১. একজন রোজাদার ইফতার ও সাহ্‌রিতে কী খাবেন, তা নির্ভর করবে তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের ওপর। তাই সঠিক খাবার তালিকা অনুসরণ করে রোজা রাখুন। কখনোই শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখবেন না। অতিভোজন থেকেও বিরত থাকুন। খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খান, যা আপনার হজমে সহায়ক হবে।

২. ইফতার ও সাহ্‌রিতে সাধারণ ৮–১০ গ্লাস পানি খাওয়া ভালো। তবে আপনি নিজেই বুঝবেন ঠিক কত গ্লাস পানি আপনার প্রয়োজন। গ্লাস গুনে পানি খেতে অসুবিধা হলে সমপরিমাণ পানি বোতলে ভরে রাখুন এবং ইফতার থেকে সাহ্‌রির সময়ের মধ্যে তার পুরোটা শেষ করুন। গ্রীষ্মকালীন রমজানে পরিমাণমতো বিশুদ্ধ পানি খাওয়া জরুরি। এশা ও তারাবির নামাজের পর অভ্যাস অনুযায়ী পরিমাণমতো ভাত, মাছ অথবা মুরগির মাংস, ডাল ও সবজি খান।

৩.

দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকার কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে এবং পানিশূন্যতার কারণে শরীরে দেখা দেয় নানান জটিলতা। অনেকে পানির পরিবর্তে লেমন অথবা রোজ ওয়াটার, শরবত, ভিটামিন ওয়াটারসহ নানান ধরনের প্রক্রিয়াজাত পানীয় খান। এ ব্যাপারে পুষ্টিবিদদের অভিমত, রোজাদারদের শুধু বিশুদ্ধ পানি খাওয়াই ভালো। কার্বোনেটেড ও সুগার ড্রিংক, চা ও কফি খেলে শরীর থেকে অধিক পানি বের হয়ে যায়। অ্যাসিডিটির সমস্যা মাথাচাড়া দেয়। রোজাদারদের বরং প্রচুর সবুজ শাকসবজি, ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুনরোজায় গ্যাসের সমস্যা এড়াতে খাবারের বেলায় যেসব নিয়ম মানবেন০৬ মার্চ ২০২৫

৪. সারা দিন অভুক্ত থাকার ফলে শরীরের শক্তির জন্য প্রয়োজনীয় এবং দ্রুত শক্তি পাওয়া যায়, এমন খাবারের উদাহরণ হলো গ্লুকোজ। এ ছাড়া তৎক্ষণাৎ শক্তির জোগান দিতে সক্ষম খাবারের মধ্যে আছে আঙুর, খেজুর, ফলের রস। এসব যেমন শরীরে সহজে শক্তি আহরণে কাজে লাগে, তেমনি শরীরের পানি ও খনিজের প্রয়োজনও মেটায়।

৫. ইফতারে মুখরোচক খাবারগুলো স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে কি না, ভেজাল তেল, বেসন ও কৃত্রিম রং মেশানো হয়েছে কি না, সেদিকে নজর দিন। কোনো কিছু ভাজার জন্য একবারের বেশি তেল ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, একই তেল বারবার আগুনে ফোটালে কয়েক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি হয়, যেমন পলি নিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন। এই রাসায়নিকের মধ্যে বেনজা পাইরিন নামক ক্যানসার তৈরিতে সক্ষম এমন পদার্থের মাত্রা বেশি থাকে। ইফতারে বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ এবং সহজে ও তাড়াতাড়ি হজম হয়, এমন খাবার খান।

আরও পড়ুনসেবার কেন ২৮ রমজানে ঈদ হয়েছিল আরবে?১০ এপ্রিল ২০২৪

৬. সাহ্‌রির খাবার সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া জরুরি। অধিক তেল, অধিক ঝাল, অধিক চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া একদম উচিত নয়। ভাতের সঙ্গে মিশ্র সবজি, মাছ অথবা মাংস খান। অনেকেই মনে করেন, যেহেতু সারা দিন না খেয়ে থাকতে হবে, তাই সাহ্‌রির সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত বেশি খাবার খেতে হবে। তা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, চার–পাঁচ ঘণ্টা পার হলেই খাদ্যগুলো পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে গিয়ে হজম হয়ে যায়। তাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি না খাওয়াই ভালো বরং মাত্রাতিরিক্ত খেলে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।

৭. ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাদ্য বুক জ্বালাপোড়া এবং বদহজমের সমস্যা তৈরি করে। তাই এসব বর্জন করুন। রান্নার সময় খাবারে ডালডার পরিবর্তে যতটা সম্ভব কম পরিমাণে সয়াবিন তেল ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত লবণ ও লবণাক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। কারণ, এসব রোজার সময় পানির পিপাসা বাড়ায়।

৮. ঘুমানোর আগে ও সাহ্‌রির পরে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে ভুলবেন না। রোজা রাখা অবস্থায় সকালে ব্যায়াম না করে ইফতারের পর ব্যায়াম করা ভালো। খাওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুতে ভুলবেন না। দিনে সুযোগ থাকলে ঠান্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন। দৈনিক কাজকর্ম এমনভাবে ঠিক করুন, যাতে রাতের বেলা বেশ ভালোভাবে ঘুমানো যায়।

আরও পড়ুনদই-চিড়া কেন সেরা ইফতারি১০ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইফত র র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

তুচ্ছ ঘটনার জেরে এনসিপি–বিএনপির সংঘর্ষ, ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

রাজধানীর রূপনগরে তুচ্ছ ঘটনার জেরে সংঘর্ষে জড়িয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সোমবার রাতের এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে ২১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ৫০–৬০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকাম্মেল হক সমকালকে বলেন, মিরপুরের বিইউবিটির এক ছাত্রীর সঙ্গে উত্তরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অনিকের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তরুণী তার এক সহপাঠী আশিকের সহায়তা চান। এরপর সোমবার রাত ৮টার দিকে তরুণী রূপনগর আবাসিক এলাকার ১২ নম্বর সড়কের ঝিলপাড় এলাকায় তার প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে যান। ওই সময় আশিক সেখানে উপস্থিত হয়ে অনিককে গালমন্দ করেন। এ নিয়ে দুজন বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়ান। 

ওসি আরও বলেন, আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে মারধরের কারণ জানতে চাইলে তাদের সঙ্গেও বিতণ্ডায় জড়ান আশিক। একপর্যায়ে রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক টুটুল মিয়াসহ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হন। অন্যদিকে খবর পেয়ে আশিকের পক্ষের লোকজনও সেখানে যান। এ সময় ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে করা মামলার আসামিরা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।

এদিকে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে শেখ মাহিন আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। 

এজাহারে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কর্মী অনিককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য থানায় সংবাদ দেয়। ওই সময় টুটুল মিয়াসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৫০–৬০ জন এসে ছাত্রলীগ কর্মীকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে টুটুলসহ তার লোকজনের কথা কাটাকাটি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আমি সেখানে উপস্থিত হই। তখন টুটুল আমাকে দেখে বলেন, এটাই সেই মাহিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এরপর তারা লাঠিসোঁটা, ধারালো চাকু, রাম দা, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প নিয়ে আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে আমাকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করে। আমাকে রক্ষার জন্য অন্যরা এগিয়ে গেলে তাদেরও মারধর ও ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মারধর ও ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার পর দুই পক্ষই মিছিল নিয়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে থানার সামনে জড়ো হয়। এ নিয়ে দীর্ঘ সময় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ