নান্দাইল চৌরাস্তা-তাড়াইল আঞ্চলিক সড়কের পাশ থেকে ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়ায় সড়কটি হুমকির মুখে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মাটি কাটা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরদারি চোখে পড়ছে না। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এভাবে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব মহাসড়কের নান্দাইল উপজেলার চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি সড়ক কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা সদরে চলে গেছে। ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি দিয়ে কেন্দুয়া, তাড়াইলসহ কিশোরগঞ্জের ভাটিতে থাকা বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ চলাচল করে। সম্প্রতি সেতু-কালভার্টগুলো প্রশস্ত করে সড়কটির আধুনিকায়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নান্দাইল উপজেলার যুগের হাওর থেকে শিমুলতলা বাজার পর্যন্ত সড়কের দক্ষিণ পাশ থেকে ১৫ থেকে ২০ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে অসাধু চক্র। কাছাকাছি এ ধরনের গর্তের কারণে সড়কটির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা ছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে যানবাহন ওইসব গর্তে পড়ে বড় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা স্থানীয়দের।
রোববার যুগের হাওর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সড়কটির পাশ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি গভীর গর্ত হয়েছে। দেখেই বোঝা যায়, এ ধরনের গভীর গর্ত শুধু মাটি বিক্রির উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে, মাছ চাষের জন্য নয়। গর্তের গভীরতার পরিমাণ যাতে না বোঝা যায়, সে জন্য পানিভর্তি করে রাখা হয়েছে। একটু সামনে এগিয়ে সম্প্রতি মাটি কেটে নেওয়া আরও কয়েকটি গভীর গর্ত দেখা যায়। পাশের একটি ডোবায় ভেকু (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে সেই মাটি একের পর এক ট্রাক্টরে ভর্তি করতে দেখা যায়। মাটিবোঝাই ট্রাক্টরগুলো আশপাশের কয়েকটি ইটভাটায় পৌঁছে দিচ্ছে। 
ভেকুর চালক শহীদ মিয়া জানান, তিনি চুক্তিতে মাটি কেটে দিচ্ছেন। ঠিকাদার জাবেদ মিয়া তাঁকে এখানে এনেছেন। ট্রাক্টর চালক রইচ উদ্দিন বলেন, মাটি পৌঁছে দিয়ে দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন ৭০০ টাকা।
ঠিকাদার জাবেদ মিয়ার ভাষ্য, জমির মালিকদের কাছ থেকে প্রতি হাজার মাটি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে কিনে ইটভাটায় পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। ভাটা মালিকদের কাছে প্রতি হাজার মাটি বিক্রি করছেন ৬-৭ হাজার টাকা করে। ইতোমধ্যে তিনি মঞ্জিল মিয়া, আবুল কাসেম, রাসেল মিয়ার জমির মাটি কেটে নিয়েছেন বলে জানান। 
সড়কের পাশে গভীর গর্ত করার কারণে সড়কের ক্ষতি হবে কিনা জানতে চাইলে জাবেদ বলেন, জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করছেন, তাই তিনি নিচ্ছেন।
জমির মালিক মঞ্জিল মিয়া জানান, তাঁর জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে ঠিকই; কিন্তু এখনও টাকা দেননি ঠিকাদার। অন্যদের যে দামে টাকা দিয়েছেন, তাকেও সে দামেই টাকা দেবেন। সড়কের স্থায়িত্ব ও দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বলার পর তিনি জানান, সবাই দিয়েছে; তাই তিনিও দিয়েছেন। জমির মালিক আবুল কাসেমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে মাছ চাষের জন্য মাটি বিক্রির কথা স্বীকার করেন। সড়কের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আলমগীর কবির জানান, তিনি সশরীরে গিয়ে তাদের বাধা দিয়ে এসেছেন। কিন্তু জড়িতরা তা মানছেন না বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অভিযোগটি সত্য নয়।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মো.

ফয়সাল বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থলে আমাদের লোকজন যাবে। যদি কেউ এমন করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিতেও বলে দিয়েছি। এ ছাড়া তো আর আমাদের কিছু করার নেই।’ 
নান্দাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়েজুর রহমান জানান, এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বিষয়টি দেখার জন্য বলে দিয়েছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক ক শ রগঞ জ ইটভ ট য় সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

সড়কের মাঝে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই কাজ সমাপ্ত

কুমিল্লার বরুড়ায় একটি ব্যস্ততম সড়কের মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই কাজ শেষ করে বিল তুলে নিয়েছে মেসার্স এসআই এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে সড়কে চলাচলকারী লোকজনের ভোগান্তি বেড়েছে। রাতের বেলায় প্রায়ই ঘটেছে দুর্ঘটনা।
বরুড়া উপজেলার ভাউকসার ইউনিয়নের পরানপুর-সমেশপুর সড়কের পরানপুর জামে মসজিদ সংলগ্ন অংশে বৈদ্যুতিক খুঁটিটির অবস্থান। গ্রামীণ সড়কটির দেড় কিলোমিটার পাকাকরণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বরাদ্দ দিয়েছিল দেড় কোটি টাকা।
স্থানীয়রা জানান, বরুড়া উপজেলার সমেশপুর গ্রাম হয়ে পরানপুর বাজারে যান আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। এ ছাড়া ওই সড়ক দিয়ে দুটি মাদ্রাসার কয়েকশ শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্য সড়কটি পাকাকরণের দাবি জানানো হয় স্থানীয়দের পক্ষ থেকে। নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করা হলে সড়কটির কাজ পায় মেসার্স এসআই এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি সড়কের পরানপুর বাজার সংলগ্ন অংশে মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই কাজ সম্পন্ন করেন ঠিকাদার।
স্থানীয় বাসিন্দা তফাজ্জল হোসেন জানান, এ সড়ক দিয়ে সন্ধ্যার পর দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এর মধ্যে একাধিক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাও ঘটেছে। সড়ক থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি দ্রুত সরিয়ে নিলে শঙ্কামুক্ত হবে মানুষ। কিন্তু বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোনো সমাধান মিলছে না।
ইজিবাইকচালক রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন আমাদের বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করতে হয়। সড়কের ওপর বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকার কারণে দিনে গাড়ি চালানো গেলেও রাতে তা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। খুঁটিতে ধাক্কা লেগে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।’
এদিকে ঠিকাদার মনির হোসেন সুমন পলাতক। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নিকটাত্মীয় হওয়ায় বর্তমানে গাঢাকা দিয়ে আছেন। তাঁর মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বরুড়া উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেনের ভাষ্য, বিষয়টি জানতে পেরেছেন তারা। খুঁটিটি সরাতে বিদ্যুৎ অফিসকে চিঠি দেওয়া হবে। ঠিকাদার চেষ্টা করেছিলেন খুঁটিটি বাদ রেখে এক পাশ বাড়িয়ে সড়কের কাজটি করতে। কিন্তু জমির মালিকের বাধার কারণে সেটি করা সম্ভব হয়নি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পয়ালগাছা সাব জোনাল অফিসের এজিএম (ওএন্ডএম) জাহিদুল হাসান বলেন, সড়কের মধ্যে বিদ্যুতের খুঁটি থাকার বিষয়টি জানা নেই। তবে খুঁটি থেকে থাকলে এলজিইডির চিঠি পেলে সেটি সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সড়কের মাঝখান থেকে সরলো বিদ্যুতের খুঁটি
  • গাজীপুরে ট্রাক ও অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ৩
  • সড়কের মাঝে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই কাজ সমাপ্ত