এক যুগ ধরে অচল পড়ে আছে চুনারুঘাটের করাঙ্গী নদীর বিশাল রাবারড্যামটি। কালো টায়ার আর টিউবের বিশাল আকৃতির এই ড্যামটিকে আক্ষেপের সুরে মরা তিমি বলেন স্থানীয় অনেকেই। প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন দেখানো ওই রাবারড্যামটি নিজেই চুপসে গেছে আরও এক যুগে আগে।
করাঙ্গী নদী-তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষকদের সেচ সুবিধা দিতে উপজেলার রানীগাঁও ইউনিয়নের করাঙ্গী নদীতে ২০১১ সালে নির্মাণ করা হয় রাবারড্যাম। সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে করা এই প্রকল্প বিকল হয়ে পড়ে মাত্র দুই বছরের মাথায়। এর পর থেকে এভাবেই পড়ে আছে ২৫ মিটার দীর্ঘ এই চুপসে যাওয়া রাবারড্যামটি।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, তাদের জন্য খুবই ভালো একটি উদ্যোগ ছিল এই ড্যাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত। তবে নষ্ট হওয়ার পর সেটি আর কেন সংস্কার করা হয়নি, তা তাদের জানা নেই। ৩ কোটি টাকার এই ড্যাম সক্রিয় করার ক্ষেত্রে কোনো তৎপরতাও নজরে আসেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এ ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল, শুষ্ক মৌসুমে সহস্রাধিক কৃষকের সেচকাজে সুবিধা নিশ্চিত করা। স্থানীয় কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, অনেক দিন থেকে এ রাবারড্যাম নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বোরো চাষের জন্য পানি ধরে রাখার ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা দিতো ড্যামটি। অথচ সেটিকে ঠিক করা হলো না।
বোরোচাষিরা জানান, রাবারড্যাম নির্মাণের পর থেকে টানা দুই বছর তারা কৃষিজমিতে সেচ সংকটে পড়েননি। সেটি নষ্ট হওয়ার পর ভোগান্তি বেড়েছি। বোরো মৌসুমে পানির সংকট থাকায় এখানকার সব জমি চাষাবাদের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কয়েকজন কৃষক ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেচ পাম্প বসিয়ে স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ করেছেন। এ সময় রাবারড্যামের বিষয়ে স্থায়ী সমাধান চান তারা।
কৃষক মাসুম মিয়া বলেন, জ্বালানির দাম বাড়ায় পাম্পের মাধ্যমে সেচ দিয়ে পোষাতে পারেন না। রাবারড্যামটি চালু থাকাকালে তারা সহজেই পানি পেতেন। এক যুগ ধরে ভোগান্তিতে আছেন এখানকার কৃষক। অথচ ড্যামটি সংস্কার করে সক্রিয় করা হলো না।
সূত্র জানায়, চুনারুঘাট উপজেলায় পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ বাড়াতে ডিপিপি প্রকল্পের আওতায় করা একমাত্র র‍্যাবারড্যামটি স্থাপনের পর আশপাশের প্রায় ৫৫০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসে। ড্যামের মাধ্যমে আটকানো ১০-১৫ ফুট পানি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমেও আবাদ শুরু হয় রানীগাঁও, পাচারগাঁও, বিশ্রাবণ, আতিকপুর, পারকুল, রাজাকোনা,পাঁচগাতিয়া, আঠালিয়া, শাহাপুর, মিরাশি, হাজীপুর, খাইয়ারাত, ভাগোলাসহ ১০ থেকে ১২টি গ্রামের বিস্তীর্ণ জমিতে। তবে উদ্বোধনের দুই বছর পরই ড্যামটি অকেজো হয়ে যায়।
কৃষকদের দাবি, শুষ্ক মৌসুমে রাবারড্যামটি ফোলানো হয় না। তাই করাঙ্গী নদীতে পানি আটকানো যায় না। এ অবস্থায় আশপাশের কৃষক বেকায়দায় পড়ে বিএডিসির এলএলপি ও বাড়িড পাইপ ও সেচ স্থাপন করে স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ করে আসছেন। এতে কমে গেছে ওই এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে চাষের জমির পরিমাণ। শুষ্ক মৌসুমে প্রতিবছর অনাবাদি পড়ে থাকে প্রায় ৪২০ হেক্টর ফসলি জমি।
রানীগাঁও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিমাংশু দেবনাথ  জানান, বোরো মৌসুমে এটি ফোলানো হলে প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা 
যাবে। বছরের পর বছর এটি এভাবে ফেলে রাখায় অনেক কৃষক পানির অভাবে জমি আবাদ থেকে বিরত রয়েছেন।
রাবারড্যামটির তত্ত্বাবধায়ক বাচ্চু মিয়া জানান, রাবারড্যামটি সচল নেই। ওপরের কভার ফেটে গেছে এবং ভেতরের টায়ার ঠিক নেই। সবকিছুই অকেজো। এ জন্য রাবার ফোলানো হয় না। করাঙ্গী নদীর রাবারের বাঁধ হলে রানীগাঁও এলাকার পানি স্থির থাকবে এবং কৃষকের চাষাবাদে আগ্রহ বাড়বে।
কৃষক আব্দুল কুদ্দুছ জানান, রাবারড্যামটি নির্মাণের পর নামমাত্র খরচে জমি চাষে পানি পাওয়া গেছে। এখন সেচের পানির জন্য ২ হাজার টাকা খরচ হয়। পানির চাহিদা পূরণ না হওয়ায় বহু কৃষক জমি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
বোরো ধানের পাশাপাশি মরিচ, বেগুন, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজির উৎপাদন কমে গেছে এ এলাকায়। এর আগে ড্যামের সঞ্চিত পানিতে মাছ চাষ করেও কৃষক বেশ লাভবান হয়েছেন।
চুনারুঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম জানান, করাঙ্গী নদীর পানির ওপর নির্ভর রানীগাঁও ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক। রাবারড্যামটি সচল হলে উপজেলার ওই এলাকার কয়েক হাজার কৃষক সেচ সুবিধার আওতায় আসবেন। আগামী বোরো মৌসুমে রাবারড্যামটিতে পানি ধরে রাখতে পারলে রবি মৌসুমের অনাবাদি পতিত প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরোসহ অন্যান্য রবি ফসল আবাদ সম্ভব হবে। এ বিষয়ে উপজেলা মাসিক সভায় প্রস্তাব রাখা হবে।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইমাম হোসেন জানান, তিনি রাবারড্যাম পরিদর্শন করে সংস্কারের জন্য  জেলা অফিসকে জানিয়েছন। হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) ফরিদুল ইসলাম বলেন, রাবারড্যাম মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।  দ্রুতই মেরামত করে রাবারড্যামটি সচল করা হবে। জানা গেছে, প্রকল্প নেওয়ার পর এ ব্যাপারে ৩৭৪ জন কৃষকের সমন্বয়ে একটি পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটির তৎকালীন সভাপতি মহিদ আহমদ চৌধুরী জানান, রাবারড্যাম হওয়ার পর সেচ খরচ কমায় কৃষক ধান ও শাকসবজি উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে এ কমিটির কার্যক্ষমতা নেই। ২০১১ সালে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রাবারড্যামটি নির্মাণের ২ বছর পর শুষ্ক মৌসুমে অন্তত ৫৫০ হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আসে। চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিন মিয়া জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ র ব রড য ম র আওত য় প রকল প কর ঙ গ র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়’ কাঠামো প্রত্যাখ্যান তিতুমীর শিক্ষার্থীদের

তিতুমীর কলেজকে ঢাকার সাতটি কলেজের সঙ্গে একীভূত করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের প্রশাসনিক কাঠামোর প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তিতুমীর কলেজকে কাঠামোর আওতায় আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। 

রোববার সন্ধ্যায় কলেজটির শিক্ষার্থীদের সংগঠন তিতুমীর ঐক্যের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। 

সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক মো. বেল্লাল হোসেনের সই করা ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যে নতুন কাঠামোর প্রস্তাব করা হয়েছে সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সভায় আমাদের কলেজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও চারজন প্রতিনিধির মধ্যে তিনজনই অকুণ্ঠচিত্তে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তারা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট ও সম্মতি ব্যতীত তারা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজি নয়। একইসঙ্গে এ ধরনে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত স্বার্থান্বেষী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের মিটিংকে প্রত্যাখ্যান করেন। 

তিনি আরও বলেন, অনুপস্থিত তিনজন শিক্ষার্থীর নাম যথাক্রমে আমিনুল ইসলাম, হাবিবুল্লাহ রনি, মো. মেহেদী হাসান। অন্যদিকে, একজন প্রতিনিধি রেজায়ে রাব্বি জায়েদ, সভায় উপস্থিত হয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সভাকক্ষ ত্যাগ করেন এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত দাবির পক্ষে অবিচল থাকার ঘোষণা দেন।  

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি, ঐতিহ্য, আত্মপরিচয় ও মর্যাদার প্রশ্নে আপসহীন। প্রাতিষ্ঠানিক স্বকীয়তা রক্ষায় তারা সবসময় প্রস্তুত। আমরা যেকোনো অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। 

এর আগে, গতকাল দুপুরে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নাম চূড়ান্ত করা হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ভবনে শিক্ষার্থীদের ৩২ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। 

সাতটি সরকারি কলেজ হচ্ছে— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ