন একদিন তাঁর কানে এল এক বিশেষ জাতের বেগুনের গল্প। রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষদের চাষ করা এই বিশেষ জাতের বেগুন নাকি আকারে বড়, স্বাদে অনন্য, আর চাহিদাও ব্যাপক! এই গল্প শুনে কৌতূহল জাগল বিপ্লবের। তিনি খোঁজ নিতে শুরু করলেন এবং জানতে পারলেন, ঠিকঠাক যত্ন নিলে এই বেগুন হতে পারে তাঁর ভাগ্যবদলের চাবিকাঠি। ব্যস, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন—এই রাখাইন বেগুন আবাদ করে টিকে থাকার শেষ চেষ্টাটা করবেন।
রাখাইন বেগুন বা ‘বারি বেগুন-১২’ জাতের একেকটি বেগুনের সর্বোচ্চ ওজন হয় দেড় কেজি পর্যন্ত.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্নীতি মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্রের জামিন নামঞ্জুর
দুর্নীতির মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ রোববার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালতে সাধন চন্দ্র মজুমদারের পক্ষে অ্যাডভোকেট ফারজানা ইয়াসমিন রাখি জামিন চেয়ে আবেদন করেন। দুদকের পক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এর আগে গত বছর ৩ অক্টোবর রাতে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে সাধন চন্দ্র মজুমদারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। এরপর তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক করা মামলায় রিমান্ডেও নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
এরপর গত ১৯ ডিসেম্বর সাধন চন্দ্র মজুমদারের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৬৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রাখার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে এ মামলা করেন। গত ২৯ জানুয়ারি তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।