দিনাজপুরে ১১ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ
Published: 17th, March 2025 GMT
দিনাজপুরে ১১ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত পরিবারসহ পালিয়ে গেছেন। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতের বিচার দাবি করেছেন পরিবার ও স্থানীয়রা। রোববার দুপুরে ঘটনার পর বিরল ও কোতয়ালী উভয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন।
জানা যায়, রোববার দুপুরের দিকে দিনাজপুরের সদর উপজেলার মাঝাডাঙ্গা নামক এলাকার ৩ শিশুকন্যা বাড়ীর পার্শ্ববর্তী ক্ষেতের মাঝখানে যায়। এ সময় একই এলাকার এক ব্যক্তি ১১ বছর বয়সী এক শিশুকন্যাকে পার্শ্ববর্তী নদীর স্লুইচগেটের নিচে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ওই শিশুকন্যার সঙ্গে যাওয়া দুই খেলার সাথী চিৎকার শুরু করলে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত। তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে এলাকাবাসীর জটলা সৃষ্টি হয়। পরে সেটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য ভিকটিমের পরিবারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু এরইমধ্যে কোতয়ালী থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এ সময় ওই অভিযুক্তের তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন স্থানীয়রা।
শিশুটির বাবা জানান, কৃষিকাজ থেকে এসে তার মেয়ের শরীরে হাত দেওয়ার কথা শুনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মারতে যান। সম্পর্কে খালু শ্বশুর হওয়ায় স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমাকে বলে। তবে এখন আমি চাই, আইন যেভাবে বলে সেভাবেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।
শিশুটির মা জানান, আমার মেয়ের সঙ্গে যাওয়া দুই জন শিশু আমাকে জানিয়েছে যে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে দাদা হওয়ায় ব্রিজের পাড়ে যেতে বলে। মেয়েটা যাওয়ার পর তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেয়। ওই সময় ওই দুই মেয়ে চিৎকার শুরু করে।
সদর উপজেলার ১নং চেহেলগাজী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) পাভেল ইমরান বলেন, এমন সালিশের কোনো বিধান নেই। আমি পুরো ঘটনা এখনও জানি না, দুই পক্ষের কাছেই শুনছি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করছি।
ঘটনার পর ওই এলাকায় যান কোতয়ালী ও বিরল থানা পুলিশ। তবে যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেটি বিরল থানাধীন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানাতে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান জানান, মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে ধারণা করা হচ্ছে শ্লীলতাহানি। ঘটনাস্থল বিরল থানাধীন হওয়ায় তাদের বিরল থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস ছবুর জানান, এই ঘটনায় রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বিরল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে ভিকটিমের পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বন্ধ ব্যাংক থেকে যেভাবে শক্তিশালী ইস্টার্ন ব্যাংক
শুরুতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ব্যাংক চালাবে ব্যাংকাররা, আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না। ব্যাংক মুনাফায় না যাওয়া পর্যন্ত আমরা প্রথম পাঁচ বছর লভ্যাংশ, সভার সম্মানীসহ কোনো সুবিধা নিইনি। এর ফলে ইস্টার্ন ব্যাংক এখন বাজারের সেরা– শওকত আলী চৌধুরী, চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন ব্যাংক
ব্যাংকটিকে আজকের এই পর্যায়ে পৌঁছাতে কী কৌশল কাজে দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইস্টার্ন ব্যাংক শুরুতেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহক হিসেবে বেছে নেয়। এ জন্য শুরুতে এসএমই ও খুচরা ঋণ ছিল না। শুরু থেকে আমরা ব্যক্তি নয়, প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করি। এ জন্য আমাদের ব্যাংকে সবকিছু লিখিত আছে। ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদের ভূমিকা কী হবে, তা পরিষ্কার করা আছে। এসব কারণে ইস্টার্ন ব্যাংক আজ এই পর্যায়ে।’
আলী রেজা ইফতেখার আরও বলেন, ‘আমাদের গ্রাহক কে হবেন, এ ব্যাপারে আমরা খুব সচেতন। সব নিয়ম লিখিত। এ জন্য আমার কাছে কোনো ফাইল পড়ে থাকে না। আমার সিদ্ধান্তের জন্য কাউকে অপেক্ষায়ও থাকতে হয় না। আমি কখনো কাউকে ঋণ দেওয়ার জন্য কোনো নির্দেশনা বা পরামর্শ দিইনি। ঋণ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ আছে। তারাই এটা দেখে।’
বিসিসিআই থেকে ইস্টার্ন ব্যাংক
পাকিস্তানি ব্যাংকার আগা হাসান আবেদি ১৯৭২ সালে ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল (বিসিসিআই) প্রতিষ্ঠা করেন। বিসিসিআইয়ের ২৫ শতাংশ মূলধন ছিল ব্যাংক অব আমেরিকার এবং ৭৫ শতাংশ মূলধন ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির শাসক শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের। ব্যাংকটি লুক্সেমবার্গে নিবন্ধিত ছিল এবং তার প্রধান কার্যালয় ছিল পাকিস্তানের করাচি ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। ব্যাংকটি চালুর এক দশকের মধ্যেই ৭৮টি দেশে ৪ হাজারের বেশি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে। এর মধ্যে বাংলাদেশও ছিল। ব্যাপকভাবে কার্যক্রম সম্প্রসারণের কিছুদিন যেতে না যেতেই ব্যাংকটিতে অর্থ পাচার এবং অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এ কারণে বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংকটির সম্পদ জব্দ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সালে এসে ব্যাংকটি বন্ধ হয়ে যায়।
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বড় তিনটি বিদেশি ব্যাংকের একটি ছিল বিসিসিআই। অন্য দুটি ছিল এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ও আমেরিকান এক্সপ্রেস। বিসিসিআই ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে আমানতকারীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি বিদেশি লেনদেন বাধাগ্রস্ত হবে, এ জন্য ব্যাংকটির বিষয়ে তখনকার সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯১ সালের ৬ জুলাই রাতে বিসিসিআইয়ের কার্যক্রম সীমিত করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ৮ জুলাই তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ব্যাংকটির কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত জাতীয় সংসদকে অবহিত করেন। জাতীয় সংসদে ইস্টার্ন ব্যাংক পুনর্গঠন স্কিম পাস করা হয়। তখন ব্যাংকটির আমানত ছিল ৫৫০ কোটি টাকা। এসব আমানতকারীর একটি অংশকে আমানতের বিপরীতে ব্যাংকের শেয়ার নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। যদি তাঁরা শেয়ার নিতে আগ্রহী না হন, তবে আমানত ফেরত পেতে ৫-১০ বছর লাগবে বলে জানানো হয়। এই প্রস্তাব পাওয়ার পর আমানতকারীদের একটি অংশ ব্যাংকের শেয়ার নিতে আগ্রহী হন। তখন ১০০ টাকা জমার বিপরীতে ১০০ টাকার শেয়ার দেওয়া হয়। যাঁরা ওই সময় শেয়ার নিয়েছিলেন, তাঁরাই এখন ব্যাংকটির বড় শেয়ারধারী ও পরিচালক। বড় আমানতকারীদের পাশাপাশি সরকারও ব্যাংকটির ৬০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।
আলী রেজা ইফতেখার