থানার লুট হওয়া অস্ত্র বিক্রি, হেফাজতে কনস্টেবল
Published: 17th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র বিক্রির অভিযোগে পুলিশের এক কনস্টেবলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। গত শনিবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চাঁদপুর থেকে তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।
রোববার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়টি স্বীকার করা হয়। হেফাজতে নেওয়া পুলিশ কনস্টেবল হলেন মো.
এর আগে তিনি কক্সবাজার র্যাবে কর্মরত ছিলেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিন কোতোয়ালী থানা থেকে অস্ত্রটি লুট হয়। গত ৩ মার্চ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে জামায়াতের দুই কর্মী হত্যার পর ঘটনাস্থল থেকে পিস্তলটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, অস্ত্রটি কোতোয়ালী থানা থেকে লুট হওয়া। তবে অস্ত্রটি রিয়াদের হাতে কিভাবে গেল। তার কাছ থেকে জামায়াত কর্মীদের হাতে কিভাবে গেছে, তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
গত ৩ মার্চ সোমবার রাতে সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় মাইকে ডাকাত ঘোষণা দিয়ে গণপিটুনিতে দুই জামায়াত কর্মীকে হত্যা করা হয়। তারা হলেন- নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেক। ঘটনাস্থল থেকে মেইড ইন ব্রাজিল লেখা নাইন এমএম একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
গত ৬ মার্চ চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, ‘ঘটনার দিন নেজাম সেখানে গিয়ে অস্ত্র ওপেন করেছিল। হত্যাকাণ্ডের পর সেখান থেকে যে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছিল, সেটি সিএমপি’র কোতোয়ালী থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশের অনেক অস্ত্র খোয়া গেছে। এ অস্ত্রগুলো কীভাবে তাদের কাছে গেল, সেগুলো আমরা তদন্ত করছি। এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
এরপর সাতকানিয়ার কাঞ্চনার বাসিন্দা পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদের একটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে। গণপিটুনিতে নিহত দুইজনের বাড়িও কাঞ্চনা। তাতে বলতে শোনা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম, অ্যাঙ্কেল। এটি নিবেন। এটিতে ৩০ পিস গুলি দেওয়া যাবে। পার পিস ৩ হাজার টাকা করে দিতে হবে।’
আরেকটি রেকর্ডে বলেন, ‘আপনাকে যেটি নিতে বলছি সেটি, আর আমি যেটি ব্যবহার করছি; সেইম। এটি আমি র্যাবে যখন গোয়েন্দা শাখায় ছিলাম তখন তুলেছি। আপনার কাছে যে অস্ত্র দিচ্ছি, সেটি আর এটি সেইম। এরকম অস্ত্র সব বাহিনীর কাছে আছে, সরকারি অস্ত্র। এই অস্ত্র সরস, বুঝছেন, আপনি না হলে আপনার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করতে পারেন। এই অস্ত্রের গুলি সহজে পাওয়া যায়।’
অস্ত্রটির জন্য সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে জানিয়ে অডিওতে রিয়াদ আরও বলেন, ‘এই অস্ত্রের গুলি প্রশাসনের সবার কাছে পাবেন। আমিও দিতে পারব। আমাদের বার্ষিক একটি ফায়ারিং হয়, ওইসময় ফায়ার না করে গুলি আপনার জন্য রেখে দেব। এছাড়া আমার অনেক লিংক আছে। ওদের মাধ্যমেও আপনাকে গুলির ব্যবস্থা করে দিতে পারব। আমি বেশি অনুরোধ করছি, কারণ আমার এই মুহূর্তে টাকার দরকার। ১০ হাজার টাকা আপনি আমাকে অতিরিক্ত দেবেন। সাড়ে ৫ লাখ টাকা বরাবর দিতে হবে। ২ লাখ ১০, ২ লাখ ২০ যেসব অস্ত্র ওই সব আমার কাছে নেই। সাড়ে ৫ লাখ টাকা তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।’
তবে অপরপ্রান্তে কার কাছে অডিও রেকর্ডগুলো পাঠিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তাকে হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে রোববার রাতে সিএমপির উপ কমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সোলতানা সমকালকে বলেন, ‘অস্ত্র বিক্রির একটি অভিযোগের ঘটনায় কনস্টেবল রিয়াদকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘তিনটে ছেলে-মেয়ে এতিম হয়ে গেছে, স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই’
রাজকী বেগমের চোখের সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। তাঁর ছেলেমেয়েদেরও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আহাজারি করতে করতে রাজকী বেগম বলছিলেন, ‘আমার তিনটে ছেলে-মেয়ে এতিম হয়ে গেছে, আমার স্বামী হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই।’
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শিলিমপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত শনিবার সকালে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজকী বেগমের স্বামী হাসিম মোল্যা (৩৮)। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রোববার বিকেলে গ্রামের বাড়িতে হাসিম মোল্যার মরদেহ এসে পৌঁছায়। আসরের নামাজ পর জানাজা শেষে স্থানীয় বাগমারা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালিয়ার হামিদপুর ইউনিয়নের শিলিমপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শনিবার সকালে ঠান্ডু মোল্যা ও জনি মোল্যা পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ১৩ জন ও ২ পুলিশ সদস্য আহত হন৷ স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে গুরুতর আহত জনি মোল্যা ও তাঁর ভাই হাসিম মোল্যাকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসিম মোল্যা মারা যান। ওই ঘটনায় সিরাজ মোল্যা ও আজিজার শেখ নামের দুজনকে ১টি একনলা বন্দুক, ২০টি গুলিসহ আটক করা হয়।
গতকাল বিকেলে শিলিমপুরে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার পরিবেশ থমথমে। নিহত ব্যক্তির প্রতিপক্ষ ঠান্ডু মোল্যা পক্ষের কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানো হয়েছে। মরদেহ আসার খবরে আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় লোকজন ভিড় করেছেন হাসিম মোল্যাদের বাড়িতে। অঝোরে কাঁদছেন বৃদ্ধ মা জাহিদা বেগম। তাঁর পাশেই কাঁদছেন হাসিম মোল্যার স্ত্রী রাজকী বেগম।
রাজকী বেগমের অভিযোগ, বাড়ির পাশে তাঁর সামনেই প্রতিপক্ষের লোকজন স্বামী ও সন্তানকে কুপিয়েছিলেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বামী মারা গেছেন। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজকী বেগম বলেন, ‘আমার সামনেই ওরা (প্রতিপক্ষ) স্বামীর মাথায় কোপ দেয়, হাত কেটে ফেলে। আমি কইছি, আর মারিস না, আমার কথা শুনল না। পাশেই আমার সন্তানরেও ওরা কোপাইয়ে ফেলাই থুইছে। ওই সময় আমার কেয়ামত হয়ে যাচ্ছে। আমি স্বামীর কাছে আসব, নাকি সন্তানের কাছে যাব। আমার ছেলের এক পায়ে তিনটে কোপ দেছে। আমি এসবের বিচার চাই।’
নিহত হাসিম মোল্যার বোন নাজনীন আক্তার বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আমার এক ভাইয়ের হাত কেটে দেছে, ভাতিজাকে কুপিয়েছে। আমার আরেক ভাইকে খুন করিছে যারা, তাদের ফাঁসি চাই।’
এদিকে হাসিম মোল্যার মৃত্যুর পর প্রতিপক্ষ ঠান্ডু মোল্যা পক্ষের লোকজন এলাকায় না থাকায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
গতকাল রাত ১০টার দিকে কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক। নিহত হাসিমের মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবার এখনো কোনো মামলা করেনি। তবে পুলিশকে মারধর এবং অস্ত্র, গুলিসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে।